মোবাইল বদলে দিচ্ছে জীবন ও জগত- অনুবাদ : এনামুল হক
মোবাইল ফোন আমাদের নিত্যসঙ্গী। আমাদের প্রাণ। মোবাইল ছাড়া আমাদের এক মুহূর্ত চলে না। এমনকি ঘুমুতে যাওয়ার সময়ও আমরা মোবাইলকে পাশে রাখি। সবখানেই, সব জায়গায় রয়েছে মোবাইলের সদম্ভ উপস্থিতি। শুধু কথা বলা নয়, হাজারো কাজে আজ ব্যবহার হচ্ছে মোবাইল।
এভাবে মুঠোফোন আমাদের চারপাশের জগৎকে বদলে দিচ্ছে এবং সেই সঙ্গে বদলাচ্ছে আমাদেরকেও এমনকি আমাদের রোমান্সের ধারাও। টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ কাহিনী অবলম্বনে এই লেখাটি তৈরি।
(শেষাংশ)
মোবাইল প্রযুক্তির সুযোগে পুলিশ যে কোন ব্যক্তির ডিজিটাল জীবনে চুপিসারে ঢুকে পড়তে পারছে। যখনই কেউ স্মার্ট ফোন দিয়ে টেক্সট পাঠাচ্ছে, টুইট করছে, কেনাকাটা করছে, ছবি তুলছে এবং আর যা কিছু করছে সব নখদর্পণে চলে আসার সুযোগ ঘটছে পুলিশের। তারা প্রয়োজন হলে এবং ইচ্ছা করলেই যে কোন মোবাইল কোম্পানির রেকর্ডপত্র ঘেঁটে মোবাইল ব্যবহারকারীর কলরেকর্ড ও অন্যান্য তথ্য পেয়ে যাচ্ছে। এভাবে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বহু অপরাধীকে ধরা সম্ভব হয়ে উঠেছে। যেসব অপরাধ উদ্ঘাটনে বছরের পর বছর সময় লেগে যেত মোবাইলের ডাটা ঘেঁটে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে সে রহস্য উন্মোচন করা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে একটি তথ্য দেয়া যেতে পারে। আমেরিকায় আগে পলাতক ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে গড়ে ৪২ দিন সময় লাগত। মোবাইল কোম্পানিগুলোর বদৌলতে আজ তা ২ দিনে নেমে এসেছে। ২০১১ সালে সে দেশের ফেডারেল রাজ্য ও স্থানীয় পর্যায়ের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ১৩ লাখ সেলফোন ট্র্যাকিং ডাটা চেয়েছে। এসব ট্র্যাকিং অবশ্য আরেক প্রশ্নেরও জন্ম দিয়েছে। তা হলো ব্যক্তি গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ।
ক্যারিয়ার আই নামে একটি মার্কিন কোম্পানি নাকি ১৫ কোটি ফোনে এমন সফট্্ওয়্যার বসিয়েছে যে এর সাহায্যে ব্যবহারকারীর কথাবার্তা, কলের বিবরণ বা ইতিহাস, ওয়েবের ব্যবহার এবং কোথায় কোথায় কি বিষয়বস্তু নিয়ে বিচরণ করা হয়েছে সবই তাঁর জ্ঞাত সম্মতি ছাড়াই জানা যাবে। ক্যারিয়ার আইকিউ যদিও বলেছে যে তারা এসব ডাটা রেকর্ড বা মজুদ বা সম্প্রচার করে না, শুধু কার্যকারিতা পরিমাপ করার জন্যই ব্যবহার করে তথাপি এর দ্বারা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হবার যথেষ্ট সুযোগ থাকে। দৃষ্টান্ত দিয়েই বলা যাক, আমেরিকান স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীদের অর্ধেকই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেন করে থাকে। তারা কত টাকা তুলছে বা জমা করছে এটা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ছাড়া অন্য কোন কোম্পানির জানা কি অসঙ্গত নয়?
