আসামির পক্ষ নিচ্ছে শ্রম মন্ত্রণালয়
রানা প্লাজা ধসে মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত ৬ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের অনুমতি দিচ্ছে না মন্ত্রণালয়। উল্টো আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে শ্রম মন্ত্রণালয়, নিশ্চুপ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ফলে ওই ঘটনায় ১ হাজার ১৩৬ শ্রমিকের মুত্যুর জন্য দায়ী ১১ সরকারি কর্মকর্তাসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করেও আদালতে জমা দিতে পারছে না সিআইডি। গত জুন মাস থেকে সিআইডি চূড়ান্ত অভিযোগপত্র হাতে নিয়ে বসে আছে। তদন্ত সংস্থাটি নিরুপায় হয়ে তাদের অসহায়ত্বের কথা বিচারিক আদালতকেও অবহিত করেছে। ছয় কর্মকর্তার মধ্যে শ্রম মন্ত্রণালয়ের চার জন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক জন এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একজন। এই ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দায়েরের বিষয়টি গত সাড়ে ৫ মাস ঝুলে আছে। সিআইডি এদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করেছে। তারা এতে সাক্ষী করেছে ৯৬২ জনকে। ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের মামলার নথিপত্র ঘেঁটে ও যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে জানা গেছে এসব তথ্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মিখাইল শিপার শুক্রবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, আমার মন্ত্রণালয়ের চার কর্মকর্তা শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী কোনো অপরাধ করেনি। তাই আমরা তাদের পক্ষ নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রথম প্রতিবেদনে তাদের দায়ী করা হলে, তাদের বরখাস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু পরে আমাদের মনে হয়েছে তারা কোনো অপরাধ করেনি। তাই সিআইডির আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি। একই বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী শুক্রবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক মারা যান। ঘটনার পরপরই এ নিয়ে শ্রম মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ভবন ধসের জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. জামসেদুর রহমান ও মো. বেলায়েত হোসেন, উপমহাপরিদর্শক মো. ইউসুফ আলী এবং সহিদুল ইসলামকে দায়ী করে প্রতিবেদন দাখিল করে ওই কমিটি। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তাদের সাময়িক চাকরিচ্যুত করে শ্রম মন্ত্রণালয়।
মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে। তাদের বিরুদ্ধে রানা প্লাজার ৬ তলার ওপর অবৈধভাবে নির্মিত ৭ম ও ৮ম তলার গার্মেন্ট ফ্লোরে জেনারেটর মেশিন লে-আউট নকশা অনুমোদনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তাই তাদের আসামি করা হয় মামলায়। কিন্তু ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ ধারা অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো অভিযোগ আমলে নিতে পারেন না আদালত। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের অনুমোদন চেয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ জুন আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণকর। কিন্তু মন্ত্রণালয় অনুমোদন না দিয়ে উল্টো ওই চার কর্মকর্তা কোনো অপরাধ করেনি মর্মে প্রতিবেদন সিআইডির কাছে পাঠায়। গত ৪ সেপ্টেম্বর পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী তারা কোনো অপরাধ করেনি। ঘটনার পরপর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আবেগের বশবর্তী হয়ে তৈরি করা হয়েছিল। শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রথম তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছিল, এই চার কর্মকর্তা লাইসেন্স প্রদান করে শ্রম আইন, ২০০৬-এর ৩২৬, ৩১৯, ৮৫, ৬১ এবং তদীয় বিধিমালা ১৯৭৯-এর ৩, ৪, ৫ এবং ৩৮ ধারা লংঘন করেছে। তাদের দেয়া অনুমোদনের ওপর ভিত্তি করে ওই ভবনে জেনারেটরগুলো রানা প্লাজা ধসকে তরান্বিত করেছে। যা সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মন্ত্রণালয় এ তদন্ত প্রতিবেদনকে আমলে না নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দোষ বলে সনদ দিয়েছে। রানা প্লাজা ধসের আগের দিন ভবনে ফাটলের বিষয়টি জানতেন সাভারের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি সিনিয়র সহকারী সচিব মো. কবির হোসেন সরদার। এরপর ঘটনাস্থলে এসে ভবনটিকে সিলগালা না করে ‘কোনো সমস্যা দেখি না’ মর্মে শ্রমিকদের আশ্বস্ত করেন। যা সব গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। সিআইডি মামলার আলামত হিসেবে গণমাধ্যম থেকে সেই ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের অনুমোদন চেয়ে ১ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করে সিআইডি। কিন্তু অদ্যাবধি তার অনুমোদন মেলেনি। আর রাজউকের ইমারত পরিদর্শক আওলাদ হোসেনও ফাটলের বিষয়টি জানতেন। এরপরও কোনো পদক্ষেপ নেননি তিনি। তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়েরের অনুমোদন চেয়ে ১ জুন আবেদন করলেও তা মঞ্জুর করেনি রাজউক।
