৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দোষীরা গ্রেফতার না হলে কঠোর কর্মসূচি- গণমাধ্যমে হামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে সাংবাদিক সমাজ
সাংবাদিক সমাজ রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করে : নয়া দিগন্ত দৈনিক নয়া
দিগন্ত অফিস ও প্রেসে অগ্নিসংযোগ, আমার দেশসহ গণমাধ্যমের ওপর হামলার
প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে রাজধানীসহ সারা দেশের সাংবাদিক জনতা।
এ
জঘন্য তৎপরতায় তারা জানিয়েছে ধিক্কার। হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে
আয়োজিত এক সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব
হামলাকারীকে গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত না করা হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে
তোলা হবে। আর কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের
স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিবাদী সরকারের এ হামলার জবাব দেয়া হবে। তারা বলেন,
দেশের বিভিন্ন স্থানে দৈনিক নয়া দিগন্ত, আমার দেশ, সংগ্রাম ও ইনকিলাবের
কপি পোড়ানো হয়েছে। ক্যাবল অপারেটরদের চাপ দিয়ে দিগন্ত টিভির সম্প্রচার
বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। পত্রিকা এজেন্টদেরও হুমকি দেয়া হচ্ছে, তারা যেন ওই
সব পত্রিকা বিক্রি না করে। একই সাথে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে
বাধা দেয়া হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমবিরোধী একটি ধ্বংসাত্মক প্রবণতা ল
করা যাচ্ছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এসব অপতৎপরতা রোধে কোনো তৎপরতা চোখে
পড়ছে না। নয়া দিগন্ত পত্রিকায় পুলিশের তল্লাশি এবং সাংবাদিকদের হয়রানির
ঘটনারও নিন্দা জানান সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
নয়া দিগন্ত পত্রিকায় অগ্নিসংযোগ ও সন্ত্রাসী হামলা এবং আমার দেশ পত্রিকার ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস কাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দৈনিক নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস এ ইসলাম, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়–য়া, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএফইউজের মহাসচিব শওকত মাহমুদ, জাতীয় প্রেস কাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস শহিদ, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ফটোসাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিউদ্দিন বিটু, সাংবাদিক নেতা এম এ আজিজ, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, সরদার ফরিদ আহমদ, ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ আকন, বিএফইউজের সহসভাপতি আমীরুল ইসলাম কাগজী, ডিইউজের সহসভাপতি মুহাম্মদ খায়রুল বাশার, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ডিইউজের আমার দেশ ইউনিট-প্রধান বাছির জামাল, দৈনিক সংগ্রামের ইউনিট-প্রধান শহিদুল ইসলাম, দিগন্ত টেলিভিশনের শাহিন হাসনাত প্রমুখ। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটের সভাপতি শাহেদ চৌধুরী। সমাবেশে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত সাংবাদিকেরা সংহতি প্রকাশ করেন। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নাল আবেদীন ও বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, চিত্রনায়ক আবুল কাশেম মিঠুন, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, বিশিষ্ট সুরকার ও শিল্পী মনিরুজ্জামান মনির, কবি আসাদ বিন হাফিজ, কবি কামার ফরিদ, স্বাধীনতা ফোরামের আবু নাসের রহমাতুল্লাহ সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এ সমাবেশের আয়োজন করে। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেস কাব থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড় ঘুরে আবার প্রেস কাবে এসে শেষ হয়।
আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, নয়া দিগন্তে হামলা কেন? আমরা তো কারো কোনো তি করিনি। যারাই সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তপে করেছে, তারাই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিপ্তি হয়েছে। এ হামলা সংবাদপত্রের জন্য বড় আঘাত। মিডিয়ার ওপর আক্রমণ ভালো লক্ষণ নয়। এর পরিণাম কখনোই ভালো হবে না। অতীতে যারা মিডিয়ার ওপর আক্রমণ করেছে, তাদের ইতিহাস ভালো নয়। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে হলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করতে হবে। নয়া দিগন্তের ওপর এ হামলা পরিকল্পিত। কেউ না কেউ এটি করেছে। মিডিয়ার ওপর আক্রমণ করে গণতন্ত্র সামনের দিকে অগ্রসর করা যায় না। এখনো যাবে না।