চিনে ফেলায় রত্নাকে হত্যা করা হয়েছে
সরাইলে ডাকাতদের চিনে ফেলায় কলেজছাত্রী রত্নাকে কুপিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছে তিন ঘাতক। তাদের সহযোগীদের নাম-ঠিকানাও পুলিশের কাছে বলেছে। গতকাল আটক বাবলু (২০), তারেক (২১) ও মেহেদী (২৪) এ তথ্য দিয়েছে পুলিশের কাছে। আটকের ৩২ ঘণ্টা পর থানা থেকে দুই ব্যক্তিকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। এজন্য বাদীর কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রাখা হয়েছে। তবে উসমান আলীর এজাহার শতভাগ আমলে নেয়নি পুলিশ। গতকাল সকাল ১১টায় সরাইল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন উসমানকে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। বিকাল ৪টা পর্যন্ত তাকে থানায় বসিয়ে রেখে নতুন আরেকটি এজাহার লিখে সেটাতে উসমানের স্বাক্ষর রাখা হয়। পুলিশ, মামলার বাদী ও অনুসন্ধানে জানা যায়, ডাকাতি করাকালে কলেজছাত্রীকে হত্যার ঘটনায় গত শনিবার সকালে ইসলামাবাদ গ্রামে অভিযান চালিয়ে চার জন ও ওইদিন রাতে আরও তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। লাশ দাফনের পর থানা থেকে এ ঘটনায় আটককৃত কয়েকজনকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য দফায় দফায় বাদীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে কিছু প্রভাবশালী লোক। এক সময় তারা পুলিশসহ বিভিন্ন জায়গায় মোটা অংকের টাকার অফার দিতে থাকে। বাদীকেও দেখায় টাকার প্রলোভন। নিহত রত্নার পিতা উসমান যখন একটি এজাহার লিখে থানায় জমা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়, ঠিক সেই সময়ে তাকে হাসপাতালের বিছানা থেকে পুলিশ নিয়ে যায় থানায়। তাকে বসিয়ে রেখে পুলিশ নিজেদের মতো করে একটি এজাহার লিখেন বিকাল ৪টা পর্যন্ত। পুলিশের এজাহারটিতে মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে ৬ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ১ লাখ টাকা ও ডাকাতদের চিনে ফেলায় রত্নাকে হত্যার। সে সঙ্গে রত্নার পিতা ও ভাইকে মারধর। ফাঁকে বিশেষ কায়দায় দু’জনকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি ফায়সালা করা হয়। এজন্য রত্নার পিতা অর্ধশিক্ষিত উসমানের কাছ থেকে সাদা কাগজে একটি স্বাক্ষর রাখার বিষয় নিশ্চিত করেছেন তিনি। পরে বিএনপি নেতা সুহিলপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোবারক মুন্সী ও ইসলামী ঐক্যজোট নেতা নোয়াগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানে মনসুর আহমেদের জিম্মায় উসমানের দেয়া এজহারের দুই আসামি হেবজু মিয়া এবং সাইদু মিয়াকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল বিকাল চারটায় শনিবার সকালে ধৃত বাবলু, তারেক ও রাতে আটককৃত মেহেদী, আমীর আলী এবং শাহিনকে গতকাল বিকাল সোয়া চারটায় আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। ডাকাতি ও কলেজছাত্রী কিলিং মিশনের নেতৃত্ব দেয়ার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে ইসলামাবাদ গ্রামের বাবুল মিয়ার পুত্র তালিকাভুক্ত ডাকাত মেহেদী। দলের ১১ জন সদস্যের নামও বলেছে তারা। দিয়েছে পুরো অপারেশনের বর্ণনা। কিন্তু তাদের গডফাদাররা এখনও থেকে গেল অধরা এমন শঙ্কায় ভুগছেন রত্নার পিতা ও পরিবারের লোকজন। ধনা মিয়ার ছেলে বাবলু ও আরজু মিয়ার ছেলে তারেক দু’জনই বখাটে এবং হাইওয়ের পরিবহন ডাকাত। তারা শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেটের সদস্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গ্রামের একাধিক মহিলা পুরুষ জানায়, তাদের কাছে উঠতি বয়সের মেয়েদের কোন নিরাপত্তা নেই। এছাড়া এরা নিয়মিত ডাকাতি-ছিনতাই করে। গ্রামের মাতব্বর নামধারী কিছু লোক এদের শেল্টার দেয়। কারণ তাদের ভাগ দেয়া হয়। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আবদুল হক উসমান আলীর এজাহার পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, তিনি (উসমান) তার এজাহার পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সাদা কাগজে স্বাক্ষর রাখার কথা অস্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় কোন সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় দু’জনের জিম্মায় দুই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
No comments