জানতে চাইলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক যুগান্তরকে বলেন, চার কর্মকর্তার অপরাধ শ্রম আইনের নয়। তারা দণ্ডবিধির অপরাধ করেছেন। কোনো ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডে জড়িত কিনা সেটার পক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করা এবং অভিযোগ গঠনের দায়িত্ব পুলিশের। অপরাধের ব্যাপারে অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই। তাই অনতিবিলম্বে অভিযোগ দায়েরের ব্যাপারে অনুমোদন দেয়া আবশ্যক। তিনি বলেন, এখানে মন্ত্রণালয় যে আসামির পক্ষ অবলম্বন করেছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
প্রসঙ্গত, শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রথম তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রানা প্লাজা কোনো দিনই পরিদর্শন করেননি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের কোনো কর্মকর্তা। এই অধিদফতরের কর্মকর্তা জামসেদ ও বেলায়েত রানা প্লাজার ৭ম ও ৮ম তলার ওপর অবৈধভাবে নির্মিত গার্মেন্ট ফ্লোরে মেশিন বসানোর নকশার অনুমোদন দিয়েছেন। আর অধিদফতরের কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী ও সহিদুল ইসলাম রানা প্লাজা বাণিজ্যিক ফ্লোর হওয়া সত্ত্বেও কারখানা পরিদর্শন না করে ভুয়া নকশার ওপর ভিত্তি করে জেনারেটর স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছেন। আর জেনারেটরের কম্পনের ফলে ভবনে ফাটল ধরে। আর এই ফাটলের কারণে রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক ব্যক্তি নিহত হন।
সিআইডির কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে শ্রম মন্ত্রণালয় উল্লেখ করে, মন্ত্রণালয়ের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে, প্রথম তদন্ত কমিটি ঘটনার আকস্মিকতা ও বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনায় বাস্তবতার চেয়ে অনেক বেশি আবেগের বশবর্তী হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসপি বিজয় কৃষ্ণকর যুগান্তরকে বলেন, রানা প্লাজা ভবন ধসের জন্য দায়ী তারা। কারণ এরা কোনোদিন রানা প্লাজা পরিদর্শন না করে ভবনের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ তলায় জেনারেটর স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছিল। আর লে-আউটের সব কাগজপত্রই ছিল ভুয়া। যা তারা যাচাই-বাছাই করেননি। মৃত্যুর জন্য এরাও সোহেল রানার মতোই দায়ী। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করবোই। তিনি আরও বলেন, সাভারের ইউএনও কবির হোসেনের জন্য এতগুলো লোককে মরতে হয়েছে। কারণ ঘটনার আগের দিন রানা প্লাজায় ফাটলের সংবাদ পেয়ে এসেছিলেন। আবার তিনি ‘কোনো সমস্যা নেই’ বলে টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তার পরও কেন মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিচ্ছে না তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। তিনি জানান, সর্বোচ্চ শাস্তির ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
রানা প্লাজা ধসের কারণ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তাদের রিপোর্টে বলা হয়, রানা প্লাজায় জেনারেটর স্থাপন ও তার কম্পনে ভবনে ফাটল দেখা দেয়। ভবন ধসের এটি অন্যতম কারণ। ওই রিপোর্ট আলামত হিসেবে জব্দ করেছে সিআইডি।
অভিযুক্ত অপর ৫ সরকারি কর্মকর্তা : সাভার পৌরসভার প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান, সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম ও সাভার পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মিখাইল শিপার শুক্রবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, আমার মন্ত্রণালয়ের চার কর্মকর্তা শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী কোনো অপরাধ করেনি। তাই আমরা তাদের পক্ষ নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রথম প্রতিবেদনে তাদের দায়ী করা হলে, তাদের বরখাস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু পরে আমাদের মনে হয়েছে তারা কোনো অপরাধ করেনি। তাই সিআইডির আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি। একই বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী শুক্রবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক মারা যান। ঘটনার পরপরই এ নিয়ে শ্রম মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ভবন ধসের জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. জামসেদুর রহমান ও মো. বেলায়েত হোসেন, উপমহাপরিদর্শক মো. ইউসুফ আলী এবং সহিদুল ইসলামকে দায়ী করে প্রতিবেদন দাখিল করে ওই কমিটি। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তাদের সাময়িক চাকরিচ্যুত করে শ্রম মন্ত্রণালয়।
মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে। তাদের বিরুদ্ধে রানা প্লাজার ৬ তলার ওপর অবৈধভাবে নির্মিত ৭ম ও ৮ম তলার গার্মেন্ট ফ্লোরে জেনারেটর মেশিন লে-আউট নকশা অনুমোদনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তাই তাদের আসামি করা হয় মামলায়। কিন্তু ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭ ধারা অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো অভিযোগ আমলে নিতে পারেন না আদালত। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের অনুমোদন চেয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ জুন আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণকর। কিন্তু মন্ত্রণালয় অনুমোদন না দিয়ে উল্টো ওই চার কর্মকর্তা কোনো অপরাধ করেনি মর্মে প্রতিবেদন সিআইডির কাছে পাঠায়। গত ৪ সেপ্টেম্বর পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শ্রম আইন, ২০০৬ অনুযায়ী তারা কোনো অপরাধ করেনি। ঘটনার পরপর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আবেগের বশবর্তী হয়ে তৈরি করা হয়েছিল। শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রথম তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছিল, এই চার কর্মকর্তা লাইসেন্স প্রদান করে শ্রম আইন, ২০০৬-এর ৩২৬, ৩১৯, ৮৫, ৬১ এবং তদীয় বিধিমালা ১৯৭৯-এর ৩, ৪, ৫ এবং ৩৮ ধারা লংঘন করেছে। তাদের দেয়া অনুমোদনের ওপর ভিত্তি করে ওই ভবনে জেনারেটরগুলো রানা প্লাজা ধসকে তরান্বিত করেছে। যা সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মন্ত্রণালয় এ তদন্ত প্রতিবেদনকে আমলে না নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দোষ বলে সনদ দিয়েছে। রানা প্লাজা ধসের আগের দিন ভবনে ফাটলের বিষয়টি জানতেন সাভারের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি সিনিয়র সহকারী সচিব মো. কবির হোসেন সরদার। এরপর ঘটনাস্থলে এসে ভবনটিকে সিলগালা না করে ‘কোনো সমস্যা দেখি না’ মর্মে শ্রমিকদের আশ্বস্ত করেন। যা সব গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। সিআইডি মামলার আলামত হিসেবে গণমাধ্যম থেকে সেই ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের অনুমোদন চেয়ে ১ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করে সিআইডি। কিন্তু অদ্যাবধি তার অনুমোদন মেলেনি। আর রাজউকের ইমারত পরিদর্শক আওলাদ হোসেনও ফাটলের বিষয়টি জানতেন। এরপরও কোনো পদক্ষেপ নেননি তিনি। তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়েরের অনুমোদন চেয়ে ১ জুন আবেদন করলেও তা মঞ্জুর করেনি রাজউক।
জানতে চাইলে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক যুগান্তরকে বলেন, চার কর্মকর্তার অপরাধ শ্রম আইনের নয়। তারা দণ্ডবিধির অপরাধ করেছেন। কোনো ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডে জড়িত কিনা সেটার পক্ষে সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করা এবং অভিযোগ গঠনের দায়িত্ব পুলিশের। অপরাধের ব্যাপারে অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই। তাই অনতিবিলম্বে অভিযোগ দায়েরের ব্যাপারে অনুমোদন দেয়া আবশ্যক। তিনি বলেন, এখানে মন্ত্রণালয় যে আসামির পক্ষ অবলম্বন করেছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
প্রসঙ্গত, শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রথম তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রানা প্লাজা কোনো দিনই পরিদর্শন করেননি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের কোনো কর্মকর্তা। এই অধিদফতরের কর্মকর্তা জামসেদ ও বেলায়েত রানা প্লাজার ৭ম ও ৮ম তলার ওপর অবৈধভাবে নির্মিত গার্মেন্ট ফ্লোরে মেশিন বসানোর নকশার অনুমোদন দিয়েছেন। আর অধিদফতরের কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী ও সহিদুল ইসলাম রানা প্লাজা বাণিজ্যিক ফ্লোর হওয়া সত্ত্বেও কারখানা পরিদর্শন না করে ভুয়া নকশার ওপর ভিত্তি করে জেনারেটর স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছেন। আর জেনারেটরের কম্পনের ফলে ভবনে ফাটল ধরে। আর এই ফাটলের কারণে রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক ব্যক্তি নিহত হন।
সিআইডির কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে শ্রম মন্ত্রণালয় উল্লেখ করে, মন্ত্রণালয়ের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে, প্রথম তদন্ত কমিটি ঘটনার আকস্মিকতা ও বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনায় বাস্তবতার চেয়ে অনেক বেশি আবেগের বশবর্তী হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসপি বিজয় কৃষ্ণকর যুগান্তরকে বলেন, রানা প্লাজা ভবন ধসের জন্য দায়ী তারা। কারণ এরা কোনোদিন রানা প্লাজা পরিদর্শন না করে ভবনের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ তলায় জেনারেটর স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছিল। আর লে-আউটের সব কাগজপত্রই ছিল ভুয়া। যা তারা যাচাই-বাছাই করেননি। মৃত্যুর জন্য এরাও সোহেল রানার মতোই দায়ী। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করবোই। তিনি আরও বলেন, সাভারের ইউএনও কবির হোসেনের জন্য এতগুলো লোককে মরতে হয়েছে। কারণ ঘটনার আগের দিন রানা প্লাজায় ফাটলের সংবাদ পেয়ে এসেছিলেন। আবার তিনি ‘কোনো সমস্যা নেই’ বলে টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তার পরও কেন মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিচ্ছে না তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। তিনি জানান, সর্বোচ্চ শাস্তির ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
রানা প্লাজা ধসের কারণ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তাদের রিপোর্টে বলা হয়, রানা প্লাজায় জেনারেটর স্থাপন ও তার কম্পনে ভবনে ফাটল দেখা দেয়। ভবন ধসের এটি অন্যতম কারণ। ওই রিপোর্ট আলামত হিসেবে জব্দ করেছে সিআইডি।
অভিযুক্ত অপর ৫ সরকারি কর্মকর্তা : সাভার পৌরসভার প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান, সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ ফারজানা ইসলাম ও সাভার পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার।
No comments