জনস্বার্থে মনিটরিংয়ের প্রয়োজনীয়তা by একেএম সালাহ্উদ্দিন
দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে মনিটরিং এখন সময়ের দাবি। মনিটরিংয়ের জন্য আপাতদৃষ্টিতে লোকবল নিয়োগ দিয়ে বাড়তি অর্থব্যয়ের কথা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এই লোকবল নিয়োগের মাধ্যমে একদিকে যেমন নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়, অন্যদিকে রাষ্ট্র বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তার সামগ্রিক আয় অর্জন করতে সক্ষম হয়, তদুপরি সাধারণ জনগণ নানা হয়রানি থেকে মুক্তি পায়।
যানবাহনের টিকিটের ক্ষেত্রে মনিটরিংয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রতিনিয়তই মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছে। মানুষ যাতায়াতের জন্য বাস, ট্রেন, লঞ্চ, স্টিমার প্রভৃতি যানবাহন ব্যবহার করে থাকে। অথচ বাস ও লঞ্চের টিকিটে কালোবাজারি একটি নিত্যদিনের ব্যাপার। এ ছাড়া দেশের মহাসড়কগুলো যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধির ফলে মানুষ বাসের বিকল্প হিসেবে ট্রেনে যাতায়াতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এতে করে ট্রেনে প্রায় সময়ই ভিড় লেগে থাকে। অন্যদিকে কালোবাজারির থাবা থেকে মুক্ত নয় ট্রেনের টিকিটও। বিগত কয়েক দশকে সড়ক-মহাসড়কগুলোর কিছুটা উন্নয়ন করা হলেও রেলওয়ের উন্নয়ন বা আধুনিকায়ন খুব একটা হয়নি বললেই চলে। অনেক সময় ট্রেনের বাড়তি টিকিট বিক্রি হলেও প্রতিবছরই এ খাতে কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারকে। এ ছাড়া রেলস্টেশনের জায়গা অবৈধভাবে দখল, ট্রেনের জ্বালানিসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি চুরির খবর প্রায়ই বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় পাওয়া যায়। রেলের এ অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে মনিটরিং জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারে।
বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং আবশ্যক। 'বাজার সিন্ডিকেট' শব্দটির সঙ্গে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত। এই বাজার সিন্ডিকেটের মতো দুষ্টচক্রে জিম্মি আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ। লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির বাজারে সাধারণ মানুষের টিকে থাকাটাই আজকাল দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু স্বার্থান্বেষী ও লোভী ব্যবসায়ী দেশের প্রচলিত আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অবৈধভাবে বিভিন্ন দ্রব্য মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আসছে। তাই বাজার স্থিতিশীল রাখতে ও জনগণের ন্যায্যমূল্যে দ্রব্য ক্রয় নিশ্চিত করতে বাজার মনিটরিং চালু করতে হবে।
মনিটরিংয়ের প্রয়োজনীয়তা শিক্ষাক্ষেত্রেও কোনো অংশে কম নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাজ ঠিকমতো করছে কি-না তা যেমন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মনিটর করবে, তেমনি প্রতিষ্ঠানপ্রধান তার প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কাজ মনিটর করবেন। আজকাল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় যে অরাজকতা হচ্ছে তার জন্যও মনিটরিং প্রয়োজন।
কৃষি খাতেও মনিটরিং কার্যকর করা দরকার। সম্প্রতি সমকালে 'পাথর হওয়া সারই নিচ্ছে সরকার' শিরোনামে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাতে স্পষ্ট যে, নিম্নমানের ইউরিয়া সার চীন ও ভিয়েতনামে স্থান না পেলেও একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে তা বাংলাদেশের বাজারে ছাড়া হচ্ছে। সরকারের ভর্তুকি বাবদ ৯১ কোটি টাকার পাশাপাশি মোট গচ্চা যাচ্ছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। কৃষিপ্রধান আমাদের এ দেশে দেশীয় অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি এই কৃষি। তাই কৃষিতে বিপর্যয় মানে দেশের অর্থনীতির বিরাট বিপর্যয়। কৃষির এ বিপর্যয় রোধ করতে মনিটরিং কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক তথা জাতীয় স্বার্থে মনিটরিংয়ের ভূমিকা অপরিসীম। এর মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জনসাধারণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে এবং সমাজ তথা রাষ্ট্র থেকে অনিয়ম, দুর্নীতি ইত্যাদির অবসান ঘটবে।
স একেএম সালাহ্উদ্দিন : শিক্ষার্থী শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
jojsau@gmail.com
No comments