আত্মপরিচয় সন্ধান by সুভাষ সাহা
আমি কে? এই আমার আমিকে আবিষ্কারের চেষ্টার যেন শেষ নেই। আমার ধর্মীয় পরিচয়টা প্রধান, নাকি এই ভূখণ্ডের অধিবাসী হিসেবে বাঙালি, মারমা, ত্রিপুরি ইত্যাদি পরিচয় অগ্রগণ্য? আমি যখন এ নিবন্ধটি লিখছি তখনও বাংলাদেশে এ বিতর্কটির সুরাহা হয়নি। আমাদের মধ্যবিত্ত এখনও আত্মপরিচয় সন্ধানের ঘোরের মধ্যে রয়েছে।
সে এখনও বুঝতে অভ্যস্ত হতে পারছে না, স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গরিষ্ঠ (ধর্মীয় হোক আর ভাষাভিত্তিকই হোক) জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদ ফ্যাসিবাদই শিরোধার্য করে টিকে থাকতে পারে, অন্যথায় নয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রে জাতীয়তাবাদ হিসেবে বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ_ কোনোটিই সামগ্রিক আমাকে ও আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে না। বাঙালি জাতীয়তাবাদ যেমন এ দেশের অধিবাসী ভিন্ন জাতিগুলোকে অস্বীকার বা ডিগ্রেডেড করে, তেমনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আড়ালে ইসলামী জাতীয়তাবাদ অন্য ধর্মাবলম্বীদের সমমর্যাদার নিক্তিতে বিচার করার সুযোগ সংকুচিত করে। এ সংকীর্ণ ধ্যান-ধারণায় মগ্ন থেকে আমরা স্বাধীনতার ৪১ বছরের মাথায়ও বাঙালি আর বাংলাদেশিতে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত থেকে আমার প্রকৃত আমিকে অন্ধকারে আটকে রেখেছি। এ কারণেই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে আমাদের রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে উঠতে দেখা যায় না। অথচ ভারতের ক্ষেত্রে এ জাতীয়তার প্রশ্নটি তাদের মতো করে সমাধান হয়েছে বলে তারা বিভিন্ন সময় মারাত্মক সমস্যার আবর্তে নিমজ্জিত হওয়া সত্ত্বেও জাতি হিসেবে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। যদিও ভারতে এখন পর্যন্ত জাতি সমস্যার গণতান্ত্রিক সমাধান পরিপূর্ণভাবে অর্জিত হয়েছে বলা যাবে না, তবুও তারা রাষ্ট্রগতভাবে একটি সর্বভারতীয় জাতীয়তাবোধ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এর উদাহরণ আমরা প্রায়ই ব্যবহার করে থাকি।
ভারত থেকে একদিন আগে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হলেও এর আত্মপরিচয় অন্বেষা এখনও শেষ হয়নি। এখন পাকিস্তানিদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম ঐতিহ্য আপনার বলে ভাবতে দেখা যায়। অথচ তারা যে আরব দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক এক সমৃদ্ধ ভিন্ন ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ সে চিন্তাটি তাদের মধ্যে প্রবল হয়ে দেখা দেয় না। এ কারণে পাকিস্তানে রাষ্ট্র গঠন এখনও সম্পন্ন হয়েছে বলা যাবে না। ফলে পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সিন্ধি, বালুচ, পশতুসহ অপরাপর জাতিগুলো নিজেদের প্রান্তিক বলে মনে করে। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই শতাংশের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘুর কী অবর্ণনীয় অবস্থার মধ্যে সেখানে বসবাস করতে হয় তা মাঝে মধ্যে গণমাধ্যমে খবরের কল্যাণে অনেকেই এখন জানেন। আমরা জাতীয়তাবাদ নিয়ে এখনও বিভক্ত। রাষ্ট্র গঠনের মহামূল্যবান কাজটি থেকে দূরে আমাদের রাজনৈতিক নেতা ও অধিপতি শ্রেণীর অবস্থান। তাই কোনটি জাতীয় স্বার্থ, কোনটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও গোষ্ঠীস্বার্থ_ এগুলোর মধ্যে রাষ্ট্র বিভাজন রেখা তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে রাষ্ট্র এবং সরকার তথা রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য রেখা মুছে যাচ্ছে। আবার কখনও কখনও নির্দিষ্ট শ্রেণী বা গোষ্ঠী নিজেদের মতো করে রাষ্ট্রকে নিজের এখতিয়ারভুক্ত জ্ঞানে পরিচালনার উদ্যোগ নেয়। এ জন্য সব শ্রেণী ও জাতির সম্মিলিত অভিব্যক্তির মূর্তরূপ হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে আমরা দেখতে পাই না। অথচ নিজেদের ঘাটতিগুলো পূরণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে এটিই হলো স্বীকৃত ও উত্তম পন্থা। আমরা পারব কি বাঙালি এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দৈত্য আমাদের ঘাড় থেকে নামিয়ে ফেলতে?
