শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস কতটা বাস্তবায়ন হবে? by মো. তৌহিদুল ইসলাম
ব হির্বিশ্বে বাংলাদেশের যে কয়টি জিনিস নিয়ে গর্ব করা যায় বুয়েট তার মধ্যে অন্যতম। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে দিয়েছে অনেক কিছু। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিস্ময়কর সাফল্য ও নিত্যনতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে এ দেশের মানুষের মাথা উঁচু করেছে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের এই বিচরণক্ষেত্রটি।
অনেক বিখ্যাত প্রকৌশলীর পদচারণায় মুখর ছিল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা। সর্বশেষ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রথম স্বরূপ ইভিএম তৈরি ছিল এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসাধারণ এক পদক্ষেপ। এভাবে বাংলাদেশের জন্য প্রতিষ্ঠানটির অবদান অনেক। কিন্তু এত সাফল্য, এত আবিষ্কার, এত যে অবদান তা আজ এক শক্তিশালী চ্যালেঞ্জের মুখে। দুঃখজনক হলেও সত্য, অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো এখানেও চলছে অরাজকতা আর অস্থিরতা। সমাধানের শত চেষ্টা যেন আজ দেয়ালে মাথা কুটে মরছে।শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের দেওয়া কিছু আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার অবসান হয়ে কিছুটা আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। কিন্তু আশ্বাস বাস্তবায়নের অবস্থা ও সামগ্রিক পরিস্থিতির নিরিখে, বাংলাদেশের অন্যতম এই বিদ্যাপীঠে কখন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না।
এখন প্রশ্ন হলো, শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসই-বা কী ছিল, আর সেই আশ্বাসেরই-বা কতটুকু বাস্তবায়ন হলো? ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষক সমিতির একটি প্রতিনিধি দলকে রাতে তার বাসভবনে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানান। এরপর ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর বুয়েট ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার কথা থাকলেও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দলটি ওই দিন বিকেলে সচিবালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হয়। এ দুটি আলোচনার পর শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। তার দেওয়া আশ্বাসের মধ্যে ছিল প্রোভিসিকে সত্বর বুয়েট থেকে প্রত্যাহার করা, যে কোনো ধরনের একাডেমিক ও প্রশাসনিক হয়রানি রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রশাসনিক রদবদল, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা দুটি প্রত্যাহার, ক্যাম্পাস ও হলগুলোয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভিসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণ।
এ আশ্বাসগুলোর মধ্যে প্রথম পাঁচটি দাবি বাস্তবায়ন হলে কেবল ক্লাসে যাবেন, এমন সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষার্থীরা। অবশ্য পরে প্রোভিসিকে পদ থেকে অব্যাহতি, মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা ১৫ সেপ্টেম্বর ক্লাসে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সেই জন্য নতুন একাডেমিক ক্যালেন্ডারও প্রণয়ন করা হয়েছে।
কিন্তু এখনও দাবি-দাওয়া পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় অনেকেই এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দাবি_ যেখানে আন্দোলন হয়েছে ভিসি ও প্রোভিসিকে বুয়েট থেকে অপসারণের, সেখানে দাবি না আদায় করে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে প্রতিনিধিরা এই বলে আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন এটা চলমান প্রক্রিয়া। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কিছুটা সময় লাগবে। আর আমাদের সেশনজটের কথা চিন্তা করে ক্লাসে ফিরে যাওয়া উচিত।
কথা হচ্ছে, যেখানে ভিসির বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের প্রথম দিকে শিক্ষামন্ত্রী এ আন্দোলনকে অযৌক্তিক বলে আখ্যা দিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যেখানে কিছুদিন আগেও বুয়েটে আন্দোলনকারীদের হুমকি দিলেন তাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের প্রাণের দাবি বাস্তবায়ন হবে, তা কতটুকু আশা করা যায়? তার ওপর বুয়েট ক্যাম্পাসে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ বহিরাগতদের নিয়ে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে ভিসি ও প্রোভিসির ওপর অনাস্থা এনে বুয়েট আইআইসিটির পরিচালক ড. লুতফুল কবির, পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সি্নগ্ধা আফসানা ৩ মাসের জন্য ছুটিতে গেছেন। এ ছাড়া আন্দোলনে সামনের দিকে থাকা আরও কয়েকজন শিক্ষকও ছুটিতে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
তাই মনে হচ্ছে, বুয়েট সংকট বুঝি আরও ঘনীভূত হচ্ছে। একদিকে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, অন্যদিকে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের বেপরোয়া আচরণ ও প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপে গড়িমসি বুয়েট সমস্যার সমাধানে আদৌ কোনো ইতিবাচক ফল কি আমরা পাব?
স মো. তৌহিদুল ইসলাম
পুরকৌশল বিভাগ, বুয়েট
touhid.buet@gmail.com
No comments