‘এটা নজির বিহীন, আমরা আদেশ বুঝতে পারিনি ‘
জিয়া
অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম
খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতের পর তার অন্যতম আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল
আবেদীন আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত আমরা বুঝতে পারলাম না কি আদেশ দিলেন।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আমরা জানতে চাই কি আদেশ দিয়েছেন। আমরা আদেশ বুঝতে
পারিনি’। জবাবে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমরা সবকিছু দেখে
আদেশ দিয়েছি’। তখন জয়নুল বলেন, ‘আমরা মেরিটে কোন শুনানি করতে পারিনি’। পরে
প্রধান বিচারপতি বলেন ‘আপনারা মামলার সার-সংক্ষেপ জমা দেন’। তখন জয়নুল সময়
কমিয়ে দেয়ার প্রর্থনা করলে আদালত বলেন ‘দুই সপ্তাহের মধ্যে মামলার সার
সংক্ষেপ জমা দেবেন’। এরপর এডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এটা দেশের সর্বোচ্চ
আদালত আমরা তার নিদের্শ মানতে বাধ্য’। এর পর আদালত আগামী ৮ মে পরবর্তী
তারিখ ধার্য করেন। শুনানী শেষে আদালত থেকে বেরিয়ে জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের
বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারলাম না যে আদালত কি দেখে আদেশ দিলেন। দেশের সর্বোচ্চ
আদালতে কি আদেশ হলো আমরা বুঝতে পারলাম না। এটা নজির বিহীন আদেশ। অতীতে
কখনো দেশের সর্বোচ্চ আদালত এমন আদেশ দেননি’। জয়নুল বলেন, আজ জাতির উদ্দেশে
বলতে চাই, দেশের সর্বোচ্চ আদালত যে আদেশ দিয়েছেন তা অনভিপ্রেত। অতীতে কখনো
এমন আদেশ হয়নি আমরা মর্মাহত। এর আগে আজ ১৮ মার্চ রোববাব দুদকের আইনজীবী
খুরশিদ আলম লিভ টু আপিলের শুনানি শুরু করেন। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল
মাহবুবে আলম শুনানি করেন। এরপর খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী সাবেক
অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানিতে অংশ নেন। প্রধান বিচারপতি
সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে ওই
আবেদনের ওপর শুনানি হয়। আপিল বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি
মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন
হায়দার। গত ১৫ মার্চ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায়
হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ চ্যালেঞ্জ করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষে পৃথক দু’টি
লিভ টু আপিল আবেদন দায়ের করা হয়। উভয় আবেদনেই খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত
করে আপিল বিভাগের দেয়া আদেশের মেয়াদ বৃদ্ধির আরজি জানানো হয়। আবেদনে বলা
হয়েছে, হাইকোর্ট যেসব গ্রাউন্ডে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছে সেসব ক্ষেত্রে
জামিন মঞ্জুর করার সুযোগ নেই। এর আগে গত ১৪ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট
মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন চ্যালেঞ্জ করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল
আবেদন করতে বলেছিলেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের
নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে
হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ রোববার পর্যন্ত স্থগিত করে লিভ টু আপিল করতে
বলেন। একই সাথে আজ ১৮ মার্চ রোববার দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল
শুনানির দিন ধার্য করা হয়। গত ১২ মার্চ চারটি যুক্তি আমলে নিয়ে বিচারপতি এম
ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ জিয়া অরফানেজ
ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন। এ ছাড়া এ সময়ের মধ্যে
আপিল শুনানির জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে পেপারবুক প্রস্তুত করতেও নির্দেশ দেন
আদালত। জামিন আদেশে বলা হয়, সাজার পরিমাণ কম, মামলাটির বিচারিক আদালতের নথি
এসেছে এবং এটির আপিল শুনানির জন্য পেপার বুক তৈরি হয়নি। বিচারিক আদালতে
মামলা চলাকালে তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়েছেন, তিনি জামিনে ছিলেন এবং
জামিনের অপব্যবহার করেননি এবং তার বয়স এবং শারীরিক অসুস্থতার বিষয় বিবেচনায়
নিয়ে জামিন মঞ্জুর করা হলো। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের
শুনানি শেষে বিচারিক আদালতের নথি পৌঁছার পর জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য সময়
নির্ধারণ করেন হাইকোর্ট। ২২ ফেব্রুয়ারি নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে
খালেদা জিয়ার আপিল আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। ওই দিন খালেদা
জিয়ার জরিমানা স্থগিত করে বিচারিক আদালতের নথি ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে
পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়। গত ২০ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন
আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে আপিল দায়ের করা হয়।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ
বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার পরপরই বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত থেকে গ্রেফতার করে পুরান ঢাকার
সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখন কারাগারে আছেন। এ ছাড়া এ
মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক
রহমানসহ অপর চার আসামিকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ ৭১
হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
No comments