গোরখোদক তখন কাঁদছিলেন
পেশোয়ারের
সবচেয়ে বড় ‘রহমান বাবা’ কবরস্থান। সেখানকার গোরখোদক তাজ মুহাম্মদ। তার বয়স
৪৩ বছর। তিনি এ কবরস্থানে কবর খুঁড়ে চলেছেন বছরের পর বছর। এত কবর খুঁড়লেও
তার চোখে কোনদিন অশ্রু দেখা যায় নি। কিন্তু এবার তিনি কেঁদেছেন। কবরস্থানে
যখন পেশোয়ার হামলায় নিহত শিশুদের লাশ নেয়া হয় তখন সেদিকে তাকিয়ে হু হু করে
কেঁদে ওঠেন তাজ মুহাম্মদ। তিনি এত নিষ্পাপ শিশুর মুখ এর আগে কখনও এভাবে
দেখেন নি। তিনি বললেন, বিভিন্ন বয়স, বিভিন্ন আকৃতির, বিভিন্ন ওজনের লাশ আমি
দাফন করেছি। কিন্তু এর আগে আমি এতগুলো ছোট্ট শিশুর লাশ কখনও দাফন করি নি।
তাদের যে বয়স, লাশের যে ওজন তার চেয়ে বেশি ওজন মনে হয়েছে তাদের। এসব লাশ
হাতে নিয়ে আমি ঠিক থাকতে পারি নি। আমার বুক কেঁপে উঠেছে। কবর খোঁড়ার ফাঁকে
ফাঁকে তিনি কথা বলছিলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। তাজ মুহাম্মদের কবর খোঁড়া ও
দাফনের জন্য একটি নিয়ম আছে। তার একটি রীতি আছে। সেটা হলো লাশ দাফন করার সময়
তিনি কাঁদেন না। তিনি বলেন, আমি দাফন করার ক্ষেত্রে পেশাদার। আমার কাজই
লাশ দাফন করা। কিন্তু পেশোয়ারে আর্মি পাবলিক স্কুলে তালেবান হামলায় নিহত
১৪৮ জনের লাশ যখন তার সামনে নেয়া হয়, তিনি দেখতে পান নিহতদের বেশির ভাগই
শিশু। তাদের মুখ দেখে, লাশের আকৃতি দেখে, তাদের বয়স আন্দাজ করে কেঁদে ওঠেন
তিনি। এর আগে ২০০৯ সালে মিনা বাজারে বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ১০৫
জন। একই বছর খাইবার বাজারে বোমা হামলায় নিহত হন ৫০ জন। সে সব লাশ তিনি
দাফন করেছেন স্বাভাবিক থেকে। কিন্তু এবার আর পারলেন না। পারলেন না নিজের
ভেতরের আবেগকে তামাতে। তাজ মুহাম্মদ বলেন, এবার আমি কান্না থামাতে পারি নি।
আমার মুখে কথা সরছিল না। আমি বুঝতে পারছিলাম না কি বলবো। আমার কেবলই মনে
হচ্ছে এ লাশ দাফন করা আমার পেশায় নেই। আমার এ পেশা ছেড়ে দিতে ইচ্ছা হচ্ছে।
একটি কবর খুঁড়তে তিনি ২০০০ থেকে ৫০০০ রুপি নিয়ে থাকেন। তবে গত ৬ বা সাত মাস
লাশের সংখ্যা কমে গেছে। তাই তার উপার্জনও কিছুটা কম। রয়েছ আর্থিক সঙ্কট।
কিন্তু গত সপ্তাহের মঙ্গলবারে পেশোয়ারে নিহতদের জন্য কবর খোঁড়ার জন্য তিনি
কারও কাছে কোন অর্থ দাবি করেন নি। তিনি বলেন, আমি যখন আমার নিজের সন্তানের
জন্য কবর খুঁড়ছি তখন কিভাবে আমি টাকা চাইবো বা অন্যের কাছ থেকে টাকা নেবো!
No comments