সংস্কারপন্থিদের সবুজ সঙ্কেত খালেদার by কাফি কামাল
সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতাদের দলে ফেরানোর ব্যাপারে ইতিবাচক বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। ভুল স্বীকার করে দলে ফেরার আকাঙক্ষা ব্যক্ত ও দলের পক্ষে নানাভাবে ভূমিকা রাখার প্রেক্ষিতে এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলের সিনিয়র নেতাদের বড় অংশটিও এই মনোভাবের সঙ্গে একমত। সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এখন সংস্কারপন্থিদের ব্যাপারে নমনীয়। নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে আগামী দিনের কঠোর আন্দোলন-সংগ্রামে সংস্কারপন্থিদের বাইরে রাখতে চায় না বিএনপি। চলছে তাদের দলে ফেরানোর প্রক্রিয়াও। চেয়ারপারসনের নির্দেশে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও কয়েকজন সিনিয়র নেতা এ প্রক্রিয়াটি দেখভাল করছেন। ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন প্রতিরোধ আন্দোলনের সময় চেয়ারপারসনের নির্দেশে সংস্কারপন্থি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন মির্জা আলমগীর। নিজ নিজ এলাকায় কাজ করার জন্য দলের পক্ষ থেকে তাদের অলিখিত নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিএনপি নীতিনির্ধারক ফোরামের কয়েকজন সদস্য জানান, সংস্কারপন্থিদের মধ্যে মাত্র তিনজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে পড়া কিছু নেতা দলের সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছেন। তবে পরবর্তী সময়ে তাদের অনেকেই দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রাখছেন। নেতারা বলেন, যারা আগ্রহী তাদের এলাকায় কাজ করতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকে জোরালোভাবে কাজ করছেনও। যেহেতু তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি, সেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরানোর সুযোগ নেই। তবে দলের নির্দেশনা মেনে কাজ করলে ধীরে ধীরে তারা মূলধারায় সক্রিয় হয়ে উঠবেন। সূত্র জানায়, সিনিয়র নেতাদের অনেকেই সংস্কারপন্থি নেতাদের দলে ফেরানোর পক্ষে বিভিন্ন সময় নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে। তারা বুঝিয়েছেন পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনেকেই সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। তবে তারা রাজনীতিতে যথেষ্ট শিক্ষা পেয়েছেন। এছাড়া সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অন্য কোন দলে যোগ দেননি। গ্রহণ করেননি মন্ত্রিত্বের মতো লোভনীয় অফার। নির্বাচনী এলাকাতেও রয়েছে তাদের ব্যাপক প্রভাব। আগামী দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলন ও নির্বাচনে তাদের সঙ্গে পেলে দল আরও উজ্জীবিত হবে। নেতারা চেয়ারপারসনের কাছে যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগের সংস্কারপন্থি নেতাদের দলের সক্রিয় করার পাশাপাশি কয়েকজনকে মন্ত্রীও বানিয়েছেন শেখ হাসিনা। এদিকে সংস্কারপন্থিদের দলে ফেরানোর ব্যাপারে না-সূচক মনোভাব পোষণ করছেন স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যসহ দলের সিনিয়র কিছু নেতা। এছাড়া সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এখন পর্যন্ত পরিস্কার মতামত দেননি। মূলত এ কারণেই তাদের দলে ফিরতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতারা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তাদের কয়েকজন বিভিন্ন সময়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন। শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ না পেলেও জেনেছেন মনোভাব ইতিবাচক। সূত্র জানায়, যে কোন দিন তাদের সাক্ষাতের সুযোগ দিতে পারেন খালেদা জিয়া। এছাড়া তারেক রহমানের সঙ্গেও শিগগির কয়েকজনের সাক্ষাৎ হতে পারে। এদিকে হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়ে এলাকায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। এছাড়া ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন প্রতিরোধ আন্দোলন ও সর্বশেষ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে ভূমিকা রেখেছেন অনেকেই। ২৯শে ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বালুর ট্রাক দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছিল খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে। ওই সময় দলের সিনিয়র নেতাদের সেখানে দেখা না গেলেও ছুটে গিয়েছিলেন সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়া জনমত জোরালো করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ করছেন। এসব সফরের যাত্রাপথে ব্যাপক লোকসমাগম ঘটিয়ে সমর্থন জানাচ্ছেন সংস্কারপন্থি নেতারা। টেলিভিশন টকশো, সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠকে দলের পক্ষে জোরালো বক্তব্য দেয়ার পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসুচিতে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কূটনীতিকদের সঙ্গে লবিং করে দলের পক্ষে ভূমিকা রাখছেন। তবে তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরোধিতার কারণে অনেকেই সক্রিয় হতে পারছেন না রাজনীতির মাঠে।
