কাদের মোল্লার রায়ঃ নেপথ্যে ভয়াবহ অবহেলার অভিযোগ by গোলাম মাওলা রনি (এম.পি)
অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায়
ঘোষিত হলো ৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার। এ রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া
হয়েছে। এ রায়ে পক্ষ-বিপক্ষের কেউই খুশি হয়নি।
সবচেয়ে
আশ্চর্যের বিষয় হলো, মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের জন্ম হয়নি সে সব লাখ লাখ
তরুণ-তরুণী বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তাদের তরুণ মনের আকুতি, কাদের মোল্লার
ফাঁসি চাই। বিভিন্ন সামাজিক সাইট বিশেষত ফেসবুকের প্রায় ২০ লাখ সদস্য রায়
ঘোষণার পর তাদের তির্যক মতামত ব্যক্ত করেছেন নিজস্ব ওয়ালে। এর পর তারা
রাস্তায় নেমে আসেন। এখনো পর্যন্ত সবাই শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে রায়ের
বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। আমার প্রশ্ন, এমনটি কেন হলো। এভাবে চললে
ভবিষ্যতে রায়ে আরও হতাশাব্যঞ্জক কিছু আসতে পারে। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন
সাঈদী কিংবা গোলাম আযম যদি খালাস পান তাহলে সেই দায় কে নেবে? চিন্তা
করতেই ক্ষোভ, ভয় এবং একই সঙ্গে হতাশায় মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। এ
পর্যন্ত যতজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে তাদের মধ্যে কাদের
মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সবচেয়ে ভয়াবহ এবং গুরুতর। তার বিচারের
রায় যদি এরূপ হয় তাহলে অন্যদের ব্যাপারে আশঙ্কা করাই স্বাভাবিক।
আইনের
একজন ছাত্র হিসেবে আমি জানি, বিচারক সাধারণত তথ্য-প্রমাণ, দলিল-দস্তাবেজ,
সাক্ষ্য এবং বাদী-বিবাদীর সওয়াল-জবাবের ভিত্তিতে রায় প্রদান করেন।
এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের নিয়োজিত প্রসিকিউটর এবং মামলার তদন্তকারী
কর্মকর্তাদের অবহেলা, প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন না
করতে পারার ব্যর্থতা সর্বমহলে আলোচিত হচ্ছে।
এ মামলার প্রথম বিচার্য বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে কাদের মোল্লা বনাম কসাই কাদের নিয়ে। প্রসিকিউশনের দাবি, মিরপুরের কুখ্যাত খুনি কসাই কাদেরই আজকের কাদের মোল্লা। প্রমাণ হিসেবে অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণের সঙ্গে তৎকালীন পত্রিকায় প্রকাশিত কসাই কাদেরের একটি ছবি উপস্থাপন করা হয়েছে। চশমা চোখে দেওয়া কসাই কাদের পাকিস্তানি সেনাকমান্ডার নিয়াজীর পাশে দাঁড়ানো।
অন্যদিকে কাদের মোল্লা তার জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি যুদ্ধকালীন তার জন্মভূমি ফরিদপুর জেলার সদরপুরে ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছেন। সেখানকার বিখ্যাত মীর ধলামিয়া সাহেবের বাড়িতে থাকতেন এবং তার দুই মেয়েকে পড়াতেন। আমি ধলামিয়া পীর সাহেবকে চিনতাম এবং তার দুই মেয়েকেও চিনি। পীর ধলামিয়া সাহেব মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির সমর্থক। তার বড় মেয়ের জামাই একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বুয়েট থেকে পাস করা ইঞ্জিনিয়ার। সরকারের এলজিইডি বিভাগে তিনি উঁচুপদে চাকরি করতেন এবং পিডি বা প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেন। গাফফার ইঞ্জিনিয়ার নামের এই কর্তাব্যক্তি এখনো এলজিইডির বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করে থাকেন। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘকালীন সাধারণ সম্পাদক এসএম নুরুন্নবী যিনি কিনা এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য তিনিও তার সহযোদ্ধা হিসেবে একসঙ্গে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন।
