মহসীন আলী দেওয়ান
মহসীন আলী দেওয়ান বগুড়াসহ উত্তরবঙ্গে শিক্ষাব্রতী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। একাত্তরে তিনি বগুড়া জেলার শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষও ছিলেন তিনি। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বগুড়া দখল করলে তিনি তাঁর শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেন। দখল করার পর সেনাবাহিনী স্কুল-কলেজ খোলার নির্দেশ দেয়। তিনি কলেজে যাননি। কিছুদিন পর থেকে কলেজের উপাধ্যক্ষ তাঁকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন তাঁর কাছে অধ্যক্ষের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে। তিনি প্রথমে এই চাপ উপেক্ষা করেন। পরে ভয়ভীতি প্রদর্শন শুরু হলে তিনি ৩ জুন দুজন ছাত্র ও কোরআনের একজন হাফেজকে সঙ্গে নিয়ে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে যান। উপাধ্যক্ষ দায়িত্ব বুঝে নিয়ে তাঁকে ভাঁওতা দিয়ে বগুড়া শহরে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে সোপর্দ করেন। এর পর থেকে তিনি নিখোঁজ। কোথাও তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। মহসীন আলীর মেয়ে স্নিগ্ধা মহসীনা আহসানের লেখায় এ ঘটনার বিবরণ রয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘...কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল বাবাকে কলেজের দায়িত্ব তাঁর হাতে বুঝিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অনবরত লোক পাঠাতে লাগল। বাবা যদি না যান, তবে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে ভয় দেখাল। এভাবে চাপ সৃষ্টি করে জোর করে কলেজে নিয়ে গেল। আমার নানার গ্রাম থেকে তাঁর কলেজের দুজন ছাত্র ও একজন হাফেজ (কোরআন) সাহেবকে নিয়ে কলেজে গিয়েছিলেন। চার্জ বুঝিয়ে দিয়ে যখন ফিরতে চেয়েছেন, তখন ভাইস প্রিন্সিপাল জোর করে বগুড়ায় বাবার প্রিয় বাড়ি দেখাবার লোভ দেখিয়ে এনে নরঘাতকদের হাতে তুলে দেয়। বাবার সঙ্গে সেই নির্দোষ হাফেজ সাহেবও নিখোঁজ হলেন।
‘বাবার কাছে প্রফেসর মযহারুল ইসলাম (যিনি পরে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হয়েছিলেন) চিঠিও পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। আমার জীবনে বাবা নামের অধ্যায়ের সেই শেষ।’ (স্মৃতি ১৯৭১, প্রথম খণ্ড, প্রথম প্রকাশ ১৯৮৮, সম্পাদনা রশীদ হায়দার)।
শেরপুর কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হলেও মহসীন আলী দেওয়ান একসময় নওগাঁ কলেজ ও বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। আজিজুল হক কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি। সাপ্তাহিক বগুড়া বুলেটিন ও সান্ধ্য দৈনিক জনমত-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। বগুড়া প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বগুড়া প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন।
সাহিত্যিক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এ জন্য ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। গল্পের চিড়িয়াখানা নামে তাঁর একটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর রচনা স্কুল-কলেজের পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন।
গ্রামের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে মহসীন আলী দেওয়ানের ছিল ব্যাপক উৎসাহ ও প্রচেষ্টা। যেসব ছাত্রের বাড়ি দূরবর্তী গ্রামে ছিল, পরীক্ষার সময় তিনি তাদের অনেককে তাঁর বাড়িতে থেকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
মহসীন আলী দেওয়ানের জন্ম জয়পুরহাটের ভুটিয়াপাড়া গ্রামে, ১৯২৯ সালের ১ জানুয়ারি। বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। আজিজুল হক কলেজে তিনি ছিলেন ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক।
তিন সন্তানের জনক মহসীন আলী। একসময়ের সিনে সাংবাদিক ফারুখ ফয়সল তাঁর ছেলে।
স্কেচ: শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারক ডাকটিকিট (তৃতীয় পর্যায়) প্রকাশ উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা (১৯৯৪)।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
‘বাবার কাছে প্রফেসর মযহারুল ইসলাম (যিনি পরে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হয়েছিলেন) চিঠিও পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। আমার জীবনে বাবা নামের অধ্যায়ের সেই শেষ।’ (স্মৃতি ১৯৭১, প্রথম খণ্ড, প্রথম প্রকাশ ১৯৮৮, সম্পাদনা রশীদ হায়দার)।
শেরপুর কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হলেও মহসীন আলী দেওয়ান একসময় নওগাঁ কলেজ ও বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। আজিজুল হক কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি। সাপ্তাহিক বগুড়া বুলেটিন ও সান্ধ্য দৈনিক জনমত-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। বগুড়া প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বগুড়া প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন।
সাহিত্যিক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এ জন্য ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। গল্পের চিড়িয়াখানা নামে তাঁর একটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর রচনা স্কুল-কলেজের পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন।
গ্রামের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে মহসীন আলী দেওয়ানের ছিল ব্যাপক উৎসাহ ও প্রচেষ্টা। যেসব ছাত্রের বাড়ি দূরবর্তী গ্রামে ছিল, পরীক্ষার সময় তিনি তাদের অনেককে তাঁর বাড়িতে থেকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
মহসীন আলী দেওয়ানের জন্ম জয়পুরহাটের ভুটিয়াপাড়া গ্রামে, ১৯২৯ সালের ১ জানুয়ারি। বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। আজিজুল হক কলেজে তিনি ছিলেন ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক।
তিন সন্তানের জনক মহসীন আলী। একসময়ের সিনে সাংবাদিক ফারুখ ফয়সল তাঁর ছেলে।
স্কেচ: শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারক ডাকটিকিট (তৃতীয় পর্যায়) প্রকাশ উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা (১৯৯৪)।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
No comments