নিজভূমে পরবাসী ১১০ বছরের বৃদ্ধা
আখাউড়া
রাধননগর গ্রামে এক বছর ধরে অনেকটা বন্দীদশায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন ও
তার পরিবার। প্রভাবশালী আজাদ বাহিনীর ভয়ে একটি পরিত্যক্ত স্থাপনায় জিম্মি
দশায় দিন কাটছে তাদের। নিজের জায়গায় ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে দেয়া হচ্ছে না।
গ্রামের সরদার থেকে শুরু করে মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমন কি আখাউড়া পৌরসভার
মেয়রও ব্যর্থ হয়েছেন। ভয়ে মামলা দিতেও সাহস পাচ্ছে না পরিবারটি। শুধু তাই
নয় এ নিয়ে রোববার সাংবাদিকের সাথে কথার অভিযোগে স্থানীয় দুই বৃদ্ধকে
লাঞ্ছিত করেছে আজাদ বাহিনী। রোববার দুপুরে সরেজিমন খোঁজ-খবর নিতে গেলে এই
তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আখাউড়া আজমপুর রেলস্টেশনের পাশেই রামধননগর গ্রাম। দুপুর
দেড়টায় সাংবাদিক দেখেই স্থানীয় কিছু লোক এগিয়ে আসেন। তাদের সাথে নিয়েই
গ্রামের শোভা খাতুনের বাড়িতে প্রবেশ করি। পুরো বাড়িটা একদম ফাঁকা। ঘরবাড়ি
ভেঙে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। দক্ষিণ ভিটায় একটি একচালা পরিত্যক্ত স্থাপনায়
শোভা খাতুন (১১০) মাটিতে বসে কাপছেন। অনেক চেষ্টা করে তার সাথে কথা বলা
যায়নি। কথা বলার শক্তি একদম হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। পরে শোভা খাতুনের ছেলে
আবুল বাশার (৭৫) ও তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের (৬৫) সাথে কথা হয়। তারা
জানান, মাটির তৈরি বাড়িতে বেশ সুখেই বসবাস করছিলেন শোভা খাতুনের পরিবার। গত
এক বছর আগে পুরনো ঘর ভেঙে পাকা ঘর বানানোর জন্য বাড়িতে নির্মাণসামগ্রী
নিয়ে আসে আবুল বাসার। একটি দিন দেখে গ্রামের ইমাম সাহেবকে দিয়ে দোয়া পড়িয়ে
ঘর নির্মাণের জন্য গেলে প্রতিবেশি প্রভাবশালী আজাদ হোসেন(৪০), আইনুল ইসলাম
(৩৫), আওলাদ হোসেন (৩০) ও তাদের লোকজন বাধা দেয়। এতে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে
পড়ে। পরে তাদের ভয়ে একটি পরিত্যক্ত স্থাপনায় আশ্রয় নিয়ে কাজ শুরু করার জন্য
প্রথমে গ্রামের সরদার ওয়াহেদ আলীর দারস্থ হন। পরে স্থানীয় মেম্বারও সমাধান
দিতে পারেনি। পরে আজাদ বাহিনীর ভয়ে পরিবারটি পরিত্যক্ত স্থাপনায় একরকম
বন্দী হয়ে পড়ে। ঝড় বৃষ্টি সব তাদের মাথার উপর দিয়েই যেতে থাকে। পরে বাধ্য
হয়ে বিষয়টির আপস-মীমাংসার জন্য শোভা খাতুনের ছেলে আবুল বাশার স্থানীয়
চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান স্বপনের নিকট যান। চেয়ারম্যান অনেক চেষ্টা তদবির
করেও সুরাহা করতে পারেননি।
বরং শোভা খাতুনের পরিবারের সম্পত্তিটি কেড়ে
নেয়ার জন্য আজাদেরা উঠেপড়ে লেগেছে। প্রাননাশের হুমকিধামকিসহ বিভিন্ন ভয়
দেখিয়ে পরিত্যক্ত স্থাপনাটিতে শোভা খাতুনের পরিবারটিকে এক প্রকার জিম্মি
করে ফেলে। এ ঘটনার চাপে ও পরিবারের চিন্তায় শোভা খাতুন অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরে শেষ চেষ্টা হিসাবে আবুল বাশার আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজলের
নিকট যান। মেয়রও অনেক চেষ্টা করেছেন শোভা খাতুনের পরিবারটিকে ন্যায় বিচার
পাইয়ে দিতে। কিন্তু তিনিও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন। গত এক বছর ধরে শোভা
খাতুনের পরিবার পরিত্যক্ত স্থাপনায় অনেক কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এলাকার সরদার দুলা মিয়া (৫৫) ও শহীদ মিয়া (৭৫) জানান, অনেক চেষ্টা করেও
বিষয়টির সমাধান হয়নি। গ্রামের ওয়াহেদ মিয়াও বলেছেন বিষয়টির নিষ্পত্তির
চেষ্টা এখনো চলছে। অভিযুক্ত আইনুল ইসলাম (৩৫) বলেন তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি
রয়েছে শোভা খাতুনের বাড়িতে তাই তারা বাধা দিয়েছে। এদিকে রামধননগর গ্রাম
থেকে ফেরার সময় সরদার দুলা মিয়া ও শহীদ মিয়াকে সাংবাদিকদের সামনেই লাঞ্ছিত
করে আজাদ হোসেনসহ কয়েক যুবক। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার অভিযোগ তুলে তাদের
ধরে মারধর শুরু করলে স্থানীয় লোকজন এসে উদ্ধার করে। এ প্রসঙ্গে আজাদ হোসেন
সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি। আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান
আব্দুল হান্নান স্বপন জানান, শোভা খাতুনের পরিবারকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে
অনেক চেষ্টা হয়েছে কিন্তু আজাদরা গ্রামের জুলুমবাজ প্রকৃতির মানুষ। তারা
মানুষের উপর জুলুম, দখলবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকায় সমাজকে মানতে চায়
না। এলাকার লোকজনও তাদের ভয়ে কিছু বলতে সাহস পায় না। আখাউড়া পৌরসভার মেয়র
তাকজিল খলিফা কাজল জানান, অনেক চেষ্টার পরও শোভা খাতুনের পরিবারকে মুক্ত
করা যায়নি আজাদদের কবল থেকে। আইনি ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
পরিবারটি মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলেও তিনি জানান।
No comments