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, শাহবাগের মঞ্চ থেকে বেশ কিছু পত্রিকা ও চ্যানেল বন্ধের দাবি উঠেছে; এতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। গতকাল নয়া দিগন্তসহ বেশ কিছু গণমাধ্যমে হামলা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের ট্যাক্সে যাদের বেতন হয়, তারা মানুষের ওপর আজ টিয়ার শেল, পিপার স্প্রে ব্যবহারের পর এখন সরাসরি গুলি করতে শুরু করেছে। আর বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজাকারের বিচারের জন্য লাফালাফি করছেন, তিনি তো রাজাকার তৈরি করেছেন; তার বিচার কবে হবে। ওই সময় তিনি তো জেলা প্রশাসক ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রার জন্য প্রধানমন্ত্রী শপথ করে মতা গ্রহণ করেছেন। অথচ সংসদে দাঁড়িয়ে এখন তিনি বলছেন, জনগণের আকাক্সক্ষার দিকে ল রেখে রায় দিন। এর অর্থ দাঁড়ায় আমি যা চাই, তাই করা হোক।
তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে মিডিয়া বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান এবং সেই স্মারকলিপির প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি জানানোর ঘটনা নজিরবিহীন। এর মাধ্যমে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন চারটি রেখে সব মিডিয়া বন্ধ করা হয়েছিল। এবার বন্ধ করা হচ্ছে ভিন্ন কায়দায়। পত্রিকা অফিসে হামলা, আগুন, তল্লাশি, বন্ধের হুমকি ও সম্পাদককে অবরুদ্ধ করে রাখার সব কিছুই হচ্ছে ফ্যাসিবাদী কায়দায়। তিনি শাহবাগের আন্দোলনের সমালোচনা করে বলেন, মিডিয়ায় আর হামলা হলে প্রয়োজনে সাংবাদিকেরা প্রেস কাবে মঞ্চ করে আজীবন অবস্থান নেবেন। তিনি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নয়া দিগন্ত অফিস ও প্রেসে আগুন এবং আমার দেশ বন্ধের হুমকিদাতাদের গ্রেফতার না করলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দেন।
শওকত মাহমুদ বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করে না, তারা দেশের সার্বভৌমত্বও বিশ্বাস করে না। একাত্তর সালে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের অনেকেই সাংবাদিক। এ দেশের স্বাধীনতায় সংবাদপত্রের অবদান রয়েছে। আজ নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হলে দেশের স্বাধীনতাও রক্ষা করা যাবে না।
শাহবাগ থেকে যারা গণমাধ্যম বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক পরে সংবাদপত্রের ওপরই আপনাদের আক্রোশ, আপনারা তা হলে অরাজনৈতিক হলেন কী করে? সংসদে মন্ত্রীদের মুখ থেকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে ধরনের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য শুনি, তা আজ শাহবাগ থেকেও শোনা যাচ্ছে। তিনি বলেন, তাদের এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবারো প্রমাণ করেছেন যে তিনি ফ্যাসিবাদী।
আবদুস শহিদ বলেন, গণমাধ্যমে হামলা করে দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশে ভিন্নমত থাকতে পারবে না, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, দয়া করে সাংবাদিকদের যে ঐক্য গড়ে উঠেছে, তাতে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করবেন না। এর ফল ভালো হবে না। স্বাধীন গণমাধ্যম চাইলে অবিলম্বে সাংবাদিকদের পাশে এসে দাঁড়ান। তথ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি তথ্যমন্ত্রী থাকাকালে যদি এ হামলার বিচার না করা হয় তা হলে ভেবে নেবো আপনি ব্যর্থ। পরে আপনার বিচারও জনগণের আদালতে হবে।
কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, মঙ্গলবার নয়া দিগন্তসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে হামলা করা হয়েছে। এ হামলা এমন এক সময় করা হয়েছে, যখন আমরা সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে রাজপথে দাঁড়িয়েছি। ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেছে, অথচ সরকার বা পুলিশ প্রশাসন হামলার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অবিলম্বে যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তা হলে দেশের মানুষ বুঝে নেবে এ হামলার পেছনে কারা জড়িত। তিনি বলেনÑ মত ও পথের ভিন্নতা থাকতেই পারে; এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। সরকার স্বাধীন গণমাধ্যমের কথা বলে, কিন্তু মঙ্গলবার যা ঘটেছে এরপর মনে হয় না তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চায়। দয়া করে জাতিকে বিভক্ত করার কোনো ধরনের চেষ্টা করবেন না।
প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রীকে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান।
