নির্বাচনে ৪ শর্ত বিএনপির
চারটি
শর্ত পূরণ হলেই বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। তিনি বলেছেন, শর্তগুলো হচ্ছে-
বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে যে নির্বাচনে দলের নেতৃত্ব দেবেন
খালেদা জিয়া। নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক। প্রধানমন্ত্রী
পদ থেকে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্দলীয় সহায়ক সরকারের অধীনে
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। গতকাল দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত
এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এসব শর্তের কথা তুলে ধরেন। রিজভী আহমেদ বলেন,
আওয়ামী লীগ নেতাদের কথায় মনে হচ্ছে তাদের মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত। কীভাবে
আরেকটি ভোটারবিহীন নির্বাচন মঞ্চস্থ করা যায় সেই চক্রান্তমূলক আয়োজনে তারা
ব্যস্ত রয়েছেন। সাজানো জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজ তৈরি করে মিথ্যা মামলায়
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাবন্দি করে রাখা ও
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দেয়া সে মাস্টারপ্ল্যানেরই অংশ।
রিজভী প্রশ্ন রেখে বলেন, নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আওয়ামী লীগের শঙ্কা থাকবেই
বা কেন? নির্বাচনের ফলাফল যদি আগেই বাক্সে বন্দি করে রাখা হয়, তাহলে তো
আওয়ামী লীগের শঙ্কা থাকার কথা নয়। তাদের তো আর প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন
করতে হচ্ছে না। তেমন নির্বাচন তারা করবেও না। এ কারণেই বলেছে তাদের কোনো
শঙ্কা নেই। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র
যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ, তিনি
তাদের কুকর্মের কথা আগে জানিয়ে দিয়েছেন। দেশবাসী যেটা নানাভাবে জেনেছেন,
এখন তা পুরোপুরি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মুখ থেকে শুনেছেন। আগামী
নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও অর্থমন্ত্রী
আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, পিঠা ভাগের
মতো সংসদীয় আসনের সিংহভাগ আওয়ামী লীগ নিজেদের কব্জায় রেখে বাকি
স্বল্পসংখ্যক আসন অন্যদলকে ভাগ দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এটাই নির্বাচনহীন
একদলীয় শাসনের নমুনা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার
বক্তব্যে যে ‘আনুষ্ঠানিকতা’র উল্লেখ করেছেন সেটা কী এরই আলামত? আসন
ভাগাভাগির বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। কিন্তু যতই ষড়যন্ত্র করুন না
কেন, যতই ভাগাভাগি করুন না কেন, বানরের পিঠা ভাগাভাগির নির্বাচন এদেশের
জনগণ হতে দেবে না। তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারির মতো ভোটারবিহীন নির্বাচন আর
এদেশে করতে দেয়া হবে না। বাংলাদেশ অধিকার আদায়ের ঝটিকা কেন্দ্র। নির্বাচন
নিয়ে ছিনিমিনি খেললে কাঁটাতারের বেড়া নয় চীনের প্রাচীরের মতো প্রতিরোধ গড়ে
তোলা হবে। বিএনপি একতরফা ভাগাভাগির নির্বাচনকে কেবল প্রত্যাখ্যান নয় জনগণকে
সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধের ধাক্কায় গুঁড়িয়ে দেবে। বিএনপির মুখপাত্র বলেন,
পুলিশি ক্ষমতার অহংকার ও গরিমায় প্রধানমন্ত্রী সর্বময় কর্তৃত্ব চাইছেন,
কিন্তু সেই স্বপ্ন গণতন্ত্রকামী জনগণ বাস্তবায়িত হতে দেবে না। এদেশে
বহুদলীয় গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষা এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক
দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ছাড়া জনগণ জাতীয় নির্বাচন হতে দেবে না। বিএনপির
মুখপাত্র বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে ধোকা দেয়ার বিদ্যা ভালো করেই জানে। তারা
আত্মসম্মানহীন প্রতারক। মিথ্যা চিৎকার সর্বস্ব দল আওয়ামী লীগ। জনগণের সঙ্গে
প্রতারণা করাই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইশতেহার। রিজভী বলেন, বিএনপি জাতীয়
নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন সাতক্ষীরা জেলা আদালতে
হাজিরা দিতে গেলে তার জামিন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমি
তাকে কারাগারে পাঠানোর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে তার মিথ্যা
মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। বিএনপির মুখপাত্র বলেন,
খুলনা জেলা বিএনপির সহ-ধর্ম সম্পাদক নজরুল ইসলাম মোড়লকে কোথাও পাওয়া
যাচ্ছে না। তার ব্যবহৃত মটরসাইকেল ও মাথার টুপি পাওয়া গেলেও তাকে এখনও
পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আমরা মনে করি, কে বা কারা তাকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অবিলম্বে তাকে খুঁজে বের করে জনসমক্ষে হাজির করার
আহ্বান জানাচ্ছি। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সারা দেশে যুবদলের
বিক্ষোভ মিছিল থেকে গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান। সংবাদ
সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী,
কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, সাইফুল ইসলাম
পটু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
No comments