হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ by আর কে চৌধুরী
রাজধানী
থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা যখন ছিল ১০ লাখ
তখন খেলার মাঠের সংখ্যা ছিল অন্তত ৫০। এখন দেড় কোটি মানুষের এই মেগাসিটিতে
খেলার মাঠের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১১-তে। মাঠের অভাবে রাজধানীর শিশুরা
খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গৃহবন্দিত্ব শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশকে
বাধাগ্রস্ত করছে। একসময় রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় ছিল খেলার মাঠ। কালের
বিবর্তনে সেগুলো আজ অপদখলের শিকার। একসময় যেসব মাঠে হতো ফুটবল নিয়ে
শিশু-কিশোরদের অনুশীলন, যেসব মাঠে ঘোরাফেরা করে মুক্ত বায়ু সেবনের সুযোগ
পেত এলাকার মানুষ, সেগুলো হয় অস্তিত্ব হারিয়েছে নতুবা অপদখলের শিকার হয়েছে।
২০০৩ সালে রাজধানীর খেলার মাঠ ও পার্ক বেদখলের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনজীবী
সমিতি হাইকোর্টে একটি রিট করে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের পক্ষ থেকে ২০০৪
সালে একই বিষয়ে রিট হয়। এ দুই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর ৬৮টি খেলার মাঠ
ও পার্কের জন্য সংরক্ষিত জায়গা ১৫ দিনের মধ্যে দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন
হাইকোর্ট। খেলার মাঠ ও পার্কের জন্য সংরক্ষিত জায়গা দখলমুক্ত করার সে আদেশ
যথাযথভাবে পালনে গত ১৪ বছরে কোনো অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। বরং দিন দিন
পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। একের পর এক মাঠ অপদখল হয়ে যাচ্ছে। রাজধানীতে গড়ে ২
লাখ ৩০ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে একটি খেলার মাঠ। পার্কগুলো এমনই
দুরবস্থার শিকার যে তা শিশু-কিশোরদের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।
কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন মাঠ ও
মিনিপার্ক রিকশাভ্যানের গ্যারেজ এবং ট্রান্সপোর্টের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা
হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাজধানীর শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা করা ও সাধারণ
মানুষের মুক্ত বায়ু সেবনের অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে কর্তৃপক্ষীয় নজরদারির
অভাবে। এ বিষয়ে তাদের কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙুক, এমনটি দেখতে চায় নগরবাসী।
শিশুদের জন্য মাঠ ও পার্ক নিশ্চিত করতে দুই সিটি কর্পোরেশন শুধু নয়,
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপও জরুরি। নগরীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা
মতিঝিলে বাংলাদেশ বিমান কার্যালয়সংলগ্ন ডিসিসির ছোট পার্কটি জনসাধারণের
ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ছিল। সেখানে ছিল বেশকিছু গাছ। পার্কের
সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ডিসিসি একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিলে ওই প্রতিষ্ঠান
পার্কের বেশিরভাগ গাছ কেটে ফেলে। পার্কের পশ্চিমাংশ কয়েক ফুট উঁচু করে
মাটি ফেলে চারদিক পাকা করে বাঁধাই করা হয়। পূর্বদিকের বাকি অংশ আগের মতো
নিচুই থেকে যায়। বাঁধাই করা অংশের পশ্চিম প্রান্তের কিছু অংশ আরও উঁচু করে
ফুলের গাছ লাগানো হয়। অনেকের অভিযোগ, সৌন্দর্যবর্ধনের নামে পার্কটির আসল
চেহারা নষ্ট করা হয়েছে। মোহাম্মদপুর শহীদ পার্ক দখল করে রেখেছে ফার্নিচার
ব্যবসায়ীরা। দখল করে সেখানে নানা ধরনের সামগ্রী মজুদ করে রাখা হয়েছে।
মোবাইল কোর্ট এলে দ্রুত মালামাল সরিয়ে নেয়া হয়। মোবাইল কোর্ট চলে গেলে আগের
মতো পার্কটি তারা দখলে নেয়। ইংলিশ রোড পার্কটি এখন ট্রাকস্ট্যান্ড।
পূর্ব-পশ্চিম লম্বালম্বি এ পার্কটির মাঝখানে রাস্তা করে প্রথমে দুইভাগে
বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। পশ্চিম পাশের অংশে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে একটি
মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সহযোগিতায় বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের শর্তে একটি ফোয়ারা
তৈরি করা হয়েছে। ফোয়ারাটি রক্ষার জন্য পার্কের পশ্চিম অংশ গ্রিল দিয়ে ঘিরে
রাখা হয়েছে। সেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন
রাজধানীর খেলার মাঠ ও পার্কগুলো অপদখলমুক্ত করবে, এটাই কাম্য।
আর কে চৌধুরী : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক; মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা
আর কে চৌধুরী : সাবেক চেয়ারম্যান, রাজউক; মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা
No comments