অপরাধীর শাস্তি হয় না-যথাযথ বিচার সুনিশ্চিত হোক
মিরপুর শাহ আলী থানার লালটেক এলাকায় ব্যবসায়ী বসিরউদ্দিন হত্যা মামলার আসামি লেদু জামিনে বেরিয়ে এসে গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তাকে বলেছে, 'স্যার, আমি চলে এসেছি। এ দেশে এখন খুন করলে কিছু হয় না।' লেদু হত্যাকাণ্ড নিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিল।
তার জবানবন্দি অনুসারে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামতও উদ্ধার করা হয়েছিল। এ মামলার প্রধান আসামি আজগর হাজীসহ কয়েকজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বিজ্ঞ আদালত তাদের জামিন না-মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন।
লেদুর উক্তি আইন ও বিচারপ্রক্রিয়াকে অস্বীকার করার ঘোষণা। দেশের বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল। বাংলাদেশে এখনো ব্রিটিশের তৈরি আইন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বহাল রয়েছে। সে আইন অনুসারে দেশের একজন নাগরিককে আদালত নিরপরাধ বলে বিবেচনা করে থাকেন। কোনো ব্যক্তিকে অপরাধী বলে প্রমাণ করার দায়িত্বটি তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারী সংস্থার ওপর ন্যস্ত থাকে। এ ক্ষেত্রে আদালত সরকারের সংস্থাটিকেও একটি পক্ষ বলে বিবেচনা করেন। স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হলে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অব্যাহতি প্রদান করেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিচার চলাকালে মানবিক কারণে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালত জামিন মঞ্জুর করে থাকেন। ফলে আইন ও বিচারের এসব মানবিক গুণের সুযোগ নিয়ে থাকে এক ধরনের অসৎ ব্যক্তি ও আসামিপক্ষের উকিল। আমরা বিচারিক কাজে লক্ষ করি, সব ধরনের আলামত থাকা সত্ত্বেও তদন্তকারী সংস্থার গাফিলতি, কাগজপত্র পেশ ও সাক্ষী হাজির করতে সরকারি সংস্থার অসংগতি ও অদক্ষতার কারণে অনেক সময় অত্যন্ত বিপজ্জনক কোনো আসামিকেও আদালত জামিন দিতে বাধ্য হন। কারণ বিজ্ঞ আদালতকে আইনের ধারা ও বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করতে হয়। সুতরাং একজন অভিযুক্তকে বিচারের জন্য আদালতে সমর্পণ করানো হলে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণাদি এবং সঠিক তদন্তের ব্যবস্থা করাই বাঞ্ছনীয়। আইনের ফাঁকফোকর গলে যদি ভয়ানক অপরাধীরা মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়, তাহলে একদিকে যেমন আইনের শাসন থাকে না, অন্যদিকে অপরাধ উৎসাহিত হয়। আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত, যেকোনো রাষ্ট্র বা সমাজে যদি সবার জন্য উপযুক্ত বিচারপ্রাপ্তির অধিকার সংরক্ষিত থাকে, তাহলে সে সমাজ ও রাষ্ট্র সভ্য হয়ে উঠবেই। অন্যথায় দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা ও উন্নয়ন ব্যাহত হতে বাধ্য। এ ব্যাপারে সরকারের অনেক কিছু করার আছে। দল ও মতের ঊর্ধ্বে থেকে বিচারপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখতে সহায়তা করা, যথাসময়ে যথাযথ আইনের সংশোধনী আনা একটি গণতান্ত্রিক সরকারের অন্যতম প্রধান দায়।
No comments