তাজমেরী এস এ ইসলাম সমাবেশের সাথে ঢাবি সাদা দলের একাত্মতা জানিয়ে বলেন, একটি কুচক্রিমহল গণমাধ্যমে এ হামলার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা করছে।
মুহাম্মদ বাকের হোসাইন বলেন, বর্তমান সরকার নাকি মানবতাবাদী। যদি তা-ই হয়, তা হলে সরকারের চার বছরে ১৭ সাংবাদিক খুন, ২০০ জন ঘরছাড়া, ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা, নয়া দিগন্ত অফিসে আগুন এবং আমার দেশ পোড়ানো হচ্ছে কেন? তিনি বলেন, সাংবাদিকদের আন্দোলন যদি বড় কোনো রূপ নেয়, তার দায় সরকারের; তখন ‘প্রজন্ম চত্বর’ দিয়ে তা ঠেকানো যাবে না।
ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র কখনো একসাথে চলতে পারে না। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ^াস করে না বলেই এ ধরনের হামলা চালানো হচ্ছে।
আজ সমাবেশ : সংবাদমাধ্যমে ফ্যাসিবাদী হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস কাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
নয়া দিগন্ত পত্রিকায় অগ্নিসংযোগ ও সন্ত্রাসী হামলা এবং আমার দেশ পত্রিকার ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস কাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দৈনিক নয়া দিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস এ ইসলাম, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়–য়া, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএফইউজের মহাসচিব শওকত মাহমুদ, জাতীয় প্রেস কাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস শহিদ, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ফটোসাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিউদ্দিন বিটু, সাংবাদিক নেতা এম এ আজিজ, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, সরদার ফরিদ আহমদ, ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ আকন, বিএফইউজের সহসভাপতি আমীরুল ইসলাম কাগজী, ডিইউজের সহসভাপতি মুহাম্মদ খায়রুল বাশার, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ডিইউজের আমার দেশ ইউনিট-প্রধান বাছির জামাল, দৈনিক সংগ্রামের ইউনিট-প্রধান শহিদুল ইসলাম, দিগন্ত টেলিভিশনের শাহিন হাসনাত প্রমুখ। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটের সভাপতি শাহেদ চৌধুরী। সমাবেশে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত সাংবাদিকেরা সংহতি প্রকাশ করেন। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নাল আবেদীন ও বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, চিত্রনায়ক আবুল কাশেম মিঠুন, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, বিশিষ্ট সুরকার ও শিল্পী মনিরুজ্জামান মনির, কবি আসাদ বিন হাফিজ, কবি কামার ফরিদ, স্বাধীনতা ফোরামের আবু নাসের রহমাতুল্লাহ সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এ সমাবেশের আয়োজন করে। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেস কাব থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড় ঘুরে আবার প্রেস কাবে এসে শেষ হয়।
আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, নয়া দিগন্তে হামলা কেন? আমরা তো কারো কোনো তি করিনি। যারাই সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তপে করেছে, তারাই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিপ্তি হয়েছে। এ হামলা সংবাদপত্রের জন্য বড় আঘাত। মিডিয়ার ওপর আক্রমণ ভালো লক্ষণ নয়। এর পরিণাম কখনোই ভালো হবে না। অতীতে যারা মিডিয়ার ওপর আক্রমণ করেছে, তাদের ইতিহাস ভালো নয়। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে হলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করতে হবে। নয়া দিগন্তের ওপর এ হামলা পরিকল্পিত। কেউ না কেউ এটি করেছে। মিডিয়ার ওপর আক্রমণ করে গণতন্ত্র সামনের দিকে অগ্রসর করা যায় না। এখনো যাবে না।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, শাহবাগের মঞ্চ থেকে বেশ কিছু পত্রিকা ও চ্যানেল বন্ধের দাবি উঠেছে; এতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। গতকাল নয়া দিগন্তসহ বেশ কিছু গণমাধ্যমে হামলা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের ট্যাক্সে যাদের বেতন হয়, তারা মানুষের ওপর আজ টিয়ার শেল, পিপার স্প্রে ব্যবহারের পর এখন সরাসরি গুলি করতে শুরু করেছে। আর বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজাকারের বিচারের জন্য লাফালাফি করছেন, তিনি তো রাজাকার তৈরি করেছেন; তার বিচার কবে হবে। ওই সময় তিনি তো জেলা প্রশাসক ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রার জন্য প্রধানমন্ত্রী শপথ করে মতা গ্রহণ করেছেন। অথচ সংসদে দাঁড়িয়ে এখন তিনি বলছেন, জনগণের আকাক্সক্ষার দিকে ল রেখে রায় দিন। এর অর্থ দাঁড়ায় আমি যা চাই, তাই করা হোক।
তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে মিডিয়া বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান এবং সেই স্মারকলিপির প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি জানানোর ঘটনা নজিরবিহীন। এর মাধ্যমে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন চারটি রেখে সব মিডিয়া বন্ধ করা হয়েছিল। এবার বন্ধ করা হচ্ছে ভিন্ন কায়দায়। পত্রিকা অফিসে হামলা, আগুন, তল্লাশি, বন্ধের হুমকি ও সম্পাদককে অবরুদ্ধ করে রাখার সব কিছুই হচ্ছে ফ্যাসিবাদী কায়দায়। তিনি শাহবাগের আন্দোলনের সমালোচনা করে বলেন, মিডিয়ায় আর হামলা হলে প্রয়োজনে সাংবাদিকেরা প্রেস কাবে মঞ্চ করে আজীবন অবস্থান নেবেন। তিনি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নয়া দিগন্ত অফিস ও প্রেসে আগুন এবং আমার দেশ বন্ধের হুমকিদাতাদের গ্রেফতার না করলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দেন।
শওকত মাহমুদ বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করে না, তারা দেশের সার্বভৌমত্বও বিশ্বাস করে না। একাত্তর সালে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের অনেকেই সাংবাদিক। এ দেশের স্বাধীনতায় সংবাদপত্রের অবদান রয়েছে। আজ নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হলে দেশের স্বাধীনতাও রক্ষা করা যাবে না।
শাহবাগ থেকে যারা গণমাধ্যম বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক পরে সংবাদপত্রের ওপরই আপনাদের আক্রোশ, আপনারা তা হলে অরাজনৈতিক হলেন কী করে? সংসদে মন্ত্রীদের মুখ থেকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে ধরনের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য শুনি, তা আজ শাহবাগ থেকেও শোনা যাচ্ছে। তিনি বলেন, তাদের এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবারো প্রমাণ করেছেন যে তিনি ফ্যাসিবাদী।
আবদুস শহিদ বলেন, গণমাধ্যমে হামলা করে দেশে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশে ভিন্নমত থাকতে পারবে না, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, দয়া করে সাংবাদিকদের যে ঐক্য গড়ে উঠেছে, তাতে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করবেন না। এর ফল ভালো হবে না। স্বাধীন গণমাধ্যম চাইলে অবিলম্বে সাংবাদিকদের পাশে এসে দাঁড়ান। তথ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি তথ্যমন্ত্রী থাকাকালে যদি এ হামলার বিচার না করা হয় তা হলে ভেবে নেবো আপনি ব্যর্থ। পরে আপনার বিচারও জনগণের আদালতে হবে।
কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, মঙ্গলবার নয়া দিগন্তসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে হামলা করা হয়েছে। এ হামলা এমন এক সময় করা হয়েছে, যখন আমরা সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে রাজপথে দাঁড়িয়েছি। ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেছে, অথচ সরকার বা পুলিশ প্রশাসন হামলার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অবিলম্বে যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তা হলে দেশের মানুষ বুঝে নেবে এ হামলার পেছনে কারা জড়িত। তিনি বলেনÑ মত ও পথের ভিন্নতা থাকতেই পারে; এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। সরকার স্বাধীন গণমাধ্যমের কথা বলে, কিন্তু মঙ্গলবার যা ঘটেছে এরপর মনে হয় না তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চায়। দয়া করে জাতিকে বিভক্ত করার কোনো ধরনের চেষ্টা করবেন না।
প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রীকে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান।
তাজমেরী এস এ ইসলাম সমাবেশের সাথে ঢাবি সাদা দলের একাত্মতা জানিয়ে বলেন, একটি কুচক্রিমহল গণমাধ্যমে এ হামলার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা করছে।
মুহাম্মদ বাকের হোসাইন বলেন, বর্তমান সরকার নাকি মানবতাবাদী। যদি তা-ই হয়, তা হলে সরকারের চার বছরে ১৭ সাংবাদিক খুন, ২০০ জন ঘরছাড়া, ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা, নয়া দিগন্ত অফিসে আগুন এবং আমার দেশ পোড়ানো হচ্ছে কেন? তিনি বলেন, সাংবাদিকদের আন্দোলন যদি বড় কোনো রূপ নেয়, তার দায় সরকারের; তখন ‘প্রজন্ম চত্বর’ দিয়ে তা ঠেকানো যাবে না।
ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র কখনো একসাথে চলতে পারে না। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ^াস করে না বলেই এ ধরনের হামলা চালানো হচ্ছে।
আজ সমাবেশ : সংবাদমাধ্যমে ফ্যাসিবাদী হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস কাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
No comments