ফের ক্ষমতায় প্রেসিডেন্ট পুতিন
কে
হবেন রাশিয়ায় পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? উত্তর খুঁজতে ভোট দিলেন রাশিয়াবাসীরা।
তবে, অধিকাংশের ধারণা, নিশ্চিতভাবে চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে চলেছেন
ভ্লাদিমির পুতিন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশটির দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট
ভ্লাদিমির পুতিন তার ক্ষমতার মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাড়াতে চলেছেন। ভোট
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুতিনকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য আজ রাশিয়ায় ভোট গ্রহণ
অনুষ্ঠিত হবে বললে কোনও ভুল হবে না। ‘শক্তিমান প্রেসিডেন্ট, শক্তিশালী
রাশিয়া’ স্লোগানে এবার লড়াই করছেন পুতিন। নির্বাচন সামনে রেখে কোনো টিভি
বিতর্কে তিনি অংশ নেননি। টিভিতে দেখানো হয়নি তার নির্বাচনী প্রচারাভিযানের
নতুন কিছু। এরপরও জনমত সমীক্ষাগুলি বলছে, ৭০ শতাংশ ভোট পেতে চলেছেন পুতিন।
পুতিনের এবারের প্রতিদ্বন্দ্বী সাতজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বামপন্থী ধনকুবের
পাভেল গ্রুদিনিন, সাবেক টিভি উপস্থাপক কেসেনিয়া সোবচাক। কিন্তু তাদের কেউই
৮ শতাংশের বেশি ভোট পাবেন না, জনমত সমীক্ষাগুলির আভাস এমনই। পুতিনের
প্রধান বিরোধী আলেক্সেই নাভালনিকে নির্বাচনে প্রার্থিতা করতে দেয়া হয়নি।
নাভালনি তার সমর্থকদের এই নির্বাচন বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রায় দুই
দশক ধরে রাশিয়া শাসন করছেন পুতিন। বিদেশের মাটিতে মস্কোর সোভিয়েত আমলের
হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনাই পুতিনের চ্যালঞ্জ। নির্বাচন সামনে রেখে রাশিয়ার
গণমাধ্যমে পুতিনকে দেখানো হয়েছে এমন এক নেতা হিসেবে, যিনি সোভিয়েত-পরবর্তী
আমলে দেশের জাতীয় গৌরব ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনেছেন। অন্যতম বিশ্বশক্তি
হিসেবে রাশিয়ার ভূমিকা জোরালো করতে চান পুতিন। রক্তক্ষয়ী সিরিয়ার যুদ্ধে
জড়িয়েছেন পুতিন, সমর্থন দিয়ে চলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে।
ব্রিটেনে সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপালকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে
পশ্চিম দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে রাশিয়ার। এ ছাড়া ২০১৬
সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগও রয়েছে রাশিয়ার
বিরুদ্ধে। এ নিয়ে মস্কোর ওপর নতুন করে অবরোধ আরোপ করে ওয়াশিংটন।
তাতে ভোটে
কোনও প্রভাবই পড়বে না বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা। কারণ, পুতিন নিজেকে
আলাদাভাবে গড়ে তুলেছেন। ব্যক্তিত্ব, কাজকর্ম, চিন্তাভাবনায় তিনি বিশ্বের আর
দশজন নেতার মতো নন। জুডোতে তার ব্ল্যাক বেল্ট আছে। তিনি খালি গায়ে ঘোড়ায়
চড়েন। জিম করেন। সাঁতার কাটেন। বিশ্বের গভীরতম হ্রদের তলদেশে যান। শিকার
করেন। তাঁর একটা ‘মাচো-ম্যান’ ভাবমূর্তি আছে। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তির তালিকায় চার বছর ধরে শীর্ষস্থান ধরে
রেখেছেন পুতিন। সমর্থকরা পুতিনকে ‘ত্রাতা’ হিসেবে দেখেন। তাদের দৃষ্টিতে,
রাশিয়ার গৌরব ও ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ পুনরুদ্ধার করেছেন পুতিন। তবে শত্রুর
চোখে পুতিন এক ‘বিপজ্জনক’ লোক। সমালোচকেরা বলেন, প্রকৃত গণতন্ত্র থেকে
রাশিয়াকে বহু দূরে নিয়ে গিয়েছেন পুতিন। তার জায়গায় চালু করেছেন ‘নিজস্ব
গণতন্ত্র’। তিনি সুশাসন থেকে রুশদের বঞ্চিত করে চলছেন। নিজের ক্ষমতাকে সংহত
করার লক্ষ্যে সবকিছুই করতে পারেন তিনি। আর নিজের কাজ জায়েজ করতে তিনি কথিত
জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার করছেন। স্বল্প পরিচিত পুতিনকে কেজিবির উত্তরসূরি
গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির প্রধান করেন ইয়েলৎসিন। তিনি ১৯৯৯ সালের আগস্টে
পুতনিকে প্রধানমন্ত্রী করেন। চেচনিয়ায় যুদ্ধ পরিচালনা করায় পুতিনের
জনপ্রিয়তা বাড়ে। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে ইয়েলৎসিন পদত্যাগ করলে রাশিয়ার
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন পুতিন। ২০০৮ সালে পুতিন তার প্রেসিডেন্টের
মেয়াদের দ্বিতীয় দফা পূর্ণ করেন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ঘনিষ্ঠ
সহচর দিমিত্রি মেদভেদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিজে হন প্রধানমন্ত্রী।
তবে ক্ষমতার লাটাই তার হাতেই থাকে। ২০১২ সালে তিনি ফের প্রেসিডেন্ট হন। এই
দফার মেয়াদ শেষে এবার পুতিনের লক্ষ্য ২০২৪ সাল। ঘরে কিংবা বাইরে, দারুণ
খেলোয়ার পুতিন। তার খেলার মূলমন্ত্র কী? ২০১৫ সালে পুতিনের এক মন্তব্যেই এর
উত্তর রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, লেনিনগ্রাদের (জন্মস্থান) পথঘাট তাকে একটি
বিষয় শিখিয়েছে: ‘লড়াই অনিবার্য হলে প্রথমেই আঘাত হানতে হবে।’
No comments