মোদির কারণে শান্তি ফিরছে না কাশ্মীরে: সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং
জম্মু
ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি দিন দিন আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে। এর জন্য দায়ী
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অদূরদর্শিতা। তার কারণেই কাশ্মীরে শান্তি
ফিরছে না। নয়াদিল্লিতে দুই দিনব্যাপী কংগ্রেসের ৮৪তম প্লেনারি অধিবেশনের
শেষদিন রোববার এ কথা বলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি বলেন,
‘জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ মোদি। উপত্যকার এমন দুর্দশা
আগে কখনও দেখিনি।’ খবর এনডিটিভির। বিজেপি ও পিডিপির মধ্যে টানাপড়েনের
প্রসঙ্গে মনমোহন সিং জানান, দুই দলের মধ্যেই আদর্শগত ফারাক রয়েছে। মনমোহনের
অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরে এমন এক সরকার গড়েছে যেখানে প্রশাসনেরই
দুই অংশ একে অপরের বিরুদ্ধে কাজ করছে। ২০১৫ বিধানসভা নির্বাচনে জোট বেঁধে
জম্মু ও কাশ্মীরে সরকার গড়ে বিজেপি ও পিডিপি। কিন্তু তারপর থেকেই নানা
ইস্যুতে দু’দলের মধ্যে দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত মিলেছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে
বৈঠক প্রসঙ্গে সবচেয়ে বড় ফাটল ধরে দুই জোট সঙ্গীর মধ্যে। মতবিরোধ রয়েছে
সশস্ত্র সেনার বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ বা এএফএসপিএ আইন নিয়েও। শুধু কাশ্মীর
প্রসঙ্গই নয়, দেশের অর্থনীতি নিয়েও তার উত্তরসূরি ছেলেখেলা করছে বলেও
অভিযোগ তোলেন তিনি। গত ২ বছর ধরেই কাশ্মীর পরিস্থিতির তীব্র অবনতি হয়েছে।
পাক জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েছেন কাশ্মীরের যুবাদের একাংশ।
কেন্দ্রের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানেও তারা বাধা দিচ্ছেন, বিক্ষোভ দেখছেন বা
সেনার বিরুদ্ধে পাথর ছুড়ছেন। এ প্রসঙ্গে মনমোহন বলেন, কেন্দ্রকে সবার আগে
বুঝতে হবে সমস্যাটা কোথায়। তারপর বিচক্ষণতার সঙ্গে সমস্যা মেটাতে হবে। শুধু
বলপ্রয়োগ করলেই উপত্যকার সব সমস্যা মিটে যাবে না। মোদির পররাষ্ট্রনীতি
নিয়ে মনমোহন সিং বলেন, ‘পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মকে মেনে নেয়া যায়
না ঠিকই। কিন্তু এটাও ভুললে চলবে না যে, তারা আমাদের প্রতিবেশী।’ তার
বক্তব্য, ‘পাকিস্তান যে গোটা উপমহাদেশের কাছেই বিপদের কারণ, সে বিষয়ে
অবশ্যই তাদের সতর্ক করতে হবে।
কিন্তু অযথা আগ্রাসী হওয়া ঠিক নয়।’ তার কথায়,
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আরও বেশি করে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার। কংগ্রেস
এই লক্ষ্যেই বরাবর কাজ করে এসেছে। কাশ্মীরে গোলাগুলিতে নিহত ৫ : ভারত
নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে গোলাগুলিতে একই পরিবারের পাঁচ
সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দু’জন। যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন
করে সীমান্তের অপর পাশ থেকে পাকিস্তানি বাহিনী গুলি ছুড়েছে বলে অভিযোগ
করেছে ভারত। অভিযোগে বলা হয়েছে, রোববার ভোরের আলো ফুটতেই পাক সেনারা
নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বালাকোট সেক্টর লক্ষ্য করে ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করে।
ওই গোলাবর্ষণের জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী যথাযথ ও ফলপ্রসূভাবে পাল্টা হামলা
করেছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। পুলিশ জানিয়েছে, কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার
বালাকোট সেক্টরে নিজ বাড়িতে সে সময় সপরিবারে ছিলেন মহম্মদ রমজান। পাক
সেনাদের ছোড়া একটি মর্টার রমজানের বাড়িতে গিয়ে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু
হয় রমজান, তার স্ত্রী ও তিন ছেলের। আহত হয় তার দুই মেয়ে। তাদের উদ্ধার করে
স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। গত ৮ মার্চ এই পুঞ্চ সেক্টরেই বিনা প্ররোচনায়
পাক সেনারা এলোপাতাড়ি গোলাবর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভারতীয় সেনাও
পাল্টা জবাব দেয়। যদিও সে ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। গত সপ্তাহে ভারতের
রাজ্যসভায় দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমন জানিয়েছেন, চলতি বছরের
জানুয়ারিতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাকিস্তানি বাহিনী যুদ্ধবিরতি
লঙ্ঘনের ২০৯টি ঘটনা ঘটিয়েছে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম ১২ দিনে এ ধরনের ঘটনার
সংখ্যা ১৪২টি।
No comments