দুদক হারছে ৫৩ ভাগ মামলায়
নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট না থাকায় বিচারিক
আদালতে ৫৩ শতাংশ মামলায় হেরে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আপিল
বিভাগে এই হারের পরিমাণ প্রায় শতভাগ। একের পর এক মামলায় হেরে গেলেও কমিশনের
কাছে প্যানেল আইনজীবীদের কার্যকর কোনো জবাবদিহিতা নেই। ফি নির্ভর আইনজীবী
দিয়ে চলছে দুদকের মামলা সংক্রান্ত সব কাজ। বিশ্লেষকদের মতে, নিজস্ব
প্রসিকিউশন ইউনিট ছাড়া কখনোই আইনি লড়াইয়ে কাক্সিক্ষত ফল আসবে না। জানা
গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪র ৩৩ ধারায় দুদকের নিজস্ব প্রসিকিউশন
ইউনিটের কথা বলা হয়েছে। আইনটির (১) উপধারায় বলা হয়েছে, “এই আইনের অধীন
কমিশন কর্তৃক তদন্তকৃত এবং স্পেশাল জজ কর্তৃক বিচারযোগ্য মামলাসমূহ
পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক প্রসিকিউটরের সমন্বয়ে কমিশনের অধীন উহার
নিজস্ব একটি স্থায়ী প্রসিকিউশন ইউনিট থাকিবে”। প্রতিষ্ঠার এক দশকেও দুদক
আইনের এ ধারাটি কার্যকর করা হয়নি। দুদক আইনের সংশোধনীতে বেশকিছু ধারা বাদ
দেয়া হলেও বাতিল করা হয়নি ৩৩ ধারা। যখনই নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট
প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ উঠেছে, তখনই টেকনিক্যাল অসুবিধার কথা বলে কমিশন উদ্যোগ
গ্রহণ থেকে নিবৃত থেকেছে। একদিকে ধারা বহাল রাখা এবং অন্যদিকে ধারাটি
কার্যকর না করাকে দুদকের দ্বিমুখী নীতির বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন
বিশ্লেষকরা।
নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, দুদক আইনের ৩৩ ধারাটি মেন্ডেটরি নয়- ঐচ্ছিক। নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট থাকলে ভালো হতো। রেজাল্ট ভালো পাওয়া যেত সন্দেহ নেই। কিন্তু এর সঙ্গে আর্থিক বিষয় জড়িত। নানা জটিলতাও আছে। এ কারণে এ মুহূর্তে এটি নিয়ে ভাবা হচ্ছে না।
দুদক সূত্র জানায়, নভেম্বরের হিসেব অনুযায়ী ১০ বছরে দুদক ৩ হাজার ৬৬২টি মামলা দায়ের করেছে। বিচারের জন্য আদালতে উঠেছে ২ হাজার ৭১২টি মামলা। এক হাজার ৪৩১টি মামলার রায় গেছে দুদকের বিপক্ষে। বাকি ৯৫০টি মামলার মধ্যে অধিকাংশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। আর সামান্য কিছু মামলার তদন্ত চলছে। বিভিন্ন আদালতে দুদকের পক্ষে আইনি লড়াই করছেন ৩১৬ জন আইনজীবী। এর মধ্যে ঢাকার বিশেষ আদালতে ১৩ জন, সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে ৩৯ জন এবং অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হিসেবে রয়েছেন ৭ জন। দুদকের সঙ্গে তারা মামলাভিত্তিক (কেস টু কেস) চুক্তিতে কাজ করেছেন। সূত্র জানায়, চলতি বছর নভেম্বরে দুদক দাবি করেছে তাদের ৪৭ শতাংশ মামলায় আসামির সাজা হচ্ছে। বাকি ৫৩ শতাংশ মামলায় আসামিদের কোনো সাজা হচ্ছে না। এসব মামলায় দুদক হেরে যাওয়ায় আসামিরা পার পেয়ে যাচ্ছে। দুদক বিচারিক আদালতের এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করলেও হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগে কত শতাংশ শাস্তি বহাল থাকছে- সেই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে না। তবে গত এক দশকে আবুধাবির রাষ্ট্রদূত নাজিম উল্লাহ চৌধুরী (তিনি রিভিউ দায়ের করেছেন) ও বনখেকো ওসমান গনি (তিনি আপিল করেননি) ছাড়া কারো শাস্তি বহাল আছে বলে জানা যায় না। ফলে আপিল বিভাগে দুদকের পক্ষে দণ্ড বহাল থাকার হার প্রায় শূন্য। বিচারিক আদালত থেকে উচ্চতর আদালত পর্যন্ত আইনি লড়াইয়ের ধারাবাহিক ব্যর্থতার কোনো কারণ কমিশনকে লিখিতভাবে কখনো ব্যাখ্যা করতে হয়নি আইনজীবীদের।
