তাবলীগেও বিভক্তি
অবশেষে তাবলীগ জামাতেও ঢুকে পড়েছে রাজনীতি। ছড়িয়ে পড়েছে আর্থিক দুর্নীতি আর অনিয়ম। চলছে ক্ষমতা দখলের লড়াই। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার নানা কৌশল। ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে এর ভাবমর্যাদা। এতে ভাঙনের মুখে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় সংগঠনটি। বিষয়টি স্বীকার করে তাবলীগ জামাতের আমীর সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী গ্রুপ পরিকল্পিতভাবে এই অরাজনৈতিক সংগঠনের গায়ে কালিমা লেপন করেছে। তারা এটাকে কলঙ্কিত করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজনীতি বিবর্জিত তাবলীগ জামাতে ঢুকে গেছে কূটতৎপরতা। দীর্ঘ দিন ধরে মতানৈক্যের কারণে এর বিভক্তি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাবলীগের নাম ভাঙিয়ে আর্থিক সুবিধা নেয়া, নানা অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহারকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে এই দ্বন্দ্ব ও সংঘাত।
ভারতের বাসিন্দা মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস (মরহুম) এদেশে তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংগঠনে আনুষ্ঠানিকভাবে আর্থিক লেনদেন করার নিয়ম নেই। বছরখানেক আগে থেকে তাবলীগ উন্নয়ন ও রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার সময় দায়িত্বশীলদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সরকারের অনুদান নেয়া শুরু হয়।
অভিযোগ রয়েছে, তখন থেকেই সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম তাবলীগ জামাতের কথা বলে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা রাখতে থাকেন। তাবলীগের সঙ্গে দীর্ঘ দিন সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ওয়াসিফুল রাজনীতিতেও যুক্ত, এছাড়া তাবলীগের মূলনীতি থেকেও তিনি বিচ্যুত। এর ফলে তাবলীগ জামাতে বড় ধরনের বিভক্তি দেখা দেয়। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা বিভক্তি ক্ষোভের ফলে ইতিমধ্যে একাধিক স্থানে তাবলীগে বিবাদমান দু’পক্ষের মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। যারা এসব বিষয়ে কথা বলছেন তাদের জঙ্গি আখ্যা দেয়া হচ্ছে। তাবলীগ জামাতের দায়িত্বশীলদের আর্থিক অনিয়মের তদন্ত করা, কাকরাইল মসজিদের আর্থিক লেনদেনে সরকারের নিয়ন্ত্রণসহ বেশ কিছু প্রস্তাব জানিয়ে জাতীয় সংসদে বিল পাসের জন্য ডেপুটি স্পিকারের কাছে এপ্রিল মাসে আবেদন করেছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি হাসান হাবিব তালুকদার। প্রতিকার না পাওয়ায় এবার শুরু হয়েছে প্রকাশ্য সংঘাত।
সূত্র জানায়, তাবলীগ জামাতের সক্রিয় দু’টি গ্রুপের একটির নেতৃত্বে আছেন সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম। অন্য গ্রুপে অধ্যাপক মুশফিকুর রহমান। উভয়পক্ষই একে অপরকে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের দোসর বলে দাবি করেছেন। আবার দুই পক্ষই বাংলাদেশে তাবলীগের একমাত্র জিম্মাদারও বলেও দাবি করেন। ওয়াসিফুল গ্রুপের দাবি, তাবলীগ একটি অরাজনৈতিক দ্বীনি সংগঠন। ঈমান ও আমল উন্নতির সহায়ক। কিন্তু, কিছু দুষ্কৃতকারী প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। মুশফিক পক্ষের দাবি, ওয়াসিফুল তাবলীগ জামাতের টাকার বড় দুর্নীতি করেছেন। কুক্ষিগত করতে চাইছেন এর বিশাল সমর্থক গোষ্ঠীকে। এটি হতে দেয়া যায় না। দুই গ্রুপের রেষারেষিতে বৃহস্পতিবার রাতে কাকরাইল মসজিদের ভেতর অধ্যাপক মুশফিকুর রহমানের অনুসারীরা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আধিপত্য বিস্তার, অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ সংবলিত দুই পাতার একটি লিফলেট বিতরণ করছিলেন। এসময় ওয়াসিফুলের লোকজন এতে বাধা দেয়।
এ সময় দুইপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরে ওয়াসিফুলের লোকজন অধ্যাপক মুশফিকুরের ২৪ কর্মীকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ জানায়, আটককৃতদের ৫৪ ধারায় আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। সরজমিন কাকরাইল মসজিদে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের ডান পাশে একটি নতুন ভবনের উন্নয়নের কাজ চলছে। এই কমপ্লেক্স নির্মাণের ব্যয় নিয়ে শুরু হয় সন্দেহ, অবিশ্বাস, যা নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ এখন তুঙ্গে।
