কেন কোটা সংস্কার জরুরি? by রাজিয়া সুলতানা
কোটা
সংস্কার আন্দোলন আজ জাতীয় আন্দোলনে রূপ নিয়েছে, প্রতিটি বিভাগেই
শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা দলে দলে আন্দোলনে নেমেছে, সচেতন করে তুলছে
সর্বস্তরের মানুষকে। শুরুটা কয়েকজনের হাতে হলেও এ আন্দোলনে এখন যোগ দিয়েছেন
লাখো শিক্ষার্থী। ইতিমধ্যে কোটাধারীদের একটা গ্রুপও কোটা বহাল রাখার
আন্দোলন শুরু করেছে। কিন্তু সচেতন-শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে আপনার/আমার নৈতিক
অবস্থান কি হওয়া উচিত? ১৪ই মার্চ পুলিশের লাঠিপেটা খেয়ে, আহত হয়ে,
গ্রেপ্তার হয়ে ৫৫ জন দীর্ঘ সাড়ে সাত ঘণ্টা অবরুদ্ধ থেকে, ৭০০+ বেনামি
আন্দোলনকারী মামলা খেয়েও দমে না গিয়ে বরং কয়েকগুণ চাকরি প্রার্থী ও
শিক্ষার্থী স্বপ্রণোদিত হয়ে কেন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, কতটা পুঞ্জীভূত
ক্ষোভ জমা আছে... ভাবতে হবে।
কেউ কেউ নির্বাচনের বছর আন্দোলন হচ্ছে বলে ষড়যন্ত্রের আভাস খুঁজছেন বাস্তবতা যাচাই না করেই, যদিও আন্দোলনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সহ রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।
নির্বাচনের আগে বিরোধী দল, চাপ সৃষ্টিকারী গুষ্ঠিসহ সবাই দাবি পেশ করতে পারলে বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষিত মেধাবীরা কেন পারবে না? পৃথিবীর আর কোন দেশে আছে সরকারি চাকরি (১ম শ্রেণি)তে ৫৬% কোটায় নিয়োগ বিধি? এই পায়ে কুড়াল মারার সিদ্ধান্ত কি জাতির জন্য ক্ষতিকর নয়? গত কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষায় দেখা গেছে কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পেয়ে ৬০০০ পদ খালি রাখা হয়েছে, ফলে অন্তত ৬০০০ সাধারণ প্রার্থী যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত হয়েছে যাদের অনেকেরই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের মেয়াদ শেষ!
কোটাধারীদের জন্য এত বেশি সুযোগ আছে অথচ প্রার্থী নেই। তার মানে এত বেশি কোটার দরকারই নেই। আজকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলায় কোটার নামে যা হচ্ছে তা ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সরকারের অন্যায়-অবিচারের সমানুপাতিক। স্বাধীন বাংলায় শুধু কোটাধারীদের জন্য ৩২তম বিসিএস পরীক্ষা, বাংলাদেশ ব্যাংকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা, অগ্রণী ব্যাংকে কোটাধারীদের জন্য স্পেশাল নিয়োগ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে! যে শোষণ-বৈষম্য থেকে একদিন জাতির পিতা বাঙালিকে মুক্ত করতে আন্দোলন করেছেন, স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছেন তারই অবর্তমানে ৪৭ বছর পরেও সেসব জঘন্য বৈষম্যের শিকার কোটি মানুষ!
কোটা ব্যবস্থা অনেক দেশেই আছে, এখানেও প্রয়োজন বোধে রাখা যায়। তবে সে কারণে কোনোভাবেই মেধার অবমূল্যায়ন হওয়া উচিত নয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটা (নাতিপুতিসহ!), পোষ্য কোটা সহ এত বেশি কোটা সুবিধা না থাকলে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কোটার সুবিধা লাভে সার্টিফিকেটধারী নামের তালিকা পরিবর্তনের এত নির্লজ্জ রীতি আমাদেরকে দেখতে হতো না। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, সুবিধা-সম্মান যা দেয়ার সরাসরি তাদেরকেই দেয়া হোক, বড়জোর তাদের সন্তান পর্যন্ত কিন্তু নাতি-নাতনি পর্যন্ত নয়। আবার একই কোটার একাধিকবার ব্যবহারও লক্ষণীয়!