সূত্র মতে, ২০১১-২০১২ অর্থবছরে প্যানেল আইনজীবীদের ফি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৩ টাকা। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫হাজার ৩৯০ টাকা। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে আইনজীবীদের দেয়া হয় ৪ কোটি ৬২ লাখ ৯৭ হাজার ৭২১ টাকা । বছরে গড়ে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। যা দুদকের বার্ষিক বাজেটের প্রায় অর্ধেক। সূত্র মতে, অর্থ পাচার মামলায় পলাতক তারেক রহমান খালাস পেয়েছেন। হলমার্ক মামলায় জামিন পেয়েছেন আসামি জেসমিন ইসলাম। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন মামলায় সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান জামিন পান। ডিএন স্পোর্টসের মালিক পলাতক মোতাহারউদ্দীন চৌধুরী ও ফাহমিদা আক্তার শিখার জামিনসহ উল্লিখিত আলোচিত মামলাগুলোয় জামিন হওয়ার পেছনে দুদক প্যানেলের অসাধু আইনজীবীদের হাত আছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
৫ নভেম্বর বিশেষ আদালত-৬ এ হলমার্ক মামলার দুই পলাতক আসামি জামিন লাভে সহায়তার অভিযোগ ওঠে দুদকের এক প্যানেল আইনজীবীর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশিত হলে ওই আইনজীবী দুদকে পদত্যাগপত্র পাঠান। কিন্তু আইনজীবীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু দুদকের এক মহাপরিচালকের অনুরোধে কমিশন ওই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি। বন্ধুর কল্যাণে এখনও তিনি দুদকের প্যানেল আইনজীবী।
সূত্র জানায়, গত এক দশকে দুদক রাজনৈতিক আনুগত্য, ব্যক্তি সম্পর্ক, তদবির ও অনুরোধের ভিত্তিতে বেশকিছু আইনজীবী নিয়োগ পেয়েছেন। কয়েকজন পেশাদার, যোগ্য ও প্রতিশ্র“তিশীল আইনজীবী ছাড়া দুদকের অধিকাংশ আইনজীবীর সততা, যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ ধরনের আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের সুবিধা অনুযায়ী শুনানিতে বারবার তারিখ চাওয়া, আদালতে দুদকের সাক্ষীকে অনুপস্থিত দেখানো, জামিনে জোরালো বিরোধিতা না করা, রেকর্ডপত্র উপস্থাপনে ব্যর্থতার মতো অভিযোগ আসছে। এদের কারণেই মূলত দুদক মামলায় হেরে যাচ্ছে। পার পেয়ে যাচ্ছে আসামিরা।
সূত্র মতে, নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট গঠনে সবগুলো কমিশনই টেকনিক্যাল সমস্যার কথা বলে অনীহা দেখিয়ে আসছে। নিজস্ব ইউনিট গঠন না করার পক্ষে কিছু যুক্তিও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, দুদকের প্রসিকিউশন ইউনিটে ভালো কোনো আইনজীবীকে নিয়োগ দেয়া সম্ভব নয়। তারা দুদকের নির্ধারিত বেতন কাঠামোয় চাকরি করবেন না। চাকরিজীবী হওয়ায় তারা আদালতে আইনজীবী হিসেবে অন্য মামলাও পরিচালনা করতে পারবেন না। ফলে এখানে পেশাদার আইনজীবীদের পাওয়া সম্ভব নয়।
তবে এ যুক্তিকে খোঁড়া বলে আখ্যায়িত করেছেন দুদকের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এ সমস্যার সমাধান রয়েছে আইনের ৩৩ (২) উপধারায়। সেখানে প্রসিকিউটরদের নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলী বিধি দ্বারা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। গত ১০ বছরে দুদক একটি বিধিও প্রণনয়ন করেনি। আইন ও বিধির আওতায় কর্মকর্তা নিয়োগ দিলে এক দশকে তাদের বিশেষায়িত কর্মকর্তা হিসেবে প্রশিক্ষিত করতে পারত। গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ক্ষমতা দিলে দুদকের সহকারী পরিচালক কিংবা উপপরিচালকের মর্যাদায় দুদকের আইন কর্মকর্তা সরাসরি মামলা পরিচালনা করতে পারেন। বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরো এভাবে কিছু মামলা পরিচালনা করত। নাম প্রকাশ না করে দুদকের একজন পরিচালক বলেন, এ ধরনের আরও বহু উপায় বেরিয়ে আসতে পারে দুদকের নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট গঠনের আন্তরিকতা থেকে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, দুদক আইনের ৩৩ ধারা বাস্তবায়নে এক ধরনের এডহকইজম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতির অনুসন্ধান, তদন্তের পর মামলা দায়ের এবং আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজের শাস্তি নিশ্চিত করা দুদকের প্রধান কাজ। সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও তদন্তের সুফল আসে আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। অথচ যেখান থেকে ফলাফল আসবে সেটিই দুর্বল করে রাখা হয়েছে। এ অবস্থার স্থায়ী সমাধান দরকার। নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট না থাকলে আইনি লড়াইয়ে দুদকের কাক্সিক্ষত ফল কখনোই আসবে না।
নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, দুদক আইনের ৩৩ ধারাটি মেন্ডেটরি নয়- ঐচ্ছিক। নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট থাকলে ভালো হতো। রেজাল্ট ভালো পাওয়া যেত সন্দেহ নেই। কিন্তু এর সঙ্গে আর্থিক বিষয় জড়িত। নানা জটিলতাও আছে। এ কারণে এ মুহূর্তে এটি নিয়ে ভাবা হচ্ছে না।
দুদক সূত্র জানায়, নভেম্বরের হিসেব অনুযায়ী ১০ বছরে দুদক ৩ হাজার ৬৬২টি মামলা দায়ের করেছে। বিচারের জন্য আদালতে উঠেছে ২ হাজার ৭১২টি মামলা। এক হাজার ৪৩১টি মামলার রায় গেছে দুদকের বিপক্ষে। বাকি ৯৫০টি মামলার মধ্যে অধিকাংশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। আর সামান্য কিছু মামলার তদন্ত চলছে। বিভিন্ন আদালতে দুদকের পক্ষে আইনি লড়াই করছেন ৩১৬ জন আইনজীবী। এর মধ্যে ঢাকার বিশেষ আদালতে ১৩ জন, সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে ৩৯ জন এবং অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হিসেবে রয়েছেন ৭ জন। দুদকের সঙ্গে তারা মামলাভিত্তিক (কেস টু কেস) চুক্তিতে কাজ করেছেন। সূত্র জানায়, চলতি বছর নভেম্বরে দুদক দাবি করেছে তাদের ৪৭ শতাংশ মামলায় আসামির সাজা হচ্ছে। বাকি ৫৩ শতাংশ মামলায় আসামিদের কোনো সাজা হচ্ছে না। এসব মামলায় দুদক হেরে যাওয়ায় আসামিরা পার পেয়ে যাচ্ছে। দুদক বিচারিক আদালতের এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করলেও হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগে কত শতাংশ শাস্তি বহাল থাকছে- সেই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে না। তবে গত এক দশকে আবুধাবির রাষ্ট্রদূত নাজিম উল্লাহ চৌধুরী (তিনি রিভিউ দায়ের করেছেন) ও বনখেকো ওসমান গনি (তিনি আপিল করেননি) ছাড়া কারো শাস্তি বহাল আছে বলে জানা যায় না। ফলে আপিল বিভাগে দুদকের পক্ষে দণ্ড বহাল থাকার হার প্রায় শূন্য। বিচারিক আদালত থেকে উচ্চতর আদালত পর্যন্ত আইনি লড়াইয়ের ধারাবাহিক ব্যর্থতার কোনো কারণ কমিশনকে লিখিতভাবে কখনো ব্যাখ্যা করতে হয়নি আইনজীবীদের।
সূত্র মতে, ২০১১-২০১২ অর্থবছরে প্যানেল আইনজীবীদের ফি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৩ টাকা। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫হাজার ৩৯০ টাকা। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে আইনজীবীদের দেয়া হয় ৪ কোটি ৬২ লাখ ৯৭ হাজার ৭২১ টাকা । বছরে গড়ে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। যা দুদকের বার্ষিক বাজেটের প্রায় অর্ধেক। সূত্র মতে, অর্থ পাচার মামলায় পলাতক তারেক রহমান খালাস পেয়েছেন। হলমার্ক মামলায় জামিন পেয়েছেন আসামি জেসমিন ইসলাম। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন মামলায় সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান জামিন পান। ডিএন স্পোর্টসের মালিক পলাতক মোতাহারউদ্দীন চৌধুরী ও ফাহমিদা আক্তার শিখার জামিনসহ উল্লিখিত আলোচিত মামলাগুলোয় জামিন হওয়ার পেছনে দুদক প্যানেলের অসাধু আইনজীবীদের হাত আছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