সূত্র জানায়, ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বিএনপির সংস্কারপন্থি নেতাদের ওপর চাপ ছিল। সেই সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জিতিয়ে দেয়া এবং কয়েকজনকে মন্ত্রিত্ব দেয়ার টোপও ছিল। ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিএনপির সংস্কারপন্থি নেতাদের মাঠে নামানোর চেষ্টা করা হয় সে সময়। এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রচারণাও চালানো হয়। রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় এ নিয়ে কিছু বৈঠকও করা হয়। কিন্তু সে চাপ এবং টোপের কাছে ধরা দেননি বিএনপির সংস্কারপন্থি নেতারা। উল্টো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। দলের একজন ভাইস চেয়ারম্যানের বাসভবনে সে বৈঠকে অংশ নেন অন্তত একডজন সাবেক এমপি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে তারা কথা দেন আন্দোলনে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখবেন। সরকারের কোন ফাঁদে পা দেবেন না। সূত্র জানায়, সংস্কারপন্থি নেতা, মন্ত্রি-এমপিদের মধ্যে দলে ফেরার ব্যাপারে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন- নরসিংদীর সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, মৌলভিবাজারের এমএম শাহীন, বরিশালের জহিরউদ্দিন স্বপন, সুনামগঞ্জের নজির হোসেন, চাঁদপুরের এসএ সুলতান টিটু, বগুড়ার গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, বরগুনার নুরুল ইসলাম মনি, ঢাকার মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম, ময়মনসিংহের দেলোয়ার হোসেন খান দুলু, বরিশালের শহিদুল হক জামাল, মোশাররফ হোসেন মঙ্গু, গাইবান্ধার শামীম কায়সার লিঙ্কন, লক্ষ্মীপুরের জিয়াউল হক জিয়া, নারায়ণগঞ্জে আতাউর রহমান আঙুর, চাঁদপুরের আলমগীর হায়দার খান, কক্সবাজারের ইঞ্জিনিয়ার শহীদুজ্জামান, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মে. জেনারেল (অব.) জেডএ খান ও সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি প্রমুখ।
সূত্র জানায়, সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে সংস্কারপন্থিদের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, অতীতে যা হওয়ার হয়ে গেছে। তা মনে রাখার সময় এখন নয়। আন্দোলন সফল করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবাই এক হয়ে কাজ করতে হবে। কে কোন পদে আছেন কিংবা কে কোনপন্থি সেই বিবেচনা করলে চলবে না। তৃণমূলে দলকে সুসংগঠিত করতে সবার সাংগঠনিক প্রভাব ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। এছাড়া দলের সংস্কারপন্থি সাবেক এমপিদের সক্রিয় হতে বিভিন্ন সময়ে ইঙ্গিত দেন তিনি। এদিকে দীর্ঘদিন পর হাইকমান্ড থেকে পাওয়া বার্তাকে সুখবর বিবেচনা করে দলে ফেরার আশায় বুক বেঁধেছেন সংস্কারপন্থি নেতারা। এমন দুই নেতা বলেন, আমরা পরিস্থিতির শিকার। আজকের পরিণতির জন্য তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া দায়ী। দল আমাদের ভুল বুঝলেও দলের হয়ে নীরবে কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও করবো। বিএনপির উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ চলছে। অতীতের ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে মূলধারায় ফেরার প্রহর গুনছি। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে চান খালেদা জিয়া। এ লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নিষ্ক্রিয় নেতাদের একই পতাকাতলে নিয়ে আসার কথা ভাবছেন তিনি। সংস্কারপন্থিদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন চেয়ারপারসন। উল্লেখ্য, ওয়ান-ইলেভেনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২০০৭ সালের ২৫শে জুন বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া দলের অভ্যন্তরে ১৫ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিলে ১২৭ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী-এমপি তাকে সমর্থন জানান। সংস্কারপন্থি নেতাদের মধ্যে কেবল তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন ও দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি তিনজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। অন্যদের বেশির ভাগই তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিশে দলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন ওয়ান ইলেভেনের শেষ দিকে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তারা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনও করেছেন। পরে দলের জাতীয় কাউন্সিলেও তাদের বেশির ভাগের পদ-পদবী বহাল এবং কেউ কেউ পদোন্নতিও পেয়েছেন। তবে নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে কিছু নেতা দলে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাননি। অথচ সাংগঠনিক ও নির্বাচনী রাজনীতিতে রয়েছে তাদের শক্ত অবস্থান।
