'আলোর ফাঁদে ঠগবাজি' by রাজীব আহমেদ
শুধু ফরমালিন কিংবা অন্য কোনো ভেজাল দিয়ে পোষাচ্ছে না। লোক ঠকাতে তাই আরো অভিনব ও প্রযুক্তি-নির্ভর কৌশল ব্যবহার করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। আলোর ফাঁদ বানিয়ে তাঁরা প্রতারণা করছেন ক্রেতাদের সঙ্গে। তাই চকচকে রুপালি মাছ কিনে বাসায় ফিরে দেখা যাচ্ছে, সেগুলো আসলে ফ্যাকাসে ও পচা।
তাহলে বাজারে কেন চকচক করছিল? এখানেই লুকানো প্রতারণার মূল রহস্য। মাছের দোকানে আলোর ফাঁদে পা দিয়েছিলেন ক্রেতা। মাছ আরো চকচকে ও টাটকা দেখানোর কৌশল হিসেবে ব্যবসায়ীরা নানাভাবে কাজে লাগান মাথার ওপর ঝোলানো বৈদ্যুতিক বাতিগুলোকে। ওই সব বাতির ওপরে লাগানো থাকে বিভিন্ন রঙের কাগজ। কাগজের আলো প্রতিফলিত হয়ে চকচক করে মাছগুলো। তবে সব ধরনের মাছের জন্য একই আলো ব্যবহৃত হয় না। মাছের রং ভেদে বদলে যায় কাগজের রং। যেমন সবুজাভ মাছের ওপর ঝোলানো বাতির গায়ে থাকে সবুজ রঙের কাগজ। আর রূপালি ধরনের মাছের ওপরে থাকে সাদা কাগজে মোড়ানো বাতি।
ব্যবসায়ীদের এই অভিনব কৌশলে বিভ্রান্ত হয়ে মাছ বাজারে প্রায়ই ধরা খাচ্ছেন ক্রেতারা। যাঁরা কম খেয়াল করে মাছ কিনছেন, তাঁরাই সহজে এ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। মোটামুটি হিসাবে একেকটি বাজারে এমন ৫০টি বাতি ব্যবহার করা হলে সারা দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে লাখ লাখ বাতি। অসৎ উদ্দেশ্যে দিনভর এসব বাতি জ্বালিয়ে রেখে মূল্যবান বিদ্যুতেরও অপচয় করা হচ্ছে। আবার বাজারে ব্যবহৃত বাতিগুলো বিদ্যুৎসাশ্রয়ীও নয়। ব্যবহার হচ্ছে সনাতন বাতি, যার বিদ্যুৎ খরচ অনেক বেশি।
গত সোমবার মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে দুই থেকে চারটি বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। একেকটির মাঝখানে দূরত্ব মাত্র এক থেকে দুই ফুট। মাছের থালার এক থেকে দুই ফুট ওপরে এসব বাতি জ্বলতে থাকায় মাছগুলো দেখাচ্ছে উজ্জ্বল আর দারুণ চকচকে। বিভিন্ন ধরনের মাছের ওপরে বিভিন্ন রঙের কাগজে মোড়ানো বাতি। চিংড়ির থালার ওপরে সবুজ বাতি। ইলিশের ওপর সাদা। আবার আইড়, টেংরা ইত্যাদি মাছের থালার ওপর যে বাতি, তার গায়ে হলুদ কাগজের আবরণ।
রাজধানীর আরো কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারের মাছের দোকানগুলো যে পাশে অন্য পাশের তুলনায় সেখানে আলো কম। সেখানে সব সময় রাতের মতো অবস্থা করে রাখা হয়। মানুষের চোখের সমান উচ্চতার নিচে থাকে বৈদ্যুতিক বাতি। ওপরের অন্ধকার থেকে নিচের চকচকে আলোতে থাকা মাছগুলোকে দেখে মনে হয় একেবারে তরতাজা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোনো মাছের বাজারেই পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো প্রবেশের ব্যবস্থা থাকে না। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করেন।
মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের কাঁচাবাজারের একজন মাছ ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেন এত বেশি বাতি ও বিভিন্ন রঙের কাগজ ব্যবহার করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, 'সবাই ব্যবহার করে তাই করি।' সবাই কেন ব্যবহার করে, তা জানতে চাইলে ওই ব্যবসায়ী ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, 'সবাইরে গিয়া জিগান।'
