অসুস্থতার দোহাই দিয়ে সুচি'র প্রকাশ্য ভাষণ বাতিল
অস্ট্রেলিয়ায়
সফররত মিয়ানমারের বিতর্কিত নেত্রী অং সান সুচি'র প্রকাশ্য বক্তৃতা বাতিল
করা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে সিএনএন অনলাইন। শারীরিক অসুস্থতার দোহাই দিয়ে
বক্তৃতা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তিনি। অবশ্য অসুস্থতার বিস্তারিত
ধরণ উল্লেখ করা হয় নি। এ ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাও হিতায়
সিএনএন'কে বলেন, বিমানযাত্রাজনিত ক্লান্তিতে দুর্বল হয়ে পড়েছেন সুচি।
উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ায় প্রথমবারের মত অনুষ্ঠেয় আসিয়ান সম্মেলনে অংশগ্রহণের
জন্যে দেশটিতে সফর করছেন সুচি। মঙ্গলবার সিডনিতে একটি অনুষ্ঠানে মূল ভাষণ
দেওয়ার কথা ছিল তার। সেখানে ভাষণ শেষে শ্রোতাদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বের
ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু সোমবার তা বাতিল করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, শনিবার
অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে এখনও জনসম্মুখে কোনও কথা বলেননি তিনি। তবে মঙ্গলবারে
সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট
রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন এবং নিধনযজ্ঞ
শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা। হত্যা-ধর্ষণসহ
বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন প্রায়
৭ লাখ রোহিঙ্গা। আশ্রয় নিয়েছেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে
প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে। কিন্তু
তা কার্যকরের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের জন্য
ট্রানজিট ক্যা¤প নির্মাণসহ নানা উদ্যোগ গ্রহন করার কথা বলছে মিয়ানমার। তবে
এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসিত হন নি।
অন্যদিকে পালিয়ে আসা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের মধ্যে মিয়ানমারে ফিরে যাবার
আবেদন করেছেন মাত্র ৮ হাজার রোহিঙ্গা। এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই
পর্যন্ত মিয়ানমার সরকার মাত্র কয়েক শত রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে!
এর মধ্যেই নতুন করে মিয়ানমারে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার আলামত মিলছে। এমন
অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার লোয়ে ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সু চি’র একমাত্র
প্রকাশ্য ভাষণ নিয়ে আগ্রহ ছিল অনেকেরই। কারণ, অনুষ্ঠানটিতে ভাষণের পাশপাশি
দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেওয়ার কথা ছিল সুচি'র। এমনিতেই বর্তমান
সফরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বেশ বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। অস্ট্রেলিয়ায়
অবস্থানরত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকজন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম
টার্নবুলের কাছে একটি বিবৃতিপত্র পাঠিয়েছেন। অনুরোধ করেছেন সুচি'র সঙ্গে
রাখাইনে সংগঠিত মানবতা বিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করতে। এ বিষয়ে
অস্ট্রেলিয়ান বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশনের মুখপাত্র হাবিবুর রহমান
সিএনএন'কে বলেন, 'আমরা চাই অস্ট্রেলিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য
হিসেবে মিয়ানামারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত অত্যাচারের বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা গ্রহন করুক। আমরা চাই অস্ট্রেলিয়া সরকার মিয়ানমারকে বাণিজ্য ও
সামরিকসহ অন্যান্য সহায়তা দেয়া বন্ধ রাখুক।' এমতাবস্থায় ধারণা করা হয়েছিলো,
বিরল ওই প্রকাশ্য ভাষণে উপস্থিত শ্রোতাদের কাছ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কঠিন
প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারেন সুচি। ভাষণ অনুষ্ঠানটি বাতিল ঘোষণা করার পর-
তা অন্য কোন দিন পুনঃনির্ধারণ করা যায় কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে
মিয়ানমারের এক মুখমাত্র দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, সময় সংকটের কারনে এবারের সফরে
তা আর করা সম্ভব নয়।
No comments