এ যেন সুইস আর্মি নাইফ
সেলফোন আজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বহুমুখী ব্যবস্থার উপযোগী সুইস আর্মি নাইফের মতো। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ হলো এবারের মার্কিন নির্বাচন। সে নির্বাচনে সেলফোনের এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। চার বছর আগে মার্কিন নির্বাচনে টুইটারের ব্যবহার তেমন ছিল না। ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৪ কোটিরও কম। চার বছর আগে স্মার্ট ফোন বহুলাংশে ছিল এক পেশাগত বিলাসিতা। আজ কার্যত প্রত্যেক আমেরিকানের শুধু যে মোবাইল ফোন আছে তা-ই নয়, তারা এতে উত্তরোত্তর হারে অনলাইন ব্যবহার করছে।
এবারের মার্কিন নির্বাচন উপলক্ষে মোবাইল ফোন এমনভাবে হাজির হবে যে বিশেষ বিশেষ বোতাম টিপলে নির্দিষ্ট এলাকার ভোটার রেজিস্ট্রেশন ফর্ম, পাওয়া যাবে, ভোটারের নাম-ঠিকানা পাওয়া যাবে, ভোটারের কাছে টেক্সট পাঠিয়ে সরাসরি ক্যানভাস করা যাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্যানভাস করার দরকার হবে না। এভাবে মোবাইলের ডিজিটাল প্রযুক্তি পাল্টে দিয়েছে রাজনৈতিক প্রচারাভিযানের ধারা। তথ্যের প্রসার, তহবিল সংগ্রহ, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের বক্তব্য প্রচারে টেক্সট ম্যানেজিংয়ের জুড়ি নেই। মোবাইল দিয়ে এবার মার্কিন নির্বাচন সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জানা যাবে।
স্কুলেও মোবাইল
বাচ্চাদের বা স্কুলে পড়া ছেলেমেয়েদের মোবাইল ব্যবহার করতে দেয়া উচিত কি উচিত নয় এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে ১২ বছরের আগে মোবাইল ব্যবহার করতে না দেয়াই সঙ্গত বলে মনে করে অধিকাংশ বাবা-মা। অনেক স্কুলে মোবাইল আনা নিষিদ্ধ। পশ্চাত্যে, বিশেষত আমেরিকায় অর্ধেকেরও বেশি স্কুলে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ। তবে কতিপয় স্কুলে এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। সেখানে ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ফোন বা ট্যাবলেট আনার সুযোগ দেয়া হয়েছে ক্লাসের পাঠক্রমে ব্যবহার করার জন্য অন্য কোন কাজে নয়। এই মোবাইল ফোনের সাহায্যে তারা স্কুল নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারে। তবে তা শুধু শিক্ষকের অনুমতি নিয়েই করতে হবে।
মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকায় ছাত্রদের অনেক পরিশ্রম বেঁচে গেছে। আগে যে প্রশ্নের সমাধান পাওয়ার জন্য ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা ঘাঁটতে হতো এখন তার দরকার হচ্ছে না। এখন মোবাইলের বোতাম টিপে সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে বের করে আনতে পারছে সে উত্তর। প্রযুক্তির অপব্যবহার হয় কিনা সেটা দেখা এখন স্কুল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।
জীবন রক্ষায় মোবাইল
সস্তা মোবাইল ফোনও যে জীবনরক্ষায় কত বড় ভূমিকা রাখতে পারে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আফ্রিকার উগান্ডা। সেখানে স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থা বেশ শোচনীয়। প্রায় সাড়ে তিন কোটি লোকের জন্য হাসপাতাল আছে মাত্র ১৩১। ডাক্তারের সংখ্যা অপ্রতুল। শিশুরা ম্যালেরিয়াসহ নিরাময়যোগ্য রোগে মারা যাচ্ছে চিকিৎসার অভাবে।
এ অবস্থায় সরকার ও বিভিন্ন এনজিও সমস্যাটা অন্যভাবে সমাধানের উপায় নিয়েছে এবং সেখানেই আসছে মোবাইলের ভূমিকা। ম্যালেরিয়া রোগটিকে আর্টেমিসিনিনভিত্তিক বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে (এসিটি) নিরাময় করা যায়। কিন্তু স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে প্রায়শই এটা পাওয়া যায় না। সেটা ওষুধের স্বল্পতার কারণে নয় বরং সরবরাহের চরম অব্যবস্থার কারণে।