জানা গেছে, বাসি মাছকে তাজা দেখাতে আরো কিছু কৌশল ব্যবহার করেন ব্যবসায়ীরা। এগুলোর একটি হলো রং মেশানো। বিশেষ করে পারশে ও টেংরা মাছে হলুদ রং মেশানো হয়। কখনো মসলার হলুদ অথবা বাসন্তী রং মেশানো হয়। বাসন্তী রং মেশানো হয় মাছ বেশি পচা হলে। মাছের পানিতে লবণ বা ফিটকিরি মেশানোর কৌশল পুরনো। আড়তে অথবা বাজারে এসব মাছ আসার পরপরই তা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়। ওই পানিতে থাকে ফিটকিরি অথবা লবণ। অনেক সময় বরফেও লবণ বা ফিটকিরি ব্যবহার করা হয়।
মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, এ দুটি রাসায়নিক মেশানো হলে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে না। তবে লবণ ব্যবহার করাটা ক্ষতিকর। কারণ, এটি ব্যবহার করলে নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়, যা মানবদেহের ক্ষতি করে। মাছ তাজা দেখাতে পশুর রক্তও ব্যবহার করা হয়। সচরাচর মাছের কানকোর মধ্যে পশুর রক্ত মেখে তা রক্তিম দেখানো হয়।
এ প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর মাছ ও কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন শিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি চাই না, এ দেশের মানুষ কোনো পণ্য কিনে ক্ষতিগ্রস্ত বা প্রতারিত হোক। এ জন্য ব্যবসায়ীদের বহুবার আহ্বান জানিয়েছি এসব না করার জন্য। যারা এসব করে তাদের প্রতি আমার ঘৃণা ও ধিক্কার জানাই।'
ক্রেতাদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আনোয়ার হোসেন শিকদার বলেন, তাজা মাছ কিনতে হলে ধরে দেখতে হবে- সেটির গায়ে লোদ (লালার মতো পিচ্ছিল) আছে কি না। পচা মাছে লোদ থাকে না। আর বড় মাছ কেনার সময় সেটির কানকোর মধ্যে কৃত্রিমভাবে কোনো রক্ত মেশানো হয়েছে কি না, তা পরখ করে দেখতে হবে। রক্ত মেশানো হলে মাছটি তাজা নয় বুঝতে হবে। বেলে মাছের মতো দ্রুত পচনশীল মাছ সকালে বাজার থেকে কিনে দ্রুত ফ্রিজে রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ওই সব মাছ সকাল ৮টার পর তাজা থাকে না।
ব্যবসায়ীদের এই অভিনব কৌশলে বিভ্রান্ত হয়ে মাছ বাজারে প্রায়ই ধরা খাচ্ছেন ক্রেতারা। যাঁরা কম খেয়াল করে মাছ কিনছেন, তাঁরাই সহজে এ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। মোটামুটি হিসাবে একেকটি বাজারে এমন ৫০টি বাতি ব্যবহার করা হলে সারা দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে লাখ লাখ বাতি। অসৎ উদ্দেশ্যে দিনভর এসব বাতি জ্বালিয়ে রেখে মূল্যবান বিদ্যুতেরও অপচয় করা হচ্ছে। আবার বাজারে ব্যবহৃত বাতিগুলো বিদ্যুৎসাশ্রয়ীও নয়। ব্যবহার হচ্ছে সনাতন বাতি, যার বিদ্যুৎ খরচ অনেক বেশি।
গত সোমবার মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে দুই থেকে চারটি বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। একেকটির মাঝখানে দূরত্ব মাত্র এক থেকে দুই ফুট। মাছের থালার এক থেকে দুই ফুট ওপরে এসব বাতি জ্বলতে থাকায় মাছগুলো দেখাচ্ছে উজ্জ্বল আর দারুণ চকচকে। বিভিন্ন ধরনের মাছের ওপরে বিভিন্ন রঙের কাগজে মোড়ানো বাতি। চিংড়ির থালার ওপরে সবুজ বাতি। ইলিশের ওপর সাদা। আবার আইড়, টেংরা ইত্যাদি মাছের থালার ওপর যে বাতি, তার গায়ে হলুদ কাগজের আবরণ।
