বাঘা যতীন- স্মরণ by এ্যাড. সিরাজ প্রামাণিক
বাঘা যতীন; একজন বাঙালী বিপ্লবীর নাম। ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লববাদী আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্বের সর্বাধিনায়ক। তিনি বাংলার সশস্ত্র বিপ্লববাদী দল যুগান্তর এবং পরে সকল বিপ্লববাদী দলের প্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন। জার্মানদের সহায়তায় ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর পরিকল্পনার উদ্যোগতাও তিনি।
সেই ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের মহানায়ক বাঘা যতীনের স্বপ্নের সব নাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়ার মাটিতে পোঁতা। দীর্ঘ বছর আগের কিছু স্মৃতি, কিছু চিহ্ন তাঁর বাস্তুভিটায় আজ খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর। ইতোমধ্যে এ মহান বিপ্লবের বাস্তুভিটাসহ বেদখল হয়ে গেছে ২২ বিঘা জমি। যাঁর ভয়ে ব্রিটিশরা কাঁপত, যাঁর কারণে ভারত স্বাধীনতার মূলমন্ত্র তৈরি হলো, তাঁর নিজের বসতভিটার এ অবস্থা! স্বাধীনতা-পরবর্তী বাঘা যতীনের স্বজনেরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করলে তিনি বাঘা যতীনের বাস্তুভিটায় একটি মিলিটারি একাডেমি স্থাপনসহ বেশ কিছু প্রকল্প স্থাপনের কথা বললেও কোন প্রকল্প আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এতদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চরম অনাদর আর অবহেলায় পড়ে থাকা তাঁর বাস্তুভিটা যার সবকিছুই এখন প্রভাবশালীদের দখলে। স্মৃতি বলতে অবশিষ্ট রয়েছে তাঁর নিজ হাতে নির্মিত একটি থিয়েটার ক্লাব ও একটি ফুটবল মাঠ।
শুধু একটি ছোরা দিয়ে একাই একটি বাঘকে হত্যা করতে যিনি সক্ষম হয়েছিলেন সেই বাঘা যতীনের জন্ম ১৮৭৯ সালের ৮ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে। তাঁর পিতার নাম উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মাতার নাম শরৎশশী। যতীনের মা শরৎশশী দেবী ছিলেন স্বভাবকবি। স্বামীর স্বর্গারোহণ, শ্মশান, সংসার প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই বাঘা যতীনকে সাহসী করে তোলার পেছনে তাঁর মা শরৎশশীর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। ১৮৯৯ সালে এই মহীয়সী রমণী ছেলে বাঘা যতীন ও মেয়ে বিনোদবালাকে রেখে মৃত্যুবরণ করেন। মাতার মৃত্যুর পর বোন বিনোদবালা বাঘা যতীনকে মায়ের স্নেহে গড়ে তোলেন। তৎকালীন ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করা শিক্ষিত বোন বিনোদবালাও ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। বাঘা যতীনের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন তাঁর এই বোন বিনোদবালা। যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাঘা যতীন হয়ে ওঠার পেছনে তাঁর মামারা অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে বড় মামা বসন্ত কুমার মুখোপাধ্যায়।
বাঘা যতীনের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে একটা সময় কয়া গ্রাম যেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের দুর্গে পরিণত হয়। বাঘা যতীন সরকারী চাকরিরত অবস্থায় নেপথ্যে অবস্থান করে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতেন। ১৯০৮ সালে কলকাতার মানিকতলায় গোপন বোমার কারখানার নেতাকর্মীরা পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। এসব নেতাকর্মীর নেতা ছিলেন বাঘা যতীন। কিন্তু সরকারী চাকরি করার জন্য তাকে সন্দেহ করত না পুলিশ। ১৯০৮ সালেই বাঘা যতীন শিলিগুড়ি স্টেশনে উচ্চপদস্থ ইংরেজ সামরিক কর্মচারীদের প্রহার করেন। বেশ ক’টি কারণে বাঘা যতীনের ওপর পুলিশের সন্দেহ ক্রমেই বাড়তে থাকে। হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে জড়ানো হয়। পনেরো মাস মামলা চলার পর সরকার তাকেসহ আরও ৪৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হলে ১৯১১ সালের এপ্রিল মাসে বাঘা যতীন মুক্তি পান। সহকর্মী অতুল কৃষ্ণ ঘোষের কাছে নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে বাঘা যতীন আন্দোলনের কৌশল পাল্টিয়ে ফেলেন। যশোরে এসে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। আর এই ব্যবসার আড়ালে বিপ্লবের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ১৯১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর এই অকুতোভয় মহাবিপ্লবী বাঘা যতীন মৃত্যুবরণ করেন। বাঘা যতীনের চেতনায় লালিত হয়ে গোটা ভারতবর্ষে অসংখ্য বাঘা যতীনের জন্ম হয় এবং এক পর্যায়ে এই অসংখ্য বাঘা যতীনের আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশরা এদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়।
E-mail : seraj.pramanik@gmail.com
শুধু একটি ছোরা দিয়ে একাই একটি বাঘকে হত্যা করতে যিনি সক্ষম হয়েছিলেন সেই বাঘা যতীনের জন্ম ১৮৭৯ সালের ৮ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে। তাঁর পিতার নাম উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মাতার নাম শরৎশশী। যতীনের মা শরৎশশী দেবী ছিলেন স্বভাবকবি। স্বামীর স্বর্গারোহণ, শ্মশান, সংসার প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই বাঘা যতীনকে সাহসী করে তোলার পেছনে তাঁর মা শরৎশশীর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। ১৮৯৯ সালে এই মহীয়সী রমণী ছেলে বাঘা যতীন ও মেয়ে বিনোদবালাকে রেখে মৃত্যুবরণ করেন। মাতার মৃত্যুর পর বোন বিনোদবালা বাঘা যতীনকে মায়ের স্নেহে গড়ে তোলেন। তৎকালীন ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করা শিক্ষিত বোন বিনোদবালাও ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন। বাঘা যতীনের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন তাঁর এই বোন বিনোদবালা। যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাঘা যতীন হয়ে ওঠার পেছনে তাঁর মামারা অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে বড় মামা বসন্ত কুমার মুখোপাধ্যায়।
বাঘা যতীনের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে একটা সময় কয়া গ্রাম যেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের দুর্গে পরিণত হয়। বাঘা যতীন সরকারী চাকরিরত অবস্থায় নেপথ্যে অবস্থান করে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতেন। ১৯০৮ সালে কলকাতার মানিকতলায় গোপন বোমার কারখানার নেতাকর্মীরা পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। এসব নেতাকর্মীর নেতা ছিলেন বাঘা যতীন। কিন্তু সরকারী চাকরি করার জন্য তাকে সন্দেহ করত না পুলিশ। ১৯০৮ সালেই বাঘা যতীন শিলিগুড়ি স্টেশনে উচ্চপদস্থ ইংরেজ সামরিক কর্মচারীদের প্রহার করেন। বেশ ক’টি কারণে বাঘা যতীনের ওপর পুলিশের সন্দেহ ক্রমেই বাড়তে থাকে। হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে জড়ানো হয়। পনেরো মাস মামলা চলার পর সরকার তাকেসহ আরও ৪৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হলে ১৯১১ সালের এপ্রিল মাসে বাঘা যতীন মুক্তি পান। সহকর্মী অতুল কৃষ্ণ ঘোষের কাছে নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে বাঘা যতীন আন্দোলনের কৌশল পাল্টিয়ে ফেলেন। যশোরে এসে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। আর এই ব্যবসার আড়ালে বিপ্লবের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ১৯১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর এই অকুতোভয় মহাবিপ্লবী বাঘা যতীন মৃত্যুবরণ করেন। বাঘা যতীনের চেতনায় লালিত হয়ে গোটা ভারতবর্ষে অসংখ্য বাঘা যতীনের জন্ম হয় এবং এক পর্যায়ে এই অসংখ্য বাঘা যতীনের আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশরা এদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়।
E-mail : seraj.pramanik@gmail.com
No comments