তাবলীগের মধ্যে এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা চিল্লাধারী মুরুব্বিরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা এ ঘটনার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তাবলীগ জামায়াতের মজলিসে শূরা সদস্য আব্দুল লতিফ জানান, তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় মুরুব্বি মাওলানা ইলিয়াস আলী, মাওলানা জোবায়ের আহমেদসহ মুরুব্বিরা মতামত দিয়েছেন যে, তাবলীগের কোন কর্মী নামাজ শেষে মসজিদের বাইরে কোন বই অথবা লিফলেট বিলি করতে পারবে না। এতে তাবলীগের কাজে বিঘ্ন ঘটবে এবং মেহনত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন যদি তাবলীগের কর্মীরা নামাজ শেষে বই ও লিফলেট বিলি করেন এবং তাতে যদি লেখা থাকে ‘চলো চলো বাংলাদেশ সচিবালয় ঘেরাও করো’ তাহলে এটি কেমন হলো? এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছেন তাবলীগের নাম ভাঙিয়ে আধিপত্য বিস্তারকারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও জামায়াতপন্থি মুশফিকুর রহমান। তাবলীগকে তিনি জামায়াতে রূপান্তরিত করার ষড়যন্ত্র করছেন। একে কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
মসজিদের গেটে দায়িত্বপালনকারী নিরাপত্তারক্ষী সাইফুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ তিন বছর ধরে তাদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব চলে আসছে। মুশফিকুর ও তার লোকজন কোরআনে ও হাদিসের ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। এতে বিভেদ বাড়বে এবং তাবলীগ জামাতে চিল্লা দেয়ার মতো লোকজন পাওয়া যাবে না।
তবে অধ্যাপক মুশফিকুরের অনুসারীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তার কর্মী জাবেদ হোসেন অভিযোগ করে জানান, অনেকটা বাধ্য হয়ে আমরা ওয়াসিফুলের বিরুদ্ধে লিফলেট বিতরণ করেছি। ২০০৩ সালে দিল্লিতে বাংলাদেশের তাবলীগের ১৪ মজলিসে শূরা সদস্য নির্বাচিত হন। তাদের একজন ওয়াসিফুল। এরপর থেকেই তিনি শুরু করেন হাদিয়া বাণিজ্য। তিনি বলেন, কাকরাইল মারকাজ মসজিদের উন্নয়ন, বিদেশী মেহমানদের খেদমত ও ইজতেমার কথা বলে দেশে ও বিদেশে তাবলীগ জামাতের ধনী মুরুব্বিদের কাছ থেকে তিনি কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলেছেন। এই কাজে তার স্ত্রী মিনু ইসলামও নিয়োজিত। এত বিপুল অংকের টাকার হিসাব তিনি কাউকে দেননি।
জাবেদ আরও জানান, ২০১২ সালে কাকরাইলের মারকাজ মসজিদের ডান দিকে একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ভবনটি এখন নির্মাণ চলছে। ওই ভবনের নির্মাণের জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়েছে। অথচ তিনি এখন সবাইকে হিসাব দেখাচ্ছেন ৬ কোটি টাকা চাঁদা উঠেছে। এত বড় জালিয়াতি কখনও মেনে নেয়া যায় না। ওয়াসিফকে তিনি আওয়ামী লীগের চর বলে আখ্যায়িত করেন। মুশফিকুরের অনুসারীর তাবলীগের কর্মী তাওহিদুল ইসলাম জানান, ওয়াসিফুলের দুর্নীতির বিষয়টি ফাঁস করে দেয়ার জন্য হারুন নামে এক তাবলীগ কর্মীকে তিনি জঙ্গি বলে আখ্যায়িত করে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছেন। ২০১৩ সালের ২৪শে ডিসেম্বর টঙ্গীর ইজতেমার ময়দানে তার দুর্নীতির লিফলেট বিতরণের জন্য তিনজন তাবলীগ কর্মীকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। তার অপকর্মের প্রতিবাদে ১৯শে জানুয়ারি প্রেস ক্লাবে এবং রাজশাহীতে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এরপর তিনি তার সব অপকর্ম বন্ধ করবেন বলে আমরা মনে করছিলাম। কিন্তু, তিনি আগের চেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করে ইসলামী পণ্ডিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাবলীগের আকিদা ও ঐক্য রক্ষা করতে হলে এই ওয়াসিফুলের হাত থেকে তাবলীগ জামাতকে মুক্ত করতে হবে। কাকরাইল মসজিদে বরিশালের বাবুগঞ্জ থেকে আসা চিল্লাধারী আজিজুল ইসলাম জানান, তাবলীগ তো আল্লাহ ও নবীওয়ালাদের কাজ। এখানে কেন বিভেদ থাকবে? বিষয়টি যেন আর মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে এ জন্য সতর্ক হতে হবে। নইলে এটি কারও জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। এ ঘটনার জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই জানান, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। কাকরাইল মসজিদে যেন আর অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এ জন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
