বাংলাদেশের গার্মেন্টে নির্যাতনের শিকার শ্রমিক নেতারা
বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে পুরুষ এবং এমনকি নারী ইউনিয়ন নেতারা হামলা, নিগ্রহ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনলাইন নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এ ঘটনাগুলো ঘটেছে কারখানার ম্যানেজার বা ব্যবস্থাপকের অঙ্গুলি-নির্দেশেই। গত ১০ই নভেম্বরের ঘটনা। গ্লোবাল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির বাইরের গেটে এক নারী ইউনিয়ন নেতাকে ঘিরে ধরা হয়েছে। তাকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়। ওদিকে পুরুষ এক ইউনিয়ন নেতাকে ধাওয়া করা হচ্ছে এবং একের পর এক ঘুষি মারা হচ্ছে। আর এ ভিডিও ফুটেজগুলো ধারণ করা হয়েছে গার্মেন্টের ক্লোজড-সার্কিট ক্যামেরায়। অপর এক ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, এক নারী ইউনিয়ন নেতা পোশাক কারখানার মূল দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকেছেন এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তাকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের করে দেয়া হলো এবং ধাক্কা দিতে দিতে তাকে ক্যামেরার আওতার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তদন্তে এ ভিডিও দুটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি শ্রমিক অধিকার সংগঠন ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি নামকরা পোশাক প্রতিষ্ঠান। কারখানার ব্যবস্থাপকরাই এ হামলাগুলোর নির্দেশনায় রয়েছেন বলে প্রমাণিত হয়। একই প্রতিষ্ঠান আজিম গ্রুপের আওতাধীন অপর এক পোশাক কারখানায় শ্রমিক ইউনিয়নের এক নারী সভাপতির মাথায় লোহার রড দিয়ে মারার ৩ মাস পর এ হামলার ঘটনাগুলো ঘটেছে। গত ২৬শে আগস্ট ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মিরা বসাকের ওপর বর্বরোচিত ওই হামলা হয়। তার মাথায় লোহার রড দিয়ে মারা হয়। ২০টি সেলাই পড়েছিল মিরার মাথায়। আজিম গ্রুপের মোট পোশাক কারখানার সংখ্যা ২৪টি। সেখানে ২৭ হাজার পোশাক শ্রমিক কাজ করেন। আজিম গ্রুপের পক্ষ থেকে এসব ঘটনায় জড়িত থাকার দায় অস্বীকার করা হয়েছে। এদিকে এ হামলাগুলো এমন সময়ে ঘটলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ শ্রমিক অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও নির্বিঘেœ শ্রমিকরা যাতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, সে পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চাপ দিচ্ছে। শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার কিছুটা তাতে ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) প্রত্যাহার করে। কিন্তু, বাণিজ্য সুবিধা ফিরে পাওয়ার পথে হাঁটছে না বাংলাদেশ। এদিকে এ ঘটনার পর দুটি বড় পোশাক প্রতিষ্ঠান আজিম গ্রুপের সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিল করেছে। ইউনিয়ন নেতাদের ওপর হামলা আচরণবিধির গুরুতর লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়। আজিম গ্রুপ তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। ১০ই নভেম্বরের ঘটনা অহিংস ছিল বলে উল্লেখ করে গ্রুপটি। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা বলেছেন, আজিম গ্রুপের প্রধানও তার দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। অনেকবার উঠে এসেছে বিষয়টি। অপরাধী যেই হোক, তার শাস্তি হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন মোজেনা। এদিকে এ ধরনের ঘটনায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে গুরুতর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা। নামকরা বিভিন্ন বিদেশী পোশাক প্রতিষ্ঠান সতর্কবাণী উচ্চারণ করছে বারংবার। কিন্তু, সেগুলো আমলে নেয়া হচ্ছে না। এর ক্ষতিকর এবং সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের পোশাক বাণিজ্যে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় পোশাকশিল্প খাত।
No comments