কয়রায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট
কয়রায় শুকনা মওসুমের শুরুতেই অধিকাংশ এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে। উপজেলার প্রত্যন্ত এ জনপদগুলোয় গ্রামের পর গ্রাম মিলছে না উপযোগী পানি। আর যে জন্য সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কটে ছিন্নমূল মানুষগুলো অনেক দূর থেকে পানি এনে জীবন ধারণ করছে। এলাকাবাসী সরকারি সহযোগিতায় কিংবা বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানিয়েছে। সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কয়রা সদর, উত্তর বেদকাশী, মহেশ্বরীপুর ও মহারাজপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে সুপেয় পানির সঙ্কট। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এলাকার পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ওই সমস্ত এলাকায় নলকূপ থাকলেও তাতে মিলছে না কোন পানি। যে জন্য নলকূপ থেকে পানি উঠানো কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে এসব গ্রামাঞ্চলের খাবার পানির উৎস হলো পুকুর। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে এই পুকুরগুলোর পানি পান করা সম্ভব না হওয়ায় এই দুর্ভোগের কবলে পড়তে হচ্ছে এসব হতদরিদ্র মানুষকে। আর সুপেয় পানি না থাকায় দূষিত পানি পান করে সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন পানিবাহিত জটিল ও কঠিন রোগে। এখানকার মানুষের খাবার পানির ব্যবস্থা করতে হলে পুকুরগুলো সংস্কারসহ সংরক্ষণের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে পানির সঙ্কট কিছুটা হলেও দূর করা সম্ভব। তাছাড়া বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থার মাধ্যমেও মানুষ পরিত্রাণ পেতে পারে। কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৪০ হাজার ৫০০ পরিবার রয়েছে। লোকসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষাধিকের কাছাকাছি। এর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ সুপেয় পানি পান করা থেকে বঞ্চিত। উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী নলকূপের সংখ্যা ১ হাজার ৬৩২টি ও পিএসএফের সংখ্যা ১৬৫টি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী কয়রা উপজেলা পানি শুধু খাবার নয় ব্যবহারেরও অনুপযোগী। কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, উপজেলা অধিকাংশ জমিতে খাল, বিল, পুকুর সর্বত্রই লোনাপানি উত্তোলন করে অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। এতে সমগ্র এলাকার পানি ও মাটি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। ফলে কয়রার মানুষ মাইলের পর মাইল পেরিয়ে সুপেয় পানি সংগ্রহ করছে। সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলোর অবস্থা আরও ভয়াবহ। এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। নদীর কুমির আর সুন্দরবনের বাঘ এবং প্রকৃতির সঙ্গে নিরলস লড়াই করে হাড্ডিসার মানুষগুলো কোন রকম বেঁচে আছে। না দেখলে বোঝা যায় না এদের জীবনযাত্রা কত নিম্নমানের। এই খেটে খাওয়া মানুষগুলো ১০/১৫ কি.মি. দূর থেকে পানি এনে তা পান করে আসছে। তথ্যানুযায়ী অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে উত্তর বেদকাশী, কয়রা ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হয় না। নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত এসব এলাকার পানির স্তর দ্রুত নিচে নামতে থাকে। ফলে অধিকাংশ নলকূপ দিয়ে পানি ওঠে না। আর এই কারণে প্রায় সব মানুষ পান করতে বাধ্য হয় দূষিত পানি। এসব এলাকায় পানিতে স্বাভাকি লবণাক্ততার পরিমাণ ১ থেকে ২ হাজার মিলি সেন্টিমিটার। কয়রার যে এলাকায় মানুষের শুকনা মওসুমের শুরুতেই তীব্র খাবার পানিসঙ্কট দেখা দিয়েছে সে গ্রামগুলো হচ্ছে- সদর ইউনিয়নের ৬নং কয়রা, ৫নং কয়রা, ৪নং কয়রা, ঝিলিয়াঘাটা, গোবরা, হরিণখোলা, ঘাটাখালী, মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ী, সুতিরকোনা, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের- তেঁতুলতলা, সাতআনিয়া, গিলাবাড়ী, কালিবাড়ী শেখের টেক, বানিয়াখালী, হড্ডা, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের বড়বাড়ী, কাঠকাটা ও পাথরখালী। এসব এলাকার মানুষ ইতিমধ্যে মাইলের পর মাইল দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে পান করছে। কয়রা সদর ইউনিয়নের ৫নং কয়রা গ্রামের সমাজসেবক সোলায়মান হাওলাদার বলেন, এই গ্রামের মানুষ ১০ থেকে ১৫ কি.মি. দূরে দক্ষিণ বেদকাশীর জোড়শিং, বজবজা এলাকার গভীর নলকূপ থেকে পানি এনে পান করতে হচ্ছে। কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ.খ.ম. তমিজউদ্দীন সুপেয় পানির সঙ্কটের কথা স্বীকার করে বলেন, এ থেকে পরিত্রাণ পেতে পরিষদের মাধ্যমে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
No comments