৫ নভেম্বর বিশেষ আদালত-৬ এ হলমার্ক মামলার দুই পলাতক আসামি জামিন লাভে সহায়তার অভিযোগ ওঠে দুদকের এক প্যানেল আইনজীবীর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশিত হলে ওই আইনজীবী দুদকে পদত্যাগপত্র পাঠান। কিন্তু আইনজীবীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু দুদকের এক মহাপরিচালকের অনুরোধে কমিশন ওই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি। বন্ধুর কল্যাণে এখনও তিনি দুদকের প্যানেল আইনজীবী।
সূত্র জানায়, গত এক দশকে দুদক রাজনৈতিক আনুগত্য, ব্যক্তি সম্পর্ক, তদবির ও অনুরোধের ভিত্তিতে বেশকিছু আইনজীবী নিয়োগ পেয়েছেন। কয়েকজন পেশাদার, যোগ্য ও প্রতিশ্র“তিশীল আইনজীবী ছাড়া দুদকের অধিকাংশ আইনজীবীর সততা, যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ ধরনের আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের সুবিধা অনুযায়ী শুনানিতে বারবার তারিখ চাওয়া, আদালতে দুদকের সাক্ষীকে অনুপস্থিত দেখানো, জামিনে জোরালো বিরোধিতা না করা, রেকর্ডপত্র উপস্থাপনে ব্যর্থতার মতো অভিযোগ আসছে। এদের কারণেই মূলত দুদক মামলায় হেরে যাচ্ছে। পার পেয়ে যাচ্ছে আসামিরা।
সূত্র মতে, নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট গঠনে সবগুলো কমিশনই টেকনিক্যাল সমস্যার কথা বলে অনীহা দেখিয়ে আসছে। নিজস্ব ইউনিট গঠন না করার পক্ষে কিছু যুক্তিও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, দুদকের প্রসিকিউশন ইউনিটে ভালো কোনো আইনজীবীকে নিয়োগ দেয়া সম্ভব নয়। তারা দুদকের নির্ধারিত বেতন কাঠামোয় চাকরি করবেন না। চাকরিজীবী হওয়ায় তারা আদালতে আইনজীবী হিসেবে অন্য মামলাও পরিচালনা করতে পারবেন না। ফলে এখানে পেশাদার আইনজীবীদের পাওয়া সম্ভব নয়।
তবে এ যুক্তিকে খোঁড়া বলে আখ্যায়িত করেছেন দুদকের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এ সমস্যার সমাধান রয়েছে আইনের ৩৩ (২) উপধারায়। সেখানে প্রসিকিউটরদের নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলী বিধি দ্বারা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। গত ১০ বছরে দুদক একটি বিধিও প্রণনয়ন করেনি। আইন ও বিধির আওতায় কর্মকর্তা নিয়োগ দিলে এক দশকে তাদের বিশেষায়িত কর্মকর্তা হিসেবে প্রশিক্ষিত করতে পারত। গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ক্ষমতা দিলে দুদকের সহকারী পরিচালক কিংবা উপপরিচালকের মর্যাদায় দুদকের আইন কর্মকর্তা সরাসরি মামলা পরিচালনা করতে পারেন। বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরো এভাবে কিছু মামলা পরিচালনা করত। নাম প্রকাশ না করে দুদকের একজন পরিচালক বলেন, এ ধরনের আরও বহু উপায় বেরিয়ে আসতে পারে দুদকের নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট গঠনের আন্তরিকতা থেকে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, দুদক আইনের ৩৩ ধারা বাস্তবায়নে এক ধরনের এডহকইজম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতির অনুসন্ধান, তদন্তের পর মামলা দায়ের এবং আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজের শাস্তি নিশ্চিত করা দুদকের প্রধান কাজ। সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও তদন্তের সুফল আসে আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। অথচ যেখান থেকে ফলাফল আসবে সেটিই দুর্বল করে রাখা হয়েছে। এ অবস্থার স্থায়ী সমাধান দরকার। নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট না থাকলে আইনি লড়াইয়ে দুদকের কাক্সিক্ষত ফল কখনোই আসবে না।
No comments