রাজধানীর আরো কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারের মাছের দোকানগুলো যে পাশে অন্য পাশের তুলনায় সেখানে আলো কম। সেখানে সব সময় রাতের মতো অবস্থা করে রাখা হয়। মানুষের চোখের সমান উচ্চতার নিচে থাকে বৈদ্যুতিক বাতি। ওপরের অন্ধকার থেকে নিচের চকচকে আলোতে থাকা মাছগুলোকে দেখে মনে হয় একেবারে তরতাজা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোনো মাছের বাজারেই পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো প্রবেশের ব্যবস্থা থাকে না। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করেন।
মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের কাঁচাবাজারের একজন মাছ ব্যবসায়ীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেন এত বেশি বাতি ও বিভিন্ন রঙের কাগজ ব্যবহার করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, 'সবাই ব্যবহার করে তাই করি।' সবাই কেন ব্যবহার করে, তা জানতে চাইলে ওই ব্যবসায়ী ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, 'সবাইরে গিয়া জিগান।'
জানা গেছে, বাসি মাছকে তাজা দেখাতে আরো কিছু কৌশল ব্যবহার করেন ব্যবসায়ীরা। এগুলোর একটি হলো রং মেশানো। বিশেষ করে পারশে ও টেংরা মাছে হলুদ রং মেশানো হয়। কখনো মসলার হলুদ অথবা বাসন্তী রং মেশানো হয়। বাসন্তী রং মেশানো হয় মাছ বেশি পচা হলে। মাছের পানিতে লবণ বা ফিটকিরি মেশানোর কৌশল পুরনো। আড়তে অথবা বাজারে এসব মাছ আসার পরপরই তা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়। ওই পানিতে থাকে ফিটকিরি অথবা লবণ। অনেক সময় বরফেও লবণ বা ফিটকিরি ব্যবহার করা হয়।
মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, এ দুটি রাসায়নিক মেশানো হলে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে না। তবে লবণ ব্যবহার করাটা ক্ষতিকর। কারণ, এটি ব্যবহার করলে নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়, যা মানবদেহের ক্ষতি করে। মাছ তাজা দেখাতে পশুর রক্তও ব্যবহার করা হয়। সচরাচর মাছের কানকোর মধ্যে পশুর রক্ত মেখে তা রক্তিম দেখানো হয়।
এ প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর মাছ ও কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন শিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি চাই না, এ দেশের মানুষ কোনো পণ্য কিনে ক্ষতিগ্রস্ত বা প্রতারিত হোক। এ জন্য ব্যবসায়ীদের বহুবার আহ্বান জানিয়েছি এসব না করার জন্য। যারা এসব করে তাদের প্রতি আমার ঘৃণা ও ধিক্কার জানাই।'
ক্রেতাদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আনোয়ার হোসেন শিকদার বলেন, তাজা মাছ কিনতে হলে ধরে দেখতে হবে- সেটির গায়ে লোদ (লালার মতো পিচ্ছিল) আছে কি না। পচা মাছে লোদ থাকে না। আর বড় মাছ কেনার সময় সেটির কানকোর মধ্যে কৃত্রিমভাবে কোনো রক্ত মেশানো হয়েছে কি না, তা পরখ করে দেখতে হবে। রক্ত মেশানো হলে মাছটি তাজা নয় বুঝতে হবে। বেলে মাছের মতো দ্রুত পচনশীল মাছ সকালে বাজার থেকে কিনে দ্রুত ফ্রিজে রাখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ওই সব মাছ সকাল ৮টার পর তাজা থাকে না।
No comments