সূত্র জানায়, ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বিএনপির সংস্কারপন্থি নেতাদের ওপর চাপ ছিল। সেই সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জিতিয়ে দেয়া এবং কয়েকজনকে মন্ত্রিত্ব দেয়ার টোপও ছিল। ভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বিএনপির সংস্কারপন্থি নেতাদের মাঠে নামানোর চেষ্টা করা হয় সে সময়। এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রচারণাও চালানো হয়। রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় এ নিয়ে কিছু বৈঠকও করা হয়। কিন্তু সে চাপ এবং টোপের কাছে ধরা দেননি বিএনপির সংস্কারপন্থি নেতারা। উল্টো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। দলের একজন ভাইস চেয়ারম্যানের বাসভবনে সে বৈঠকে অংশ নেন অন্তত একডজন সাবেক এমপি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে তারা কথা দেন আন্দোলনে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখবেন। সরকারের কোন ফাঁদে পা দেবেন না। সূত্র জানায়, সংস্কারপন্থি নেতা, মন্ত্রি-এমপিদের মধ্যে দলে ফেরার ব্যাপারে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন- নরসিংদীর সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, মৌলভিবাজারের এমএম শাহীন, বরিশালের জহিরউদ্দিন স্বপন, সুনামগঞ্জের নজির হোসেন, চাঁদপুরের এসএ সুলতান টিটু, বগুড়ার গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, বরগুনার নুরুল ইসলাম মনি, ঢাকার মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম, ময়মনসিংহের দেলোয়ার হোসেন খান দুলু, বরিশালের শহিদুল হক জামাল, মোশাররফ হোসেন মঙ্গু, গাইবান্ধার শামীম কায়সার লিঙ্কন, লক্ষ্মীপুরের জিয়াউল হক জিয়া, নারায়ণগঞ্জে আতাউর রহমান আঙুর, চাঁদপুরের আলমগীর হায়দার খান, কক্সবাজারের ইঞ্জিনিয়ার শহীদুজ্জামান, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মে. জেনারেল (অব.) জেডএ খান ও সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি প্রমুখ।
সূত্র জানায়, সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে সংস্কারপন্থিদের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, অতীতে যা হওয়ার হয়ে গেছে। তা মনে রাখার সময় এখন নয়। আন্দোলন সফল করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবাই এক হয়ে কাজ করতে হবে। কে কোন পদে আছেন কিংবা কে কোনপন্থি সেই বিবেচনা করলে চলবে না। তৃণমূলে দলকে সুসংগঠিত করতে সবার সাংগঠনিক প্রভাব ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। এছাড়া দলের সংস্কারপন্থি সাবেক এমপিদের সক্রিয় হতে বিভিন্ন সময়ে ইঙ্গিত দেন তিনি। এদিকে দীর্ঘদিন পর হাইকমান্ড থেকে পাওয়া বার্তাকে সুখবর বিবেচনা করে দলে ফেরার আশায় বুক বেঁধেছেন সংস্কারপন্থি নেতারা। এমন দুই নেতা বলেন, আমরা পরিস্থিতির শিকার। আজকের পরিণতির জন্য তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া দায়ী। দল আমাদের ভুল বুঝলেও দলের হয়ে নীরবে কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও করবো। বিএনপির উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ চলছে। অতীতের ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে মূলধারায় ফেরার প্রহর গুনছি। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে চান খালেদা জিয়া। এ লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নিষ্ক্রিয় নেতাদের একই পতাকাতলে নিয়ে আসার কথা ভাবছেন তিনি। সংস্কারপন্থিদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন চেয়ারপারসন। উল্লেখ্য, ওয়ান-ইলেভেনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২০০৭ সালের ২৫শে জুন বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া দলের অভ্যন্তরে ১৫ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিলে ১২৭ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী-এমপি তাকে সমর্থন জানান। সংস্কারপন্থি নেতাদের মধ্যে কেবল তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন ও দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি তিনজনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। অন্যদের বেশির ভাগই তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিশে দলের রাজনীতিতে সক্রিয় হন ওয়ান ইলেভেনের শেষ দিকে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তারা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনও করেছেন। পরে দলের জাতীয় কাউন্সিলেও তাদের বেশির ভাগের পদ-পদবী বহাল এবং কেউ কেউ পদোন্নতিও পেয়েছেন। তবে নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কারণে কিছু নেতা দলে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাননি। অথচ সাংগঠনিক ও নির্বাচনী রাজনীতিতে রয়েছে তাদের শক্ত অবস্থান।
No comments