হলমার্কের কোনো প্রতিষ্ঠানই আয়কর বিবরণী দেয় না by জাহাঙ্গীর শাহ
বহুল আলোচিত হলমার্ক গ্রুপের মাত্র ১৪টি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব শুধু কাগজে-কলমেই। বাস্তব অস্তিত্ব খুঁজে পাননি কর কর্মকর্তারা। যদিও হলমার্ক গ্রুপ দাবি করছে, তাদের ৭০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এ ছাড়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ গত সপ্তাহে বলেছেন, সোনালী ব্যাংক থেকে দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা নিলেও এর তুলনায় ২০ গুণ বেশি সম্পদ তাঁর আছে। জানা গেছে, কয়েক বছরে হলমার্ক গ্রুপের নামে বস্ত্র খাতের ১৪টি প্রতিষ্ঠান কর অঞ্চল-৭-এর কোম্পানি সার্কেল থেকে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান কোনো বছরই বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দেয়নি। এই কোম্পানি সার্কেলে ‘এইচ’ আদ্যক্ষর দিয়ে নামের শুরু যেসব কোম্পানি, সেসব প্রতিষ্ঠানের টিআইএন দেওয়া হয়।
আয়কর অধ্যাদেশের ৭৫(১বি) ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক কোম্পানির অবশ্যই আয়কর বিবরণী দাখিল করতে হবে। এর মানে হলো, কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে যদি টিআইএন নেওয়া হয়, প্রতিষ্ঠানটি চালু না হলেও প্রতিবছর আয়কর বিবরণী জমা দিতে হবে। আয় না হলেও খরচ দেখিয়ে আয়কর বিবরণী জমা দিতে হবে।
সম্প্রতি হলমার্ক গ্রুপের অর্থ কেলেঙ্কারির কথা আলোচনায় এলে গত সপ্তাহে এনবিআর থেকে এর প্রতিষ্ঠান ও মালিকদের আয়-ব্যয়ের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতেই হলমার্কের কাগুজে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পায় এনবিআর।
হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদের ব্যক্তিগত আয়কর ফাঁকিও খতিয়ে দেখছে এনবিআর। ইতিমধ্যে কর অঞ্চল-৭-এর সার্কেল-১৩৪ থেকে এই দুজনের বিগত তিন বছরের বার্ষিক আয়কর বিবরণীর ফাইল তলব করে এনেছে এনবিআরের নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগ।
আয়কর বিবরণী জমা না দেওয়ায় হলমার্ক গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয়, সম্পদের পরিমাণ জানতে পারেননি এনবিআরের কর্মকর্তারা। তাঁদের মতে, এর ফলে হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকৃত অর্থে কী পরিমাণ লভ্যাংশ নিয়েছেন, তা-ও নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বিগত তিন বছরে হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ আয়ের বিপরীতে তিন কোটি নয় লাখ টাকা কর দিয়েছেন। আর তাঁর স্ত্রী হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম আলোচ্য সময়ে সেই আয়ের বিপরীতে তিন কোটি ৫৯ লাখ টাকা কর দেন। তাঁদের দুজনের আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে বিপুল অঙ্কের স্থায়ী আমানত (এফডিআর) থেকে প্রাপ্ত সুদের টাকা।
এনবিআর সূত্রে আরও জানা গেছে, এর আগে তানভীর মাহমুদ তাঁর বার্ষিক আয়কর বিবরণীতে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা বেশ কিছু এফডিআর দেখাননি। বিষয়টি ধরার পর গত অর্থবছরে এসব এফডিআরের সুদের বিপরীতে পৌনে দুই কোটি টাকার বেশি আয়কর আদায় করে এনবিআর।
এ সম্পর্কে গতকাল বুধবার এনবিআরের চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, হলমার্ক গ্রুপ সম্পর্কে তদন্ত করার জন্য সরকারের ওপর মহল থেকে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার জন্য এনবিআর চাইলে যেকোনো করদাতার ফাইল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারে। এটা এনবিআরের নিয়মিত কাজের অংশ।
এদিকে, হলমার্ক গ্রুপ রপ্তানি আয় গোপন করেও কর ফাঁকি দিয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কোটি টাকার রপ্তানি বিলের ওপর অর্থ তোলার সময় প্রতিষ্ঠানটি প্রাপ্য উৎসে কর দেয়নি। গত অর্থবছরে উৎসে করের টাকা সমন্বয় করার সময় বিষয়টি উদ্ঘাটিত হলে প্রায় দেড় কোটি টাকা আদায় করে এনবিআর। সে সময় সব রপ্তানিকারকের ওপর রপ্তানিমূল্যের দশমিক ৫০ শতাংশ উৎসে কর দেওয়ার বিধান ছিল। আর উৎসে করই রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
No comments