উগান্ডায় হাসপাতালের অভাব থাকতে পারে। কিন্তু মোবাইল ফোনের নেই। প্রতি তিনজন উগান্ডাবাসীর একজনের মোবাইল আছে এবং সেই একটাও একাধিক লোক ব্যবহার করে। এগুলো স্মার্ট ফোন নয়। তবে এর দ্বারা টেক্সট বা ম্যাসেজ পাঠানো যেতে পারে। এটাই এক মস্ত বড় ব্যাপার। ইউনিসেফের নেতৃত্বে আয়োজিত এই উদ্যোগে স্বাস্থ্যকর্মীরা কোথায় রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে এবং ওষুধের কেমন অভাব সে সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ বিবরণ মোবাইলে ম্যাসেজ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে তাৎক্ষণিক পাঠিয়ে দিচ্ছে যা আগে কাগজপত্রে লিখে ডাকযোগে পাঠানো হতো এবং সময়ও লাগত যথেষ্ট। কিন্তু মোবাইল টেক্সটসের বদৌলত অতিদ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং রোগীদের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। মোবাইল টেক্সটের দ্বারা শুধু কর্তৃপক্ষ পর্যায়ে যোগাযোগই নয়, জনসাধারণকেও এ ব্যাপারে সচেতন করা এবং তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
চিকিৎসায় মোবাইল ফোন
হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ডাক্তাররা মেডিক্যাল রেকর্ড সংরক্ষণ ও চিকিৎসার ব্যাপারে ডেস্কটপ কম্পিউটারের ওপর উত্তরোত্তর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন বেশ আগে থেকেই। আজ সেই ডেক্সটপ কম্পিউটারের স্থান দখল করে নিচ্ছে তারবিহীন যন্ত্র যেমন আইপ্যাড। দেখা গেছে যে আইপ্যাড এসব প্রতিষ্ঠানের কাজের অবস্থা ও রোগীর পরিচর্যা উভয়ের দ্রুত উন্নতি ঘটাতে পারে। আইপ্যাড পকেটে রাখার উপযোগী করে কোথাও কোথাও ডাক্তারদের এপ্রোনও বানানো হয়েছে।
স্মার্ট ফোনও চিকিৎসার ধারা বদলে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ডের অধ্যাপক ও টক্সিকোলজিস্ট ড. জন হালামকার কথাই ধরা যাক। বছরের তিন শ’ দিনই বিভিন্ন কেস সম্পর্কে স্মার্ট ফোনে তাঁর মতামত চাওয়া হয় যখন যে জায়গায় তিনি থাকুন না কেন স্রেফ আইফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি রোগীর অবস্থা চিহ্নিত করতে এবং চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ডা. হালামকারের দৃষ্টান্ত আজ অন্যরাও অনুসরণ করতে শুরু করেছে।
(শেষাংশ)
মোবাইল প্রযুক্তির সুযোগে পুলিশ যে কোন ব্যক্তির ডিজিটাল জীবনে চুপিসারে ঢুকে পড়তে পারছে। যখনই কেউ স্মার্ট ফোন দিয়ে টেক্সট পাঠাচ্ছে, টুইট করছে, কেনাকাটা করছে, ছবি তুলছে এবং আর যা কিছু করছে সব নখদর্পণে চলে আসার সুযোগ ঘটছে পুলিশের। তারা প্রয়োজন হলে এবং ইচ্ছা করলেই যে কোন মোবাইল কোম্পানির রেকর্ডপত্র ঘেঁটে মোবাইল ব্যবহারকারীর কলরেকর্ড ও অন্যান্য তথ্য পেয়ে যাচ্ছে। এভাবে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে বহু অপরাধীকে ধরা সম্ভব হয়ে উঠেছে। যেসব অপরাধ উদ্ঘাটনে বছরের পর বছর সময় লেগে যেত মোবাইলের ডাটা ঘেঁটে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে সে রহস্য উন্মোচন করা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে একটি তথ্য দেয়া যেতে পারে। আমেরিকায় আগে পলাতক ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে গড়ে ৪২ দিন সময় লাগত। মোবাইল কোম্পানিগুলোর বদৌলতে আজ তা ২ দিনে নেমে এসেছে। ২০১১ সালে সে দেশের ফেডারেল রাজ্য ও স্থানীয় পর্যায়ের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ১৩ লাখ সেলফোন ট্র্যাকিং ডাটা চেয়েছে। এসব ট্র্যাকিং অবশ্য আরেক প্রশ্নেরও জন্ম দিয়েছে। তা হলো ব্যক্তি গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ।
