মালয়েশীয় মানবসম্পদমন্ত্রীর ঘোষণা-বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়া হবে সরকারিভাবে

বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেওয়ার জন্য সরেজমিন পর্যবেক্ষণে আসা মালয়েশীয় মানবসম্পদমন্ত্রী এস সুব্রামানিয়াম বলেছেন, সরকারিভাবেই বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেবে তাঁর দেশ। শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর তাঁর আশা, শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানির দরজা খুলে যাবে।


গতকাল বুধবার রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর দপ্তরে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন তাঁরা। বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের মালয়েশিয়ার মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সুব্রামানিয়াম আরো বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর প্রধান কারণ- এ দেশের রিত্রুদ্ধটিং এজেন্সির প্রতারণা। এ নিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটে মালয়েশিয়া সরকার আবার বাংলাদেশ থেকে লোক নেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এবার শ্রমিক সরকারিভাবে যাবে বলে উল্লেখ করে সুব্রামানিয়াম বলেন, 'এর আগে দালালের মাধ্যমে লোকজন আমাদের দেশে গিয়ে প্রতারিত হয়েছে। এর জন্যই সরকারিভাবে শ্রমিক নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।'
মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বলেন, 'শ্রমিক রপ্তানি নিয়ে আমরা আজ (বুধবার) প্রাথমিক আলোচনা করেছি। আরো আলোচনার বিষয় রয়েছে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (আজ) আবারও আলোচনা হবে। আর শ্রমিক নিয়োগের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেই বাংলাদেশ উৎস দেশের মযার্দাও পাবে।'
এ সময় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার বাজার তিন বছর ধরে বন্ধ ছিল। এর একমাত্র কারণ প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত লোক পাঠানো। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এবং আমাদের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে এসব ঘটনা ঘটেছে।'
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'এসব অনিয়ম ও দুর্বলতার কারণে মালয়েশিয়া থেকে অবৈধ শ্রমিকদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার কথা। দুটি দেশ ভ্রাতৃপ্রতিম বলে তারা আমাদের প্রতি সুবিবেচনা করেছে। আমাদের দুই লাখ ৬৭ হাজার অবৈধ লোককে তারা বৈধ করেছে। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং নিয়মিত করেছে। আমার তাদের নতুন করে পাসপোর্ট দিচ্ছি।'
মন্ত্রী বলেন, এরই প্রেক্ষাপটে তাঁরা এসেছেন নতুন করে বাজার খুলে দেবেন বলে। অতীতে আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত লোক পাঠিয়েছি এবং তারা অবৈধ অভিবাসী হয়েছেন। এই অতিরিক্ত লোক পাঠানোর মূল কারণ অভিবাসনের অতিরিক্ত ব্যয়। শ্রমিকরা তিন বছর কাজ করেও অভিবাসন ব্যয় তুলতে পারেন না। শ্রমিকরা যাতে অভিবাসন ব্যয় তিন মাসের মধ্যে তুলতে পারেন সেজন্য সরকারিভাবে শ্রমিক পাঠানোর ব্যাপারে দুই পক্ষই একমত হয়েছি। মালয়েশিয়ার সরকার চায়, কোনো রকম মাধ্যম ছাড়া বাংলাদেশ সরকার পূর্ণ নিশ্চিয়তায় লোক দেবে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, 'মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানি এখনই আমরা বেসরকারীকরণ করতে পারছি না। সরকার কি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাবে তা নিয়ে একটি প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। বিএমইটির ৪২টি জেলা অফিস আছে এবং প্রত্যেক জেলায় প্রবাসী ডেস্ক আছে। এরপরও কেউ যদি বলে সরকার পারবে না সেটা ভুল ধারণা। কোনো রিত্রুদ্ধটিং এজেন্সির জেলা পর্যায়ে কোনো অফিস নেই। তাদের শুধুমাত্র অফিস ঢাকায়।
মন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানো নিয়ে ওই দুই দেশের একটি যৌথ কমিটি হবে। প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত হলে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি প্রস্তাব সেদেশে নিয়ে যাবেন এবং তাঁদের দেশের মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেবে। এ মাসের মধ্যে এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এটা হলেই মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানো যাবে।
সমপ্রতি মালয়েশিয়ায় দুই লাখ ৬৮ হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশি কর্মীকে নিবন্ধিত করায় খন্দকার মোশাররফ সে দেশের মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

No comments

Powered by Blogger.