মেলার বুক রিভিউ
অন্যরকম এক বই
তরুণী তখন ঘরে একা
দীর্ঘ কয়েক বছরের প্রেমের পর এবার প্রেমের ফসল ঘরে তোলার পালা রাহাত আর
অপরাজিতার। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই তাদের বিয়ে।
নতুন জীবনে প্রবেশের
আনন্দে পুলকিত দু’জনই। হঠাৎ একটা ফোন আসে রাহাতের মোবাইলে। আননোন নাম্বার।
কণ্ঠটাও অপরিচিত। রাহাত ফোনদাতার পরিচয় জানতে চায়। কিন্তু পায় না।
ফোনদাতা রাহাতের হবু বউ অপরাজিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য দেয়। রাহাতের পৃথিবী
ওলটপালট হয়ে যেতে থাকে। রাহাত এসব তথ্যের সত্যতা খোঁজার জন্য হন্যে হয়ে
পড়ে। গল্প মোড় নিতে থাকে বিভিন্ন দিকে। এই হলো ইকবাল খন্দকারের লেখা
তরুণী তখন ঘরে একা উপন্যাসের সারসংপে। ইকবাল খন্দকারের বইটি প্রকাশ করেছে
রোদেলা প্রকাশনী। প্রচ্ছদ এঁকেছেন নিয়াজ চৌধুরী তুলি। মূল্য রাখা হয়েছে
১৬০ টাকা।
মেলায় এলো তরুণ লেখক আইয়ুব আহমেদ দুলালের ‘শুভ্রকরবী’
তরুণ ও সম্ভাবনাময় লেখক আইয়ুব আহমেদ দুলাল। প্রবাসে কর্মব্যস্ত থেকেও
তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ সাহিত্যচর্চা করে আসছেন। এর আগেও তার দুইটি উপন্যাস
প্রকাশ হয়েছে। পত্রপত্রিকায় তিনি নিয়মিত গল্প-কবিতা লিখে থাকেন। তার
লেখার ধরণ, শব্দ চয়ন, ভাষাশৈলী, বিশ্লেষণ… উল্লেখ করার মতোই। শালীনতাবোধ
থাকে যথেষ্ট, যা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে। শুভ্রকরবী উপন্যাসটি
তেমনই একটি ভালো লাগার মতো গ্রন্থ। তার লেখায় এক ধরনের জাদু আছে। অতি
সাধারণ বিষয়কে তিনি অসাধারণ করে তোলেন। এর মাঝে এমন কিছু বিষয় আছে যার
সাথে আমরা খুবই পরিচিত। যেমন তিনি এক জায়গায় লিখেছেনÑ …খালাম্মা শব্দটার
মাঝে মাটির গন্ধ আছে। আন্তরিকতার ছোঁয়া পাওয়া যায়। অতি আপন মনে হয়। যার
কাছে রয়েছে অনেক অনেক স্নেহ মমতা। থাকেন সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল মায়াময়।
খুবই সাদাসিধে এবং মাটির মানুষ বলা যায়। অন্যায় আবদার আদিখ্যেতাও চলে, যা
মায়ের কাছেও চলে না। আর আন্টি শব্দটার মাঝে রয়েছে ইট-পাথরের ছোঁয়া।
কঠিন কঠিন ভাব। তাকে খালাম্মা সম্বোধন করলে স্বস্তি পাওয়া যায় না। এই
শব্দটা বর্তমান যুগের কিন্ডারগার্টেনের শিশুদের মুখেই মানায়। যারা কঠিনের
মাঝে বসবাস করে।
এর পুরোটাজুড়ে আনন্দ পাওয়ার মতো বেশ কিছু রম্য অনুচ্ছেদ রয়েছে।
ক্যাম্পাসে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা মানেই বুঝতে পারছেন। তৃতীয় ভাগে গিয়ে
পাওয়া যাবে রোমান্টিক ছোঁয়া। সেখানে একটি জায়গায় লেখা আছে : ইসতিয়াক
অত্যন্ত যতেœর সাথে ভালোবাসায় লালিত হৃদয়ের খাঁচায় বন্দী তার প্রিয়
বিহঙ্গকে খোলা আকাশ দেখিয়ে পিঞ্জরের কপাট খুলে দিলো। বিহঙ্গ শুধু একবারই
তাকাল অন্তরীক্ষে। ছাড়া পেয়েও তার মাঝে কোনো উল্লাস দেখা যায়নি। দূর
গগনে উড়তে গিয়েও উড়েনি। শুধু অপিল্লব প্রসারিত করে ইসতিয়াকের নিষ্কলুষ
নিঃস্বার্থ ভালোবাসার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
মোট কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকরো টুকরো স্মৃতিগাথা নিয়ে উপন্যাসটি রচিত
হয়েছে। আমার বিশ্বাস, যুবসমাজ অবশ্যই গ্রহণ করবে এবং ছাত্রজীবন যারা পার
করে এসেছে তারা অনায়াশে ফিরে পাবে হারিয়ে যাওয়া সোনালি দিনগুলো।
উপন্যাসটির প্রথম দিকে তেমন কোনো রোমান্টিক ছোঁয়া পাওয়া না গেলেও আস্তে
আস্তে বেরিয়ে আসবে একটা সুপ্ত রোমাঞ্চ। শেষটা হবে রবীন্দ্রনাথের ভাষায়Ñ
শেষ হয়েও হইল না শেষ। চমৎকার একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রেমকাহিনী, যা সচরাচর
পাওয়া যায় না।
তবে শুভ্রকরবীতে কাহিনী বিন্যাস, শব্দগাঁথুনী ও ভাষাগত দিক দিয়ে শতভাগ
শালীনতাবোধ বজায় রাখা হয়েছে। কাজেই এটি একটি পড়ার মতো বই। কিশোর থেকে
বৃদ্ধ পর্যন্ত সব শ্রেণীর মানুষই এটি পড়তে পারবে। নিঃসন্দেহে প্রিয়জনদের
উপহার দেয়া কিংবা সংগ্রহে রাখার মতোই একটি বই। বইটি পাওয়া যায় বইমেলার
১১৬ নম্বর স্টলে। প্রকাশ করেছে- প্রিয়মুখ প্রকাশনী।
লিখেছেন : জুয়েল মাহমুদ
No comments