রুজিনার ফিরে আসা-অশ্রুপাতের অধিকার
বাঙালির হৃদয় ভেজানো উপন্যাস দেবদাস শেষ করেছিলেন শরৎচন্দ্র এ প্রত্যাশা করে_ 'মরণে ক্ষতি নাই কিন্তু ... মরিবার সময় যেন কাহারও এক ফোঁটা চোখের জল দেখিয়া সে (যে কোনো মৃত্যুপথযাত্রী) মরিতে পারে।' এক মাস আগে মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার ও মুন্সীগঞ্জে দাফন হওয়া লাশটি সেদিক থেকে ভাগ্যবতীই বটে।
মৃত্যুর সময় না হোক, দাফনের সময় অনেক অশ্রু ও আহাজারি তার সঙ্গী হয়েছিল। তখন গজারিয়ার টেঙ্গারচর গ্রামের গৃহবধূ রুজিনার লাশ বলে সেটিকে শনাক্ত করেছিলেন তার বাবা-মা। বুধবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, আসল রুজিনার খোঁজ পাওয়া গেছে। তিনি বেঁচে আছেন। জীবিত রুজিনাকে আরেক দফা কান্না ও অশ্রুর মধ্য দিয়ে বরণ করেছেন বাবা ও তার স্বজন। এ আনন্দের মধ্যে রুজিনার স্বামী পক্ষের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া হত্যা মামলাটি হয়তো কাঁটার মতো খচখচ করবে। তবে আশা করা যায় রুজিনার ফিরে আসার মধ্য দিয়ে দু'পক্ষের বিভেদ রেখা দেরিতে হলেও ঘুচে যাবে। যে কারণে একজন গৃহবধূ সংসার থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, তারও সুরাহা করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। গত এক মাসের নানা অঘটন থেকে শিক্ষা নিয়ে কাউকেই না জানিয়ে লুকিয়ে থাকার মতো অবিমৃষ্যকারিতাও রুজিনা আর করবে না ধারণা করা যায়। মধুরেণ সমাপয়েতে থানা ও আদালতের সহযোগিতা মিলবে নিশ্চয়ই। তাই বলে রুজিনা কাহিনীর পর্দা নামিয়ে ফেলা উচিত হবে না। যে নারীকে রুজিনা হিসেবে দাফন করা হয়েছে, তার পরিচয় এবং মৃত্যুর কারণ ও প্রতিকার সন্ধান ছাড়া সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব শেষ হয় কীভাবে? আমরা আশা করি, যে এলাকায় লাশটি পাওয়া গিয়েছিল, সেই মেঘনা থানার পুলিশ সদস্যরা তৎপর হবেন। দেশে আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। দাফন হওয়া লাশটির ডিএনএসহ আনুষঙ্গিক আলামত পরীক্ষা এখনও সম্ভব। সে ক্ষেত্রে গাফিলতি হয় কি-না সেটা লক্ষ্য রাখার বিষয়। কোন মায়ের বুক খালি হয়েছে_ সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হলে তা শনাক্ত করা অসম্ভব নয়। রুজিনার স্বজনরাও এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী হতে পারেন। এভাবে একটি জীবনের প্রতিকারহীন প্রস্থান মেনে নেওয়া যায় না। যদি দুর্ঘটনা কারণেও মৃত্যু হয়ে থাকে, তার জন্য দু'ফোঁটা অশ্রু ফেলার অধিকার নিশ্চয়ই স্বজন-পরিজনের রয়েছে।
No comments