আনুশকা শর্মার মধুর সময়

আদিত্য চোপড়ার ‘রাব দে বানা দি জোড়ি’তে তানি সাহনি নামের চরিত্রটিতে অভিনয়ের সুবাদে বলিউডে অভিষেক হয়। তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্র সমালোচক তারান আদর্শ মন্তব্য করেছিলেন, ‘আনুশকা শাহরুখ খানের মতো একজন উঁচু মানের অভিনেতার বিপরীতে তার আত্মবিশ্বাসী অভিনয় দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই ছবিতে তার


অভিনীত চরিত্রটিকে এতটাই সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেছেন যে মনেই হবে না আপনার অভিনয় জগতে তার সদ্য পদচারণা হয়েছে।’ যদিও কখনই তিনি ভাবেননি একজন অভিনয় শিল্পী হবেন। ইচ্ছে ছিল মডেলিং জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। তাই খুব অল্প সময়েই তিনি নাম লিখিয়েছিলেন সেরাদের তালিকায়। কাজ করেছেন লাকমে ফ্যাশন উইক ২০০৭, সিল্ক এ্যান্ড শাইন, হুইস্পার, নাথাল জুয়েলারি এবং ফিয়াট পালিও-র মতো বিশ্ববিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের সঙ্গে। যাই হোক পুরো নাম তার আনুশকা শর্মা। জন্মেছেন বেঙ্গালুরুতে ১৯৮৮ সালে এক সেনা কর্মকর্তার পরিবারে। দুই ভাই-বোনের ছোট আনুশকা লেখাপড়া করেছেন আর্মি স্কুলে এবং স্নাতক সম্পন্ন করেছেন বেঙ্গালুরুর মাউন্ট কার্নেল কলেজ থেকে। এরপর আর পড়াশোনা করেননি। চলে আসেন মুম্বাই শহরে। একটাই ভাবনা, মডেলিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে হবে। কিন্তু সেটি আর বেশি দিন করা হয়ে ওঠেনি। ২০০৮ সালে আদিত্য চোপড়ার রাব দে বানা দি জোড়িতে অভিনয় করলেন নায়ক শাহরুখ খান। ছবি মুক্তির সময় আনুশকার শঙ্কায় বুকে দুরু দুরু কাঁপুনী। ভয়, এত বড় অভিনেতার বিপরীতে দর্শক তাকে গ্রহণ করবে তো!! কিন্তু তার শঙ্কা কেটে গেল যখন দর্শক তার অভিনয়ে মুগ্ধ হলেন এবং তাকে সাদরে গ্রহণ করলেন। ছবি হলো ব্লকবাস্টার হিট। ঝুলিতে ভরেন বেস্ট ডেব্যু ফিমেল হিসেবে অপ্সরা ফিল্ম এ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারস গিল্ড এ্যাওয়ার্ডস্। আর পিছনে ফিরে তাকানো নয়। হয়ে উঠলেন বলিউডের নতুন রানী। এরপর যশ রাজের আরেকটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হলেন। ছবির নাম বদমাশ কোম্পানি। তার বিপরীতে অভিনয় করলেন শহীদ কাপুর। আবারও সুঅভিনয়ের স্বাক্ষর রাখলেন। এবারও চলচ্চিত্র সমালোচক তারান আদর্শ তার সম্পর্কে মন্তব্য করতে পিছপা হননি। এবার তিনি আনুশকার অভিনয়কে বলিউডে এক নতুন বিপ্লবের সঙ্গে তুলনা করলেন এবং পর্দায় শহীদ এবং আনুশকার প্রেম রসায়নকে দুর্দান্ত বলে আখ্যায়িত করলেন। এরপর যখন ২০১০ সালে তার অভিনীত ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ মুক্তি পেল তখন বলিউডের বাতাসে তাকে এবং এই ছবির নায়ক রণবীর সিংকে নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। যদিও দর্শকশ্রোতা পর্দার মতো বাস্তবেও তাদের প্রেম কাহিনীকে দারুণভাবে নিয়েছিল। আর ছবিও হয়েছিল ব্লকবাস্টার হিট। সাথে সাথে ঝুলিতে পড়ে ইন্ডিয়ান অস্কার নামে খ্যাত আইফা এ্যাওয়ার্ড ২০১১-এর মতো আরও একটি পুরস্কার। একদিকে রণবীরের সাথে রোমান্স, অন্যদিকে অভিনয়Ñদুটোই যখন সমান তালে চলছিল ঠিক তখনই পাতিওয়ালা হাউজের (২০১১) মতো একটি ফ্লপ ছবিতে অভিনয় যেন তার ক্যারিয়ারকে একটু বিচলিত করে তুলেছিল। যদিও ছবিটিতে তার সাবলীল অভিনয় দর্শক ও সমালোচক মহলে যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তাই এবার তিনি ঢালাওভাবে ছবি না করে একটু দেখেশুনে বেছে বেছে করতে শুরু করলেন। ঠিক ঐ বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত আরেকটি ছবি লেডিস ভার্সেস রিকি বাল তার অভিনয় ক্যারিয়ারকে আবারও স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনল। আর এ বছর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির তালিকায় আছে এ যশ চোপড়া রোমান্স। ছবিটি আগামী ১৩ নভেম্বর মুক্তি পেতে যাচ্ছে। এছাড়াও হাতে যেসব ছবি রয়েছে সেগুলো হলো মাতরু কি বিজলী কা মানডোলা, বোম্বে ভেলভেট এবং রাজকুমার হিরাণীর পিকে (২০১৩)। সুন্দরী এই তন্বী মডেল ও অভিনেত্রী মূলত নিরামিষভোজী। ডিম, পরটা এবং সবজি খেতে তিনি খুবই ভালবাসেন। আর পানীয় হিসেবে পছন্দ করেন ডাবের পানি। পোশাক হিসেবে পছন্দ করেন পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ এবং শর্ট স্কার্ট ও টপস্। সুযোগ পেলেই গাড়ি নিয়ে লং ড্রাইভে চলে যান। যাই হোক সম্প্রতি বলিউডের বাতাসে আনুশকা ও রণবীরের সম্পর্কে চিড় ধরেছে এমনই এক গুঞ্জন চলছে। ঘটনা সত্য বা মিথ্যা যাই হোক না কেন অভিনেত্রী হিসেবে তিনি যে এখন পর্যন্ত সফল তা কিন্তু নির্দ্বিধায় বলা যায়।

No comments

Powered by Blogger.