ফলে মেধার মাত্রাতিরিক্ত অবমূল্যায়ন রোধে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে চলছে কোটা সংস্কার আন্দোলন। দাবিসমূহ হলো:
১। কোটা ব্যবস্থায় সংস্কার এনে ৫৬% থেকে কমিয়ে সর্বোচ্চ ১০% করতে হবে।
২। কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পেলে মেধা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ দিতে হবে।
৩। কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া।
৪। সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা এবং
৫। চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা।
সরকার পক্ষের কাছে অনুরোধ এই আন্দোলনকারীদের প্রতিপক্ষ না ভেবে তাদের কথাগুলো শুনুন, ন্যায্য দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে অহিংস আন্দোলনকে সম্মান জানান। লাখ লাখ মেধাবীর মূল্যায়ন যদি এই সরকারের আমলে হয় তাতে আখেরে আওয়ামী লীগেরই জয় হবে।
রাজিয়া সুলতানা, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
কেউ কেউ নির্বাচনের বছর আন্দোলন হচ্ছে বলে ষড়যন্ত্রের আভাস খুঁজছেন বাস্তবতা যাচাই না করেই, যদিও আন্দোলনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সহ রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।
নির্বাচনের আগে বিরোধী দল, চাপ সৃষ্টিকারী গুষ্ঠিসহ সবাই দাবি পেশ করতে পারলে বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষিত মেধাবীরা কেন পারবে না? পৃথিবীর আর কোন দেশে আছে সরকারি চাকরি (১ম শ্রেণি)তে ৫৬% কোটায় নিয়োগ বিধি? এই পায়ে কুড়াল মারার সিদ্ধান্ত কি জাতির জন্য ক্ষতিকর নয়? গত কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষায় দেখা গেছে কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পেয়ে ৬০০০ পদ খালি রাখা হয়েছে, ফলে অন্তত ৬০০০ সাধারণ প্রার্থী যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত হয়েছে যাদের অনেকেরই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের মেয়াদ শেষ!
কোটাধারীদের জন্য এত বেশি সুযোগ আছে অথচ প্রার্থী নেই। তার মানে এত বেশি কোটার দরকারই নেই। আজকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলায় কোটার নামে যা হচ্ছে তা ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সরকারের অন্যায়-অবিচারের সমানুপাতিক। স্বাধীন বাংলায় শুধু কোটাধারীদের জন্য ৩২তম বিসিএস পরীক্ষা, বাংলাদেশ ব্যাংকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা, অগ্রণী ব্যাংকে কোটাধারীদের জন্য স্পেশাল নিয়োগ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে! যে শোষণ-বৈষম্য থেকে একদিন জাতির পিতা বাঙালিকে মুক্ত করতে আন্দোলন করেছেন, স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছেন তারই অবর্তমানে ৪৭ বছর পরেও সেসব জঘন্য বৈষম্যের শিকার কোটি মানুষ!
কোটা ব্যবস্থা অনেক দেশেই আছে, এখানেও প্রয়োজন বোধে রাখা যায়। তবে সে কারণে কোনোভাবেই মেধার অবমূল্যায়ন হওয়া উচিত নয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটা (নাতিপুতিসহ!), পোষ্য কোটা সহ এত বেশি কোটা সুবিধা না থাকলে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কোটার সুবিধা লাভে সার্টিফিকেটধারী নামের তালিকা পরিবর্তনের এত নির্লজ্জ রীতি আমাদেরকে দেখতে হতো না। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, সুবিধা-সম্মান যা দেয়ার সরাসরি তাদেরকেই দেয়া হোক, বড়জোর তাদের সন্তান পর্যন্ত কিন্তু নাতি-নাতনি পর্যন্ত নয়। আবার একই কোটার একাধিকবার ব্যবহারও লক্ষণীয়!
ফলে মেধার মাত্রাতিরিক্ত অবমূল্যায়ন রোধে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে চলছে কোটা সংস্কার আন্দোলন। দাবিসমূহ হলো:
১। কোটা ব্যবস্থায় সংস্কার এনে ৫৬% থেকে কমিয়ে সর্বোচ্চ ১০% করতে হবে।
২। কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পেলে মেধা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ দিতে হবে।
৩। কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া।
৪। সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা এবং
৫। চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা।
সরকার পক্ষের কাছে অনুরোধ এই আন্দোলনকারীদের প্রতিপক্ষ না ভেবে তাদের কথাগুলো শুনুন, ন্যায্য দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে অহিংস আন্দোলনকে সম্মান জানান। লাখ লাখ মেধাবীর মূল্যায়ন যদি এই সরকারের আমলে হয় তাতে আখেরে আওয়ামী লীগেরই জয় হবে।
রাজিয়া সুলতানা, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
No comments