সিমকার্ড বিক্রির আগে যাচাই হবে পরিচয়পত্র
এখন থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সিমকার্ড বিক্রি করবে না মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো। ন্যাশনাল আইডেন্টিটি ডিপার্টমেন্টের (এনআইডি) মাধ্যমে গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হওয়ার পরই সিমকার্ড বিক্রি করা হবে। এ ব্যাপারে এনআইডি মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে সহায়তা দেবে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অর্থপাচারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে এ উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত প্রস্তাবনা তৈরি করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) ড. কামাল উদ্দিন আহমদকে প্রধান করে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ২ ডিসেম্বরের আগেই কমিটিকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে ‘মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতারণা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও হুমকি মোকাবেলা’ সংক্রান্ত এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। এর ফলে মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমে যাবে বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈঠক শেষে এ বিষয়ে ব্রিফ না করলেও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যুগান্তরকে বলেন, আইনশৃংখলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে বলেছি তারা যেন এখন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ও বিস্তারিত স্থায়ী ঠিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কারো কাছে সিমকার্ড বিক্রি না করে। তারাও আমাদের এ বিষয়ে কথা দিয়েছে। আইনশৃংখলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আগামী বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হতে পারে।জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) সাধারণ সম্পাদক টিআইএম নুরুল কবীর যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে গ্রাহকের প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হয়ে সিমকার্ড বিক্রি করব বলে আমরা সরকারকে কথা দিয়েছি। পাশাপাশি এনআইডির মাধ্যমে গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার বিষয়ে সরকারের সহযোগিতাও চেয়েছি। সরকার এ বিষয়ে একটি সাব কমিটি গঠন করেছে।গতকালের বৈঠকে অংশ নেয়া মোবাইল ফোন কোম্পানির একজন প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে যুগান্তরকে বলেন, আমাদের বলা হয়েছে যারা মোবাইল ফোনের সিমকার্ড কিনতে আসবে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি বা ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা পাসপোর্টের ফটোকপি নিতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর যাচাই-বাছাই করার পর তাকে সিমকার্ড দিতে হবে। যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনোভাবেই সিমকার্ড বিক্রি করা যাবে না। এর জন্য অন্তত দুই ঘণ্টা, এমনকি পুরোদিনই লেগে যেতে পারে বলে আমাদের ধারণা দেয়া হয়েছে।নবগঠিত উপকমিটির প্রধান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) ড. কামাল উদ্দিন আহমদ বৈঠক শেষে এ বিষয়ে নিজ দফতরে যুগান্তরকে বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যেসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত হয়, তা ঠেকাতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২ অক্টোবর আইনশৃংখলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে মোবাইলের মাধ্যমে সংগঠিত অপরাধ কিভাবে ঠেকানো যায় তার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একটি সভা করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই আলোকেই আমরা আজকের এ মিটিং করেছি।তিনি আরও জানান, নবগঠিত সাব কমিটির প্রথম বৈঠক হবে আগামী বৃহস্পতিবার। কমিটি এ সংক্রান্ত অগ্রগতি কার্যক্রম তৈরি করে আগামী ২ ডিসেম্বর আইনশৃংখলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উত্থাপন করবে। আশা করছি এ কমিটির কার্যক্রমের ফলে আমরা মোবাইল সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারব।সাব কমিটির সদস্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটি প্রধান বলেন, এখনও সদস্যসংখ্যা নির্ধারণ করা হয়নি। তবে কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবে এনআইডি, বিটিআরসি, সব মোবাইল ফোন অপারেটরসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা।
No comments