পীর সাহেবের অন্য মেয়ের জামাতা বাংলাদেশের বিখ্যাত অর্থপেডিঙ্ সার্জন ডা. সিরাজুল ইসলাম যিনি এক সময় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন। এ ছাড়া পীর সাহেবের বড়ভাই পাকিস্তান আমলে অর্থাৎ ১৯৫৩ সালের দিকে পুলিশের আইজি ছিলেন। নাম মো. আবুল হাসনাত ওরফে ইসমাইল মিয়া। তিনি প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খানের সহপাঠী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন এবং তার সেগুনবাগিচার বাড়িতে প্রায়ই আসতেন। তার ছেলেদের মধ্যে মেজর জেনারেল মামুন সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের অন্য ছেলে মুজিবুর রহমান ফারুক পুলিশের এডিশনাল আইজি এবং বড় ছেলে আবদুস সালাম সিএসপি কর্মকর্তা ছিলেন। এক মেয়ের জামাই ছিলেন লেখক অধ্যাপক আবু রুশদ মতিন উদ্দিন।
কাদের মোল্লার জবানবন্দি মতো প্রসিকিউশন যদি এসব বরেণ্য ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে হাজির করতে পারতেন তাহলে বিচারকার্য নিয়ে প্রতিপক্ষ টুঁ-শব্দটি উচ্চারণ করতে পারতেন না। অন্যদিকে আসামি উল্লেখ করেছেন, তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্রুপ করতেন। এক্ষেত্রে তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের দুই কর্ণধার বর্তমান সরকারের কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকেও সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করা যেত।
কাদের মোল্লা উল্লেখ করেছেন, তিনি সদরপুরে আরও ৩০-৩৫ জনের একদল যুবককে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছেন! কি ভয়াবহ বক্তব্য। প্রসিকিউশনের উচিত ছিল যথাযথ যুক্তিপ্রমাণ উত্থাপন করে এ বক্তব্যটিকে মিথ্যা প্রমাণ করা। সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেগম সালেহা মোশারফ বর্তমান সরকারের একজন সংসদ সদস্য। তার স্বামী প্রয়াত অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন ছিলেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি এবং তিনবারের নির্বাচিত এমপি। তাদের আত্দীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার প্রয়াত নান্নু মীর ছিলেন যুদ্ধকালীন সময়ে থানা কমান্ডার এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি। নান্নু মীরের ছোটভাই মনি মীরের মেয়ের সঙ্গে বেগম সালেহা মোশারফের বড় ছেলের বিয়ে হয়েছে। কাদের মোল্লার বিবৃতির বিষয়ে এদের চেয়ে নির্ভরযোগ্য সাক্ষী আর কে হতে পারে।
এবার আসি অন্য একটি বক্তব্য প্রসঙ্গে। তিনি বলেছেন, যুদ্ধকালীন পুরোটা সময় তিনি পীর সাহেবের বাড়িতে ছিলেন। তার টাকা দিয়ে তিনি চৌদ্দরশি বা সাড়ে সাতরশি বাজারে ব্যবসা করতেন পীর সাহেবের দোকানঘরে বসে। (দৈনিক কালের কণ্ঠ)। চৌদ্দরশি বাজার ফরিদপুর জেলার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ বাজার। স্বাধীনতার সময়ও এই বাজার বসত প্রতি শনি এবং মঙ্গলবার। কম করে হলেও ৫০ হাজার লোকের আগমন ঘটত হাটের দিনে। পীর সাহেবের দোকানটি ছিল সবচেয়ে বড় এবং বাজারের একমাত্র দ্বিতল টিনের ঘর। পীর সাহেবের মেজ ছেলে রহিচ ব্যবসা-বাণিজ্য দেখতেন। পরবর্তীতে তিনি ডাকাতের গুলিতে মারা যান। কাজেই মুক্তিযুদ্ধের সময় কাদের মোল্লা যদি ওই বাজারে ব্যবসা করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে অন্তত এক লাখ লোককে সাক্ষী হিসেবে পাওয়া যাবে। আরও একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে পাওয়া যেতে পারে। সাপ্তাহিক বিচিত্রার এককালীন চিফ রিপোর্টার বিশিষ্ট সাংবাদিক কাজী জাওয়াদ মুক্তিযুদ্ধ ও তৎপরবর্তী সময়ে চৌদ্দরশি বাজারে ব্যবসা করতেন। কাজী জাওয়াদ বিচিত্রা ছেড়ে লন্ডনে বিবিসি বাংলা বিভাগে চাকরি করতেন এবং এখন তিনি বিলাত প্রবাসী। তাকেও সাক্ষী হিসেবে আনা যেত। কাদের মোল্লা জানিয়েছেন, স্বাধীনতা-উত্তরকালে তিনি রাইফেলস্ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যাপনা এবং স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে বাইশরশি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তার ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন উঁচুপদে এমনকি সচিব পদমর্যাদায় চাকরি করছেন। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে সাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রসিকিউশন আরও অনেক নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ হাজির করতে পারতেন। তিনি ঢাকা প্রেস ক্লাবের সদস্য_ দু-দুইবার নির্বাচিত সহ-সভাপতি ছিলেন। কাজেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এমন একাধিক জাতীয় ও বরেণ্য সাংবাদিককে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা যেত।
জনদাবি উঠেছে, সরকার যেন কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় মেনে না নিয়ে উচ্চতর আদালতে আপিল করে। আশা করি, জনতার আবেগকে সম্মান দেখিয়ে সরকার অবশ্যই আপিল করবে। সে ক্ষেত্রে সরকার যদি দেশের স্বনামধন্য ও প্রথিতযশা আইনজ্ঞদের এ মামলার প্রসিকিউটর নিয়োগ না করে তবে আমার ভয় হচ্ছে_ মহামান্য উচ্চতর আদালত থেকে আরও বিব্রতকর রায় আসতে পারে।
এ মামলার প্রথম বিচার্য বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে কাদের মোল্লা বনাম কসাই কাদের নিয়ে। প্রসিকিউশনের দাবি, মিরপুরের কুখ্যাত খুনি কসাই কাদেরই আজকের কাদের মোল্লা। প্রমাণ হিসেবে অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণের সঙ্গে তৎকালীন পত্রিকায় প্রকাশিত কসাই কাদেরের একটি ছবি উপস্থাপন করা হয়েছে। চশমা চোখে দেওয়া কসাই কাদের পাকিস্তানি সেনাকমান্ডার নিয়াজীর পাশে দাঁড়ানো।
অন্যদিকে কাদের মোল্লা তার জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি যুদ্ধকালীন তার জন্মভূমি ফরিদপুর জেলার সদরপুরে ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছেন। সেখানকার বিখ্যাত মীর ধলামিয়া সাহেবের বাড়িতে থাকতেন এবং তার দুই মেয়েকে পড়াতেন। আমি ধলামিয়া পীর সাহেবকে চিনতাম এবং তার দুই মেয়েকেও চিনি। পীর ধলামিয়া সাহেব মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির সমর্থক। তার বড় মেয়ের জামাই একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বুয়েট থেকে পাস করা ইঞ্জিনিয়ার। সরকারের এলজিইডি বিভাগে তিনি উঁচুপদে চাকরি করতেন এবং পিডি বা প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেন। গাফফার ইঞ্জিনিয়ার নামের এই কর্তাব্যক্তি এখনো এলজিইডির বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করে থাকেন। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘকালীন সাধারণ সম্পাদক এসএম নুরুন্নবী যিনি কিনা এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য তিনিও তার সহযোদ্ধা হিসেবে একসঙ্গে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন।
পীর সাহেবের অন্য মেয়ের জামাতা বাংলাদেশের বিখ্যাত অর্থপেডিঙ্ সার্জন ডা. সিরাজুল ইসলাম যিনি এক সময় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন। এ ছাড়া পীর সাহেবের বড়ভাই পাকিস্তান আমলে অর্থাৎ ১৯৫৩ সালের দিকে পুলিশের আইজি ছিলেন। নাম মো. আবুল হাসনাত ওরফে ইসমাইল মিয়া। তিনি প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খানের সহপাঠী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন এবং তার সেগুনবাগিচার বাড়িতে প্রায়ই আসতেন। তার ছেলেদের মধ্যে মেজর জেনারেল মামুন সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের অন্য ছেলে মুজিবুর রহমান ফারুক পুলিশের এডিশনাল আইজি এবং বড় ছেলে আবদুস সালাম সিএসপি কর্মকর্তা ছিলেন। এক মেয়ের জামাই ছিলেন লেখক অধ্যাপক আবু রুশদ মতিন উদ্দিন।
কাদের মোল্লার জবানবন্দি মতো প্রসিকিউশন যদি এসব বরেণ্য ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে হাজির করতে পারতেন তাহলে বিচারকার্য নিয়ে প্রতিপক্ষ টুঁ-শব্দটি উচ্চারণ করতে পারতেন না। অন্যদিকে আসামি উল্লেখ করেছেন, তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্রুপ করতেন। এক্ষেত্রে তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের দুই কর্ণধার বর্তমান সরকারের কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকেও সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করা যেত।
