শরণার্থী সমস্যার সমাধান মিয়ানমারের হাতে- মার্কিন কূটনীতিকদের সফর

যুক্তরাষ্ট্রের চারজন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য সফর শেষে ঢাকায় এসে জানতে চেয়েছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ব্যাপারে আমাদের সরকারের নীতিগত অবস্থান কী? সফরকারী দলের একজন, অ্যালিসিয়া আয়ার্সের ভাষ্যমতে, তাঁদের ঢাকা সফরের মূল উদ্দেশ্য দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সহায়তাদানের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার সমাধান করা।


যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দৃশ্যত এমন বলে মনে হচ্ছে যে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেন বাংলাদেশের তরফ থেকে দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সহায়তা পায়। আমাদের বক্তব্য: মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের শরণার্থীর মর্যাদা দীর্ঘস্থায়ী হলে সমস্যার সমাধান ঘটবে না, বরং তা আরও ঘনীভূত হতে পারে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমান জনগোষ্ঠী সেখানকার সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর আক্রমণের শিকার হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ তাদের অনুপ্রবেশে বাধা দেয় না। এভাবে বিভিন্ন সময়ে প্রচুরসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সর্বশেষ মাস দুয়েক আগে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে আক্রমণ শুরু হলে তাদের অনেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে, কাউকে কাউকে সীমান্তরক্ষীরা বাধা দেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জানা আছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনে দেশটির সরকার নির্বিকার ভূমিকা পালন করে। এমন অভিযোগও পাওয়া যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্ষা না করে বরং আক্রমণকারীদেরই সহযোগিতা করেন। মিয়ানমার সরকার তার নিজের নাগরিকদের এক বিরাট অংশের নিরাপদ জীবনযাপনের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব পালন করে না। উল্টো এমন আচরণ করে, যেন রোহিঙ্গা মুসলমানেরা দেশত্যাগে বাধ্য হয় বা তাদের বিতাড়িত করার অপতৎপরতায় পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখে।
রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হবে, আর অসহায় মানুষগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করবে, বাংলাদেশ তাদের মানবিক সহায়তা দান করে চলবে—এই পরিস্থিতি যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মেনে নেয়, তা হলে শরণার্থী সমস্যার স্থায়ী সমাধান হওয়া কীভাবে সম্ভব? এর স্থায়ী সমাধান বলতে আমরা বুঝি স্বদেশ-স্বগৃহ থেকে বিতাড়িত মানুষকে তার হারানো দেশ-গৃহ ফিরিয়ে দেওয়া, তার শরণার্থীর মর্যাদা মোচন করা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
বাংলাদেশ সব সময়ই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি মানবিক। কিন্তু বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বিপুল জনসংখ্যার ভারে জর্জরিত; ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে সামাজিক শৃঙ্খলা ও সংহতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, ভূমিবিষয়ক বিরোধ ক্রমেই বাড়ছে। যদিও আমরা জাতি-গোষ্ঠীগত বিভেদ থেকে অনেকটাই মুক্ত, তবু পার্বত্য অঞ্চলে স্থায়ী ও বহিরাগত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রীতির অভাব রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়ও সেই অঞ্চলে, এটি অবশ্যই একটি বাড়তি সমস্যা। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথ খোঁজা উচিত, জিইয়ে রাখার নয়।

No comments

Powered by Blogger.