ভারতে বিরোধীদের ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের তোড়জোড় শুরু
একের
পর এক উপনির্বাচনে বিজেপির ম্যাজিক দ্রুত বিলীন হওয়ায় ভারতের বিরোধী
রাজনীতিকরা আগামী ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে উজ্জিবীত হয়ে
উঠেছে। আর তাই বিরোধী জোট গড়ার লক্ষ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগেই
গুজরাটের প্যাটেল নেতা হার্দিক প্যাটেল এসে কলকাতায় তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করে গিয়েছেন। আর সোমবার কলকাতায় এসে জোট
গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন তেলেঙ্গান মুখ্যমন্ত্রী ও তেলেঙ্গানা
রাষ্ট্র সমিতির নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের শেষে রাও বলেছেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনের
আগে ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের ভাল সূচনা হয়েছে। গত ৪ঠা মার্চ রাও প্রথম বিজেপির
উত্থান ঠেকাতে আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে জোট গড়ার ডাক দিয়েছিলেন। তিনি
বলেছেন, অ-কংগ্রেসি এবং অ-বিজেপি ফ্রন্ট গঠনে সকলের এগিয়ে আসা উচিত । তিনি
আরও জানিয়েছেন, সমস্ত ক্ষমতা রাজ্য সরকারগুলির হাতে তুলে দেওয়া উচিত।
কেন্দ্রের হাতে সীমিত ক্ষমতাই শুধু থাকবে। আর একমাত্র তখনই দেশ এগিয়ে যেতে
পারবে । তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতাও অনেক দিন ধরে বিজেপি বিরোধী জোট গঠনের
প্রযোজনীয়তার কথা বলে আসছেন। বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের নেতাদের সঙ্গে তিনি এ
ব্যাপারে নিয়মিত কথাও বলছেন। তবে রাওয়ের ঘোষণার পরই মমতা তাকে সমর্থন
জানিয়েছেন। এক সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারেও মমতা রাওকে আশ্বাস দিয়েছেন। এদিন
রাওয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর মমতা বলেছেন, রাজনীতিতে কখনো কখনো পরিস্থিতি এমন
দাঁড়ায় যে সকলকে এগিয়ে এসে একসঙ্গে কাজ করতে হয়। রাও বলেছেন, দেশের এখন
পরিবর্তন প্রযোজন। আমাদের এজেন্ডাই হল দেশের উন্নয়ন। এসব নিয়েই মমতার সঙ্গে
কথা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এদিকে রাও কলকাতায় মমতার সঙ্গে বৈঠক করার
আগেই অন্দ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও তেলেগু দেশ পার্টির নেতা চন্দ্রবাবু
নাইডুও মমতাকে ফোন করে তার সঙ্গে আলোচনা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আসলে
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী নোট বাতিল থেকে শুরু করে সমস্ত বিষয়ে বিজেপির
বিরোধীতায় সরব হয়েছেন। তিনি ধারাবাহিক ভাবে বলে আসছেন যে, এবার আমাদের
লক্ষ্য দিল্লির লালকেল্লøা। তার নেতৃত্বে শক্তিশালী বিরোধী জোট গড়ে তোলার
ব্যাপারে অনেকেই তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। বিশিষ্ট আইনজীবী ও বিজেপির সাবেক
নেতা রাম জেঠ মালিনী তো ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রধান নায়িকা বলে মমতাকে
অভিহিত করেছেন। তিনি বিজেপিকে উৎখাত করতে মমতার নেতৃত্বে তৃতীয় ফ্রন্ট
গঠনের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। এমনকি মমতাই ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী
হবেন বলে তিনি মত প্রকাশ করেছেন। শিবসেনাও মমতাকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী
হওয়ার স¤ভাব্য প্রার্থী বলে জানিয়েছে। বিজেপির জোটের শরিক হওয়া সত্ত্বেও
শিবসেনা প্রধান রাজ ঠাকরে ইতিমধ্যেই বিজেপি মুক্ত ভারতের ডাক দিয়েচেন।
তেলেগু দেশ পার্টি ইতিমধ্যেই বিজেপির নেতৃত্বাধীর এনডিএ জোট ছেড়ে বেরিয়ে
এসেছেন। লোক জনশক্তি পার্টির নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাশোয়ান
বিজেপি জোটে স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করছেন না সেটা মাঝে মাঝেই বলেছেন। এমনকি
বিজেপিতে ধর্মনিরপেক্ষ নেতা রয়েছে কিনা সেই প্রশ্নও তুলেছেন। অন্যদিকে
কংগ্রেস বাস্তব পরিস্থিতে যে কোনও জোটকে সমর্থন জানানোর মত অবস্থান নিতে
দ্বিধা করবে না বলে দলের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সভাপতি রাহুল গান্ধী ইঙ্গিত
দিয়েচেন। স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধী জোটের পালে হাওয়া যত বাড়বে ততই বিজেপি
অন্দরে আশঙ্কা পল্লবিত হবে।
No comments