ক্যারিয়ার আই নামে একটি মার্কিন কোম্পানি নাকি ১৫ কোটি ফোনে এমন সফট্্ওয়্যার বসিয়েছে যে এর সাহায্যে ব্যবহারকারীর কথাবার্তা, কলের বিবরণ বা ইতিহাস, ওয়েবের ব্যবহার এবং কোথায় কোথায় কি বিষয়বস্তু নিয়ে বিচরণ করা হয়েছে সবই তাঁর জ্ঞাত সম্মতি ছাড়াই জানা যাবে। ক্যারিয়ার আইকিউ যদিও বলেছে যে তারা এসব ডাটা রেকর্ড বা মজুদ বা সম্প্রচার করে না, শুধু কার্যকারিতা পরিমাপ করার জন্যই ব্যবহার করে তথাপি এর দ্বারা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হবার যথেষ্ট সুযোগ থাকে। দৃষ্টান্ত দিয়েই বলা যাক, আমেরিকান স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীদের অর্ধেকই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেন করে থাকে। তারা কত টাকা তুলছে বা জমা করছে এটা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ছাড়া অন্য কোন কোম্পানির জানা কি অসঙ্গত নয়?
এ যেন সুইস আর্মি নাইফ
সেলফোন আজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বহুমুখী ব্যবস্থার উপযোগী সুইস আর্মি নাইফের মতো। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ হলো এবারের মার্কিন নির্বাচন। সে নির্বাচনে সেলফোনের এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। চার বছর আগে মার্কিন নির্বাচনে টুইটারের ব্যবহার তেমন ছিল না। ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৪ কোটিরও কম। চার বছর আগে স্মার্ট ফোন বহুলাংশে ছিল এক পেশাগত বিলাসিতা। আজ কার্যত প্রত্যেক আমেরিকানের শুধু যে মোবাইল ফোন আছে তা-ই নয়, তারা এতে উত্তরোত্তর হারে অনলাইন ব্যবহার করছে।
এবারের মার্কিন নির্বাচন উপলক্ষে মোবাইল ফোন এমনভাবে হাজির হবে যে বিশেষ বিশেষ বোতাম টিপলে নির্দিষ্ট এলাকার ভোটার রেজিস্ট্রেশন ফর্ম, পাওয়া যাবে, ভোটারের নাম-ঠিকানা পাওয়া যাবে, ভোটারের কাছে টেক্সট পাঠিয়ে সরাসরি ক্যানভাস করা যাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্যানভাস করার দরকার হবে না। এভাবে মোবাইলের ডিজিটাল প্রযুক্তি পাল্টে দিয়েছে রাজনৈতিক প্রচারাভিযানের ধারা। তথ্যের প্রসার, তহবিল সংগ্রহ, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের বক্তব্য প্রচারে টেক্সট ম্যানেজিংয়ের জুড়ি নেই। মোবাইল দিয়ে এবার মার্কিন নির্বাচন সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জানা যাবে।
স্কুলেও মোবাইল
বাচ্চাদের বা স্কুলে পড়া ছেলেমেয়েদের মোবাইল ব্যবহার করতে দেয়া উচিত কি উচিত নয় এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে ১২ বছরের আগে মোবাইল ব্যবহার করতে না দেয়াই সঙ্গত বলে মনে করে অধিকাংশ বাবা-মা। অনেক স্কুলে মোবাইল আনা নিষিদ্ধ। পশ্চাত্যে, বিশেষত আমেরিকায় অর্ধেকেরও বেশি স্কুলে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ। তবে কতিপয় স্কুলে এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে। সেখানে ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ফোন বা ট্যাবলেট আনার সুযোগ দেয়া হয়েছে ক্লাসের পাঠক্রমে ব্যবহার করার জন্য অন্য কোন কাজে নয়। এই মোবাইল ফোনের সাহায্যে তারা স্কুল নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারে। তবে তা শুধু শিক্ষকের অনুমতি নিয়েই করতে হবে।
মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকায় ছাত্রদের অনেক পরিশ্রম বেঁচে গেছে। আগে যে প্রশ্নের সমাধান পাওয়ার জন্য ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা ঘাঁটতে হতো এখন তার দরকার হচ্ছে না। এখন মোবাইলের বোতাম টিপে সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে বের করে আনতে পারছে সে উত্তর। প্রযুক্তির অপব্যবহার হয় কিনা সেটা দেখা এখন স্কুল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।
জীবন রক্ষায় মোবাইল
সস্তা মোবাইল ফোনও যে জীবনরক্ষায় কত বড় ভূমিকা রাখতে পারে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আফ্রিকার উগান্ডা। সেখানে স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থা বেশ শোচনীয়। প্রায় সাড়ে তিন কোটি লোকের জন্য হাসপাতাল আছে মাত্র ১৩১। ডাক্তারের সংখ্যা অপ্রতুল। শিশুরা ম্যালেরিয়াসহ নিরাময়যোগ্য রোগে মারা যাচ্ছে চিকিৎসার অভাবে।
এ অবস্থায় সরকার ও বিভিন্ন এনজিও সমস্যাটা অন্যভাবে সমাধানের উপায় নিয়েছে এবং সেখানেই আসছে মোবাইলের ভূমিকা। ম্যালেরিয়া রোগটিকে আর্টেমিসিনিনভিত্তিক বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে (এসিটি) নিরাময় করা যায়। কিন্তু স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে প্রায়শই এটা পাওয়া যায় না। সেটা ওষুধের স্বল্পতার কারণে নয় বরং সরবরাহের চরম অব্যবস্থার কারণে।
উগান্ডায় হাসপাতালের অভাব থাকতে পারে। কিন্তু মোবাইল ফোনের নেই। প্রতি তিনজন উগান্ডাবাসীর একজনের মোবাইল আছে এবং সেই একটাও একাধিক লোক ব্যবহার করে। এগুলো স্মার্ট ফোন নয়। তবে এর দ্বারা টেক্সট বা ম্যাসেজ পাঠানো যেতে পারে। এটাই এক মস্ত বড় ব্যাপার। ইউনিসেফের নেতৃত্বে আয়োজিত এই উদ্যোগে স্বাস্থ্যকর্মীরা কোথায় রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে এবং ওষুধের কেমন অভাব সে সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ বিবরণ মোবাইলে ম্যাসেজ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে তাৎক্ষণিক পাঠিয়ে দিচ্ছে যা আগে কাগজপত্রে লিখে ডাকযোগে পাঠানো হতো এবং সময়ও লাগত যথেষ্ট। কিন্তু মোবাইল টেক্সটসের বদৌলত অতিদ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং রোগীদের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। মোবাইল টেক্সটের দ্বারা শুধু কর্তৃপক্ষ পর্যায়ে যোগাযোগই নয়, জনসাধারণকেও এ ব্যাপারে সচেতন করা এবং তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
চিকিৎসায় মোবাইল ফোন
হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ডাক্তাররা মেডিক্যাল রেকর্ড সংরক্ষণ ও চিকিৎসার ব্যাপারে ডেস্কটপ কম্পিউটারের ওপর উত্তরোত্তর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন বেশ আগে থেকেই। আজ সেই ডেক্সটপ কম্পিউটারের স্থান দখল করে নিচ্ছে তারবিহীন যন্ত্র যেমন আইপ্যাড। দেখা গেছে যে আইপ্যাড এসব প্রতিষ্ঠানের কাজের অবস্থা ও রোগীর পরিচর্যা উভয়ের দ্রুত উন্নতি ঘটাতে পারে। আইপ্যাড পকেটে রাখার উপযোগী করে কোথাও কোথাও ডাক্তারদের এপ্রোনও বানানো হয়েছে।
স্মার্ট ফোনও চিকিৎসার ধারা বদলে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ডের অধ্যাপক ও টক্সিকোলজিস্ট ড. জন হালামকার কথাই ধরা যাক। বছরের তিন শ’ দিনই বিভিন্ন কেস সম্পর্কে স্মার্ট ফোনে তাঁর মতামত চাওয়া হয় যখন যে জায়গায় তিনি থাকুন না কেন স্রেফ আইফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি রোগীর অবস্থা চিহ্নিত করতে এবং চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ডা. হালামকারের দৃষ্টান্ত আজ অন্যরাও অনুসরণ করতে শুরু করেছে।
No comments