ভারতের বাসিন্দা মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস (মরহুম) এদেশে তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংগঠনে আনুষ্ঠানিকভাবে আর্থিক লেনদেন করার নিয়ম নেই। বছরখানেক আগে থেকে তাবলীগ উন্নয়ন ও রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার সময় দায়িত্বশীলদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সরকারের অনুদান নেয়া শুরু হয়।
অভিযোগ রয়েছে, তখন থেকেই সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম তাবলীগ জামাতের কথা বলে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা রাখতে থাকেন। তাবলীগের সঙ্গে দীর্ঘ দিন সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ওয়াসিফুল রাজনীতিতেও যুক্ত, এছাড়া তাবলীগের মূলনীতি থেকেও তিনি বিচ্যুত। এর ফলে তাবলীগ জামাতে বড় ধরনের বিভক্তি দেখা দেয়। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা বিভক্তি ক্ষোভের ফলে ইতিমধ্যে একাধিক স্থানে তাবলীগে বিবাদমান দু’পক্ষের মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। যারা এসব বিষয়ে কথা বলছেন তাদের জঙ্গি আখ্যা দেয়া হচ্ছে। তাবলীগ জামাতের দায়িত্বশীলদের আর্থিক অনিয়মের তদন্ত করা, কাকরাইল মসজিদের আর্থিক লেনদেনে সরকারের নিয়ন্ত্রণসহ বেশ কিছু প্রস্তাব জানিয়ে জাতীয় সংসদে বিল পাসের জন্য ডেপুটি স্পিকারের কাছে এপ্রিল মাসে আবেদন করেছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি হাসান হাবিব তালুকদার। প্রতিকার না পাওয়ায় এবার শুরু হয়েছে প্রকাশ্য সংঘাত।
সূত্র জানায়, তাবলীগ জামাতের সক্রিয় দু’টি গ্রুপের একটির নেতৃত্বে আছেন সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম। অন্য গ্রুপে অধ্যাপক মুশফিকুর রহমান। উভয়পক্ষই একে অপরকে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের দোসর বলে দাবি করেছেন। আবার দুই পক্ষই বাংলাদেশে তাবলীগের একমাত্র জিম্মাদারও বলেও দাবি করেন। ওয়াসিফুল গ্রুপের দাবি, তাবলীগ একটি অরাজনৈতিক দ্বীনি সংগঠন। ঈমান ও আমল উন্নতির সহায়ক। কিন্তু, কিছু দুষ্কৃতকারী প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। মুশফিক পক্ষের দাবি, ওয়াসিফুল তাবলীগ জামাতের টাকার বড় দুর্নীতি করেছেন। কুক্ষিগত করতে চাইছেন এর বিশাল সমর্থক গোষ্ঠীকে। এটি হতে দেয়া যায় না। দুই গ্রুপের রেষারেষিতে বৃহস্পতিবার রাতে কাকরাইল মসজিদের ভেতর অধ্যাপক মুশফিকুর রহমানের অনুসারীরা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আধিপত্য বিস্তার, অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগ সংবলিত দুই পাতার একটি লিফলেট বিতরণ করছিলেন। এসময় ওয়াসিফুলের লোকজন এতে বাধা দেয়।
এ সময় দুইপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরে ওয়াসিফুলের লোকজন অধ্যাপক মুশফিকুরের ২৪ কর্মীকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ জানায়, আটককৃতদের ৫৪ ধারায় আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। সরজমিন কাকরাইল মসজিদে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের ডান পাশে একটি নতুন ভবনের উন্নয়নের কাজ চলছে। এই কমপ্লেক্স নির্মাণের ব্যয় নিয়ে শুরু হয় সন্দেহ, অবিশ্বাস, যা নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ এখন তুঙ্গে।