কাদের মোল্লা উল্লেখ করেছেন, তিনি সদরপুরে আরও ৩০-৩৫ জনের একদল যুবককে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছেন! কি ভয়াবহ বক্তব্য। প্রসিকিউশনের উচিত ছিল যথাযথ যুক্তিপ্রমাণ উত্থাপন করে এ বক্তব্যটিকে মিথ্যা প্রমাণ করা। সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেগম সালেহা মোশারফ বর্তমান সরকারের একজন সংসদ সদস্য। তার স্বামী প্রয়াত অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন ছিলেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি এবং তিনবারের নির্বাচিত এমপি। তাদের আত্দীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার প্রয়াত নান্নু মীর ছিলেন যুদ্ধকালীন সময়ে থানা কমান্ডার এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি। নান্নু মীরের ছোটভাই মনি মীরের মেয়ের সঙ্গে বেগম সালেহা মোশারফের বড় ছেলের বিয়ে হয়েছে। কাদের মোল্লার বিবৃতির বিষয়ে এদের চেয়ে নির্ভরযোগ্য সাক্ষী আর কে হতে পারে।
এবার আসি অন্য একটি বক্তব্য প্রসঙ্গে। তিনি বলেছেন, যুদ্ধকালীন পুরোটা সময় তিনি পীর সাহেবের বাড়িতে ছিলেন। তার টাকা দিয়ে তিনি চৌদ্দরশি বা সাড়ে সাতরশি বাজারে ব্যবসা করতেন পীর সাহেবের দোকানঘরে বসে। (দৈনিক কালের কণ্ঠ)। চৌদ্দরশি বাজার ফরিদপুর জেলার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ বাজার। স্বাধীনতার সময়ও এই বাজার বসত প্রতি শনি এবং মঙ্গলবার। কম করে হলেও ৫০ হাজার লোকের আগমন ঘটত হাটের দিনে। পীর সাহেবের দোকানটি ছিল সবচেয়ে বড় এবং বাজারের একমাত্র দ্বিতল টিনের ঘর। পীর সাহেবের মেজ ছেলে রহিচ ব্যবসা-বাণিজ্য দেখতেন। পরবর্তীতে তিনি ডাকাতের গুলিতে মারা যান। কাজেই মুক্তিযুদ্ধের সময় কাদের মোল্লা যদি ওই বাজারে ব্যবসা করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে অন্তত এক লাখ লোককে সাক্ষী হিসেবে পাওয়া যাবে। আরও একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে পাওয়া যেতে পারে। সাপ্তাহিক বিচিত্রার এককালীন চিফ রিপোর্টার বিশিষ্ট সাংবাদিক কাজী জাওয়াদ মুক্তিযুদ্ধ ও তৎপরবর্তী সময়ে চৌদ্দরশি বাজারে ব্যবসা করতেন। কাজী জাওয়াদ বিচিত্রা ছেড়ে লন্ডনে বিবিসি বাংলা বিভাগে চাকরি করতেন এবং এখন তিনি বিলাত প্রবাসী। তাকেও সাক্ষী হিসেবে আনা যেত। কাদের মোল্লা জানিয়েছেন, স্বাধীনতা-উত্তরকালে তিনি রাইফেলস্ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যাপনা এবং স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে বাইশরশি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তার ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন উঁচুপদে এমনকি সচিব পদমর্যাদায় চাকরি করছেন। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে সাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রসিকিউশন আরও অনেক নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ হাজির করতে পারতেন। তিনি ঢাকা প্রেস ক্লাবের সদস্য_ দু-দুইবার নির্বাচিত সহ-সভাপতি ছিলেন। কাজেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এমন একাধিক জাতীয় ও বরেণ্য সাংবাদিককে সাক্ষী হিসেবে হাজির করা যেত।
জনদাবি উঠেছে, সরকার যেন কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় মেনে না নিয়ে উচ্চতর আদালতে আপিল করে। আশা করি, জনতার আবেগকে সম্মান দেখিয়ে সরকার অবশ্যই আপিল করবে। সে ক্ষেত্রে সরকার যদি দেশের স্বনামধন্য ও প্রথিতযশা আইনজ্ঞদের এ মামলার প্রসিকিউটর নিয়োগ না করে তবে আমার ভয় হচ্ছে_ মহামান্য উচ্চতর আদালত থেকে আরও বিব্রতকর রায় আসতে পারে।
No comments