বাংলাদেশের ইতিহাস
৮৫তম ওভারে নাতসাই এম শাংওয়েকে শফিউল ইসলাম লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে রংধনু উঠল। রংধনুর সাত রঙের মতো এই জয়েরও সাতকাহন। বাংলাদেশের সপ্তম টেস্ট জয়। তার চেয়েও বড় কথা, ৩-০-তে এই প্রথম ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়। শেষ পর্যন্ত হোয়াইটওয়াশই হল জিম্বাবুয়ে। চট্টগ্রামে রবিবাসরীয় উৎসব বর্ণিল হয়ে উঠল বাংলাদেশের ১৮৬ রানের বড় জয়। তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ৩-০-তে জয়ের গরিমায় সিক্ত হল বাংলাদেশ। অনেক বৃষ্টির পর এক মুঠো রোদ্দুর কিংবা দীর্ঘ খরার পর শাওনের ধারার সঙ্গে তুলনীয় এই জয় ভুলিয়ে দিল দীর্ঘ ১০ মাসের পরাজয়, বঞ্চনা, হতাশা। ২০১৪ বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আনন্দবার্তা নিয়ে এলো বছরের শেষ প্রান্তে। রিক্ত, নিঃস্ব হওয়ার শংকায় একের পর এক ক্যালেন্ডারের পাতা যখন ফুরিয়ে আসছে তখনই সাকিব-তামিম-মুমিনুল-তাইজুল-জুবায়েরদের জাদু। সেই ইন্দ্রজালে ভ্যানিশড জিম্বাবুয়ে।শেষ টেস্টের পঞ্চম দিন বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৯ উইকেট। আগেরদিন হ্যামিলটন মাসাকাদজা ও সিকান্দার রাজা জুটিতে যোগ হয়েছিল ৬৭ রান। কাল এ দু’জনের মধ্যে ৯৩ রানের জুটি ভাঙতেই বাংলাদেশের সামনে সিরিজ ৩-০ করার পথ উন্মুক্ত হয়ে যায়। বাকিটা সময় শুধুই বাংলাদেশের বোলারদের। জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংস ৩৭৪ রানে থামতেই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরু হয়ে যায় লাল-সবুজ উৎসব। লাল তখন আরও রক্তবর্ণ। সবুজ তখন আরও মোহনীয়। একমাত্র চাকাবভা যা কিছুটা প্রতিরোধের বর্ম মেলে ধরেছিলেন। কিন্তু দিনশেষে সাতটি চার ও একটি ছয়ের সহায়তায় ১৮১ বলে তার ৮৯ রানের ইনিংসও দলের শোচনীয় হার রুখতে পারেনি। ভাগ্যও তাকে খানিকটা সহায়তা করেছে ইনিংস প্রলম্বিত করতে। বেশ কয়েকবার লেগ বিফোর আপিল এবং বারদুয়েক রিভিউ থেকে রক্ষা পান চাকাবভা। ২১-এ অক্কা পেতে পারতেন তিনি। ক্যাচটি ফেলে দেন মুশফিকুর।সকালে চতুর্থ ওভারে রাজা পূর্ণ করেন ম্যাচে তার দ্বিতীয় ফিফটি। যে বলে চার মেরে তিনি পঞ্চাশে পৌঁছেন সেটি তার স্টাম্পে চুমু খেতে পারত। পরের ওভারে তাইজুল রিভিউতে উইকেট-বঞ্চিত হন। সিরিজে এ নিয়ে নবমবার বাংলাদেশের রিভিউ প্রত্যাখ্যাত হয়। মাসাকাদজা ১২ রান যোগ করেই শুভাগতের খোরাকে পরিণত হন। জিম্বাবুয়ে তখন ২/৯৭। ব্রেকথ্র“ এনে দেয়ার পর শুভাগত নিজের দ্বিতীয় উইকেট পান রাজাকে ‘ফকির’ করে। শুভাগতের ফুল টস ডিপ মিডউইকেটে জমা হয় তাইজুলের হাতে। রাজার ৭৫ বলে ৬৫-র সেখানেই ইতি ঘটে। ব্রেন্ডন টেলরও (২৪) নিজের উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেন। তার লুজ শট পয়েন্টে লুফে নিতে বেগ পেতে হয়নি সাকিবকে। সিরিজে এ নিয়ে তৃতীয়বার জুবায়েরকে নিজের উইকেট দিলেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক। লাঞ্চের মিনিটসাতেক প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেয়া জুবায়ের দ্বিতীয় সাফল্য পান এলটন চিগুম্বুরাকে স্লিপে ইমরুল কায়েসের ক্যাচে পরিণত করে। প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের টপ স্কোরার চিগুম্বুরা এবার পাঁচ রানেই পত্রপাঠ বিদায় নেন।শেষদিনেও সবকিছু চিত্রনাট্য অনুযায়ী হয়েছে। শফিউল ইসলাম, রুবেল হোসেন, জুবায়ের হোসেন ও শুভাগত হোম দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল হক আগেরদিন ব্যাটিং গড়ে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পরেই স্থান করে নিয়েছেন। ম্যাচসেরার পুরস্কার বগলদাবা করলেন তিনি ম্যাচে শেষে। সিরিজসেরা নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে ফেরা চিরসবুজ সাকিব। বাংলাদেশের জন্য অনেক প্রাপ্তির অনেক সাফল্যের সিরিজ হয়ে রইল এটি। এই প্রথম তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০-তে হোয়াইটওয়াশ করল প্রতিপক্ষকে। ২০০৯-এ ওয়েস্ট ইন্ডিজে তারা দু’ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ২-০-তে। তিন ম্যাচ সিরিজে ২৫১ রান এবং ১৮ উইকেট পেলেন সাকিব। এক সিরিজে ৩০০-র বেশি রান করলেন বাংলাদেশের দু’জন ব্যাটসম্যান তামিম ও মুমিনুল। টেস্টে টানা নয়টি ফিফটি হল মুমিনুলের। বাংলাদেশের সাতটি টেস্ট জয়ের মধ্যে দুটি এলো চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।সাদা পোশাকের খেলায় প্রতিপক্ষকে পর্যুদস্ত করার পর এবার রঙিন পোশাকের ভেলকি। বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হবে ২১ নভেম্বর। (স্কোর কার্ড খেলার পাতায়)
No comments