তাবলীগের মধ্যে এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা চিল্লাধারী মুরুব্বিরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তারা এ ঘটনার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তাবলীগ জামায়াতের মজলিসে শূরা সদস্য আব্দুল লতিফ জানান, তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় মুরুব্বি মাওলানা ইলিয়াস আলী, মাওলানা জোবায়ের আহমেদসহ মুরুব্বিরা মতামত দিয়েছেন যে, তাবলীগের কোন কর্মী নামাজ শেষে মসজিদের বাইরে কোন বই অথবা লিফলেট বিলি করতে পারবে না। এতে তাবলীগের কাজে বিঘ্ন ঘটবে এবং মেহনত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন যদি তাবলীগের কর্মীরা নামাজ শেষে বই ও লিফলেট বিলি করেন এবং তাতে যদি লেখা থাকে ‘চলো চলো বাংলাদেশ সচিবালয় ঘেরাও করো’ তাহলে এটি কেমন হলো? এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছেন তাবলীগের নাম ভাঙিয়ে আধিপত্য বিস্তারকারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও জামায়াতপন্থি মুশফিকুর রহমান। তাবলীগকে তিনি জামায়াতে রূপান্তরিত করার ষড়যন্ত্র করছেন। একে কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
মসজিদের গেটে দায়িত্বপালনকারী নিরাপত্তারক্ষী সাইফুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ তিন বছর ধরে তাদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব চলে আসছে। মুশফিকুর ও তার লোকজন কোরআনে ও হাদিসের ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। এতে বিভেদ বাড়বে এবং তাবলীগ জামাতে চিল্লা দেয়ার মতো লোকজন পাওয়া যাবে না।
তবে অধ্যাপক মুশফিকুরের অনুসারীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তার কর্মী জাবেদ হোসেন অভিযোগ করে জানান, অনেকটা বাধ্য হয়ে আমরা ওয়াসিফুলের বিরুদ্ধে লিফলেট বিতরণ করেছি। ২০০৩ সালে দিল্লিতে বাংলাদেশের তাবলীগের ১৪ মজলিসে শূরা সদস্য নির্বাচিত হন। তাদের একজন ওয়াসিফুল। এরপর থেকেই তিনি শুরু করেন হাদিয়া বাণিজ্য। তিনি বলেন, কাকরাইল মারকাজ মসজিদের উন্নয়ন, বিদেশী মেহমানদের খেদমত ও ইজতেমার কথা বলে দেশে ও বিদেশে তাবলীগ জামাতের ধনী মুরুব্বিদের কাছ থেকে তিনি কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলেছেন। এই কাজে তার স্ত্রী মিনু ইসলামও নিয়োজিত। এত বিপুল অংকের টাকার হিসাব তিনি কাউকে দেননি।
জাবেদ আরও জানান, ২০১২ সালে কাকরাইলের মারকাজ মসজিদের ডান দিকে একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ভবনটি এখন নির্মাণ চলছে। ওই ভবনের নির্মাণের জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়েছে। অথচ তিনি এখন সবাইকে হিসাব দেখাচ্ছেন ৬ কোটি টাকা চাঁদা উঠেছে। এত বড় জালিয়াতি কখনও মেনে নেয়া যায় না। ওয়াসিফকে তিনি আওয়ামী লীগের চর বলে আখ্যায়িত করেন। মুশফিকুরের অনুসারীর তাবলীগের কর্মী তাওহিদুল ইসলাম জানান, ওয়াসিফুলের দুর্নীতির বিষয়টি ফাঁস করে দেয়ার জন্য হারুন নামে এক তাবলীগ কর্মীকে তিনি জঙ্গি বলে আখ্যায়িত করে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছেন। ২০১৩ সালের ২৪শে ডিসেম্বর টঙ্গীর ইজতেমার ময়দানে তার দুর্নীতির লিফলেট বিতরণের জন্য তিনজন তাবলীগ কর্মীকে পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। তার অপকর্মের প্রতিবাদে ১৯শে জানুয়ারি প্রেস ক্লাবে এবং রাজশাহীতে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এরপর তিনি তার সব অপকর্ম বন্ধ করবেন বলে আমরা মনে করছিলাম। কিন্তু, তিনি আগের চেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করে ইসলামী পণ্ডিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাবলীগের আকিদা ও ঐক্য রক্ষা করতে হলে এই ওয়াসিফুলের হাত থেকে তাবলীগ জামাতকে মুক্ত করতে হবে। কাকরাইল মসজিদে বরিশালের বাবুগঞ্জ থেকে আসা চিল্লাধারী আজিজুল ইসলাম জানান, তাবলীগ তো আল্লাহ ও নবীওয়ালাদের কাজ। এখানে কেন বিভেদ থাকবে? বিষয়টি যেন আর মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে এ জন্য সতর্ক হতে হবে। নইলে এটি কারও জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। এ ঘটনার জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই জানান, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। কাকরাইল মসজিদে যেন আর অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এ জন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
No comments