আমাদের অগি্নঝরা সময়ে এখানে কর্মরত জেনারেল খাদিম রাজার মতো প্রায় সব পাকিস্তানি জেনারেল এ ভূখণ্ডের মানুষকে, বিশেষ করে বাঙালিদের মনে করতেন হাভাতে, রুগ্ণ, অলস, অকর্মণ্য, হল্লাকারী হিসেবে। শেষ পর্যন্ত আমরা প্রমাণ করেছি, শৌর্য-বীর্যেও আমরা তাদের থেকে অনেক এগিয়ে। মা সরস্বতী (শিক্ষা) ও লক্ষ্মী (ব্যবসা)_ উন্নতির এ দুটিই মোক্ষম অস্ত্রকে হাতিয়ার করতে পারলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব। তবে এ জন্য রাষ্ট্রকে সব জাতি, ধর্মের সম্মিলিত অভিব্যক্তির মূর্তরূপ হয়ে উঠতে
হবে। আমি কে_ এ প্রশ্নের উত্তর তখন মিলবে।
ভারত থেকে একদিন আগে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হলেও এর আত্মপরিচয় অন্বেষা এখনও শেষ হয়নি। এখন পাকিস্তানিদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম ঐতিহ্য আপনার বলে ভাবতে দেখা যায়। অথচ তারা যে আরব দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক এক সমৃদ্ধ ভিন্ন ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ সে চিন্তাটি তাদের মধ্যে প্রবল হয়ে দেখা দেয় না। এ কারণে পাকিস্তানে রাষ্ট্র গঠন এখনও সম্পন্ন হয়েছে বলা যাবে না। ফলে পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সিন্ধি, বালুচ, পশতুসহ অপরাপর জাতিগুলো নিজেদের প্রান্তিক বলে মনে করে। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় দুই শতাংশের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘুর কী অবর্ণনীয় অবস্থার মধ্যে সেখানে বসবাস করতে হয় তা মাঝে মধ্যে গণমাধ্যমে খবরের কল্যাণে অনেকেই এখন জানেন। আমরা জাতীয়তাবাদ নিয়ে এখনও বিভক্ত। রাষ্ট্র গঠনের মহামূল্যবান কাজটি থেকে দূরে আমাদের রাজনৈতিক নেতা ও অধিপতি শ্রেণীর অবস্থান। তাই কোনটি জাতীয় স্বার্থ, কোনটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও গোষ্ঠীস্বার্থ_ এগুলোর মধ্যে রাষ্ট্র বিভাজন রেখা তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে রাষ্ট্র এবং সরকার তথা রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য রেখা মুছে যাচ্ছে। আবার কখনও কখনও নির্দিষ্ট শ্রেণী বা গোষ্ঠী নিজেদের মতো করে রাষ্ট্রকে নিজের এখতিয়ারভুক্ত জ্ঞানে পরিচালনার উদ্যোগ নেয়। এ জন্য সব শ্রেণী ও জাতির সম্মিলিত অভিব্যক্তির মূর্তরূপ হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে আমরা দেখতে পাই না। অথচ নিজেদের ঘাটতিগুলো পূরণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে এটিই হলো স্বীকৃত ও উত্তম পন্থা। আমরা পারব কি বাঙালি এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দৈত্য আমাদের ঘাড় থেকে নামিয়ে ফেলতে?
আমাদের অগি্নঝরা সময়ে এখানে কর্মরত জেনারেল খাদিম রাজার মতো প্রায় সব পাকিস্তানি জেনারেল এ ভূখণ্ডের মানুষকে, বিশেষ করে বাঙালিদের মনে করতেন হাভাতে, রুগ্ণ, অলস, অকর্মণ্য, হল্লাকারী হিসেবে। শেষ পর্যন্ত আমরা প্রমাণ করেছি, শৌর্য-বীর্যেও আমরা তাদের থেকে অনেক এগিয়ে। মা সরস্বতী (শিক্ষা) ও লক্ষ্মী (ব্যবসা)_ উন্নতির এ দুটিই মোক্ষম অস্ত্রকে হাতিয়ার করতে পারলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব। তবে এ জন্য রাষ্ট্রকে সব জাতি, ধর্মের সম্মিলিত অভিব্যক্তির মূর্তরূপ হয়ে উঠতে
হবে। আমি কে_ এ প্রশ্নের উত্তর তখন মিলবে।
No comments