অপরাধী কোন দলের জানতে চাই না -প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, স্থানীয় প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। কারণ
সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায়। গতকাল
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে লালমনিরহাট
ও বরগুনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি এবং রংপুর ও বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের
সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। স্থানীয় প্রশাসনের
কর্মকর্তা ছাড়াও পুলিশ, জনপ্রতিনিধি এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ভিডিও
কনফারেন্সের সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কে অপরাধী, সেটি আগে
দেখতে হবে। সেই অপরাধী কোন দলের, সেটি দেখার দরকার নেই। অপরাধ করলে ধরতে
হবে। যে অপরাধী তাকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। কারও মুখ চেয়ে নয়। আমি এটা
জানতেও চাই না। আমরা চাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং শান্তিপূর্ণ
পরিবেশ। এ কারণে অন্যায় যে করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। এরপর তার পরিচয়
খোঁজেন। গত মাসে রংপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতা খুন হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেভাবেই হোক উন্নয়ন করতে হবে।
যারাই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক চোরাচালানে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর
ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষ স্বস্তিতে জীবনযাপন করবে- এটাই আমরা চাই। তিনি
বলেন, যে অপরাধী সে কোন দলের তা না দেখে তাকে ধরতে হবে। জানিয়ে দেবেন এটা
আমার নির্দেশ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে
কোনভাবেই সহ্য করবে না। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে উত্তরাঞ্চলে কৃষির
ওপর জোর দিয়ে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকাগুলোর দিকে বিশেষ নজর দেয়ার নির্দেশ
দেন। পাশাপাশি গভীর সাগরে বিশাল জলরাশিতে মৎস্য সম্পদ আহরণে প্রস্তুতি
নেয়ার পরামর্শ দেন। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের
বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, রংপুরের গঙ্গাচড়া দুর্গত এলাকা। ওই
এলাকাটি দেখা দরকার। বিশেষ করে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকা। এসব
দারিদ্র্যপীড়িত পকেটে নজর দিতে হবে বেশি। এক সময় এই এলাকা মঙ্গাপীড়িত এলাকা
থাকলেও আমরা ক্ষমতায় এলে আর মঙ্গা থাকে না একথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী
বলেন, প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ হলে আগামীতে আরও বরাদ্দ পাবেন। নবগঠিত রংপুর
বিভাগের জন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরির নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,
পরিকল্পিতভাবে বিভাগকে গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শীতবস্ত্র বিতরণের
ক্ষেত্রে বয়স্ক ব্যক্তি (৬০ বছর) ও প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য
স্থানীয় প্রশাসনকে পরামর্শ দেন। বরগুনার জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয়
জনপ্রতিনিধি জেলার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করলে শেখ হাসিনা
বলেন, বরগুনার উন্নয়নে যা যা করার করবো। ক্যান্টনমেন্ট, পাওয়ার প্ল্যান্ট,
ইন্ডাস্ট্রি হবে। আইনি লড়াইয়ে পাওয়া গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণে প্রস্তুতির
উপর জোর দেয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক
দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে উপকূলে সবুজ বেষ্টনী তৈরির পরামর্শ দেন। এদিকে
সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে বসে এই ভিডিও
কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে
সরাসরি কথা বলে স্থানীয় পর্যায়ের সমস্যাগুলো জানতে এবং তাৎক্ষণিক নির্দেশনা
দিতে গত নভেম্বর থেকে মাসে দু’বার এভাবে ভিডিও কনফারেন্স করছেন
প্রধানমন্ত্রী। গত ২৪শে নভেম্বর মৌলভীবাজার জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির
সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের পর তিনি বলেন, আজ শুরু করলাম, এরপর অন্যান্য বিষয়
নিয়ে সবাই সব সময় তৈরি থাকবেন। আপনারা কে কি কাজ করছেন, সমস্ত ডাটা নিয়ে
রেডি থাকবেন। যে কোন সময় বসবো, কথা বলবো এবং জিজ্ঞেস করবো- কার কার এলাকায়
কি কি কাজ হচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্স চলাকালে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা
সাদেক, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা,
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব আবদুস সোবহান সিকদার, জনপ্রশাসন
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীসহ কর্মকর্তাবৃন্দ
উপস্থিত ছিলেন।
No comments