চীন সীমান্তে সি-১৭ গ্লোবমাস্টার, ভারতের নতুন ছক
কাশ্মীর
তথা লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ— এতগুলো
রাজ্যকে ছুঁয়ে রয়েছে চীনের সীমান্ত। ভারতীয় মিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, এই লম্বা
সীমান্তরেখায় এক সময় ভারতের নীতি ছিল শুধু আত্মরক্ষা। কিন্তু সেই রণনীতি
অমূল বদলে ফেলছে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং
সেনাকর্তারা এখন এক সুরে বলছেন, সেই যুগ অতীত। আত্মরক্ষা শুধু নয়, বিধ্বংসী
প্রতি-আক্রমণের সক্ষমতাও তৈরি হয়ে গেছে। ভারতও এখন নিজেদের শক্তি প্রদর্শন
করতে পিছপা হচ্ছে না। খবরে বলা হয়েছে, দিন তিনেক আগেই ভারতীয় বিমানবাহিনী
তুতিংয়ের অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডে (এএলজি) তাদের সবচেয়ে ভারী রসদ
পরিবাহী বিমান ‘সি-১৭ গ্লোবমাস্টার’ নিয়ে গেছে। আর তাতেই কপালে ভাঁজ পড়েছে
বেইজিংয়ের। কারণ, জায়গাটি চীনা সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে মাত্র কয়েক
মাইল দূরে। তুতিংকে দক্ষিণ তিব্বতের অংশ বলে দাবি করে চীন। আর ভারত এই
তল্লাটকেই অরুণাচল প্রদেশের অংশ মনে করে। ভারতের লক্ষ্য অবশ্য আক্রমণ করা
নয়। কিন্তু হামলা হলে, পাল্টা হামলায় চীনের ভিতরে যাতে ঢুকে যেতে পারে
ভারতীয় বাহিনীও, সেই লক্ষ্যেই এখন এগচ্ছে নয়াদিল্লি। গত বছরের ডিসেম্বরে এই
এলাকাতেই একটি চীনা নির্মাণ দলকে বাধা দিয়েছিল ভারতীয় সেনা। তাদের
যন্ত্রপাতি আটকানোর পর তাদের চীনে ফেরত পাঠানো হয় বলে দাবি ভারতীয় পক্ষের।
ভারতীয় বিমানবাহিনী এক ট্যুইটে জানিয়েছে, ‘সি-১৭ গ্লোবমাস্টার’ অরুণাচল
প্রদেশের তুতিং এএলজিতে ঐতিহাসিক অবতরণ করেছে। বিপদসঙ্কুল এই এয়ারফিল্ডটি
পাহাড় ঘেরা একটা সঙ্কীর্ণ উপত্যকার মধ্যে অবস্থিত। পাইলটদের দক্ষতায় এই
কঠিন অবতরণ ‘মিশন’ নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষামূলক অবতরণের পর সি-১৭
একটি অভিযানে অংশ নেয়। সেখান থেকে রসদ নিয়ে অন্য একটি সমতল ভূমিতে অবতরণ
করে বিমানটি। ২০১৬ সালের নভেম্বরে ভারতীয় বিমানবাহিনী কৌশলগত মেচুকা
এএলজিতে সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বিমানের সফল অবতরণ করিয়েছিল। জায়গাটির অবস্থান
অরুণাচল প্রদেশের পশ্চিম সিয়াং জেলায়। চীন সীমান্ত থেকে জায়গাটি মাত্র ২৯
কিলোমিটার দূরে। প্রত্যক্ষ রণসজ্জাও দ্রুত বাড়ানো হচ্ছে অরুণাচল প্রদেশে।
গত কয়েক বছরে অরুণাচলে সীমান্তের কাছাকাছি বিভিন্ন অঞ্চলে একের পর এক
অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড বা সীমান্তবর্তী বিমানঘাঁটিগুলো ব্যবহারের
উপযোগী করেছে ভারত। এই বিমানঘাঁটিগুলোর অধিকাংশই ব্রিটিশ আমলে তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু ১৯৬২-র যুদ্ধের পর থেকে সেগুলো মোটের উপর পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছিল।
চীনা সীমান্ত বরাবর সাতটি অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড (এএলজি)
নির্মাণের কাজ ২০০৯ সালে শুরু করে ভারত।
অরুণাচল প্রদেশে এই সাতটি এএলজির
ছ’টির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। তাওয়াংয়ে মাত্র ৩ শতাংশ কাজ বাকি আছে।
অধিকাংশ এএলজিতেই বিমানবাহিনীর সুখোই এবং সি-১৭ গ্লোবমাস্টার রসদবাহী বিমান
অবতরণ করেছে। বিজয়নগরে অষ্টম এএলজি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে ভারত।
কিন্তু সড়ক যোগাযোগের সমস্যার কারণে এর কাজ শুরু করা যায়নি। যদিও সংসদীয়
স্ট্যান্ডিং কমিটি এক রিপোর্টে জানিয়েছে, আশপাশের এলাকায় সড়ক নির্মাণ
প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে বিজয়নগরের এএলজি’র কাজও শিগগিরই শুরু হবে।
বিমানবাহিনী ব্যবহার করে না অরুণাচল প্রদেশে এমন ২৪টি এয়ারফিল্ডও চিহ্নিত
করেছে। এগুলি অন্য কাজে ব্যবহার করা হবে। যেমন— দূরপাল্লার রাডার মোতায়েন,
অস্ত্র গুদামজাত করা এবং অভিযানকালে কৌশলগত সরঞ্জামাদির ব্যবস্থাপনা, জরুরি
রিকভারি স্ট্রিপ, এডি অস্ত্র মোতায়েন ও হেলিকপ্টার পরিচালনা করা। ভারতীয়
মিডিয়ার খবরে বলা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর উপস্থিতি অরুণাচলে
বেশ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে গত কয়েক বছরে। নতুন রাস্তা এবং রেললাইন
তৈরি হচ্ছে সীমান্ত বরাবর। আগে এই সড়ক ও রেলপথ তৈরির কাজ এবং এলাকায়
অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ পরিকল্পিতভাবেই করা হতো না। ভারতীয়
সেনাবাহিনী যেহেতেু আগে শুধু আত্মরক্ষার নীতি নিয়ে চলত, তাই চীন সীমান্ত
সংলগ্ন অঞ্চলে পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হতো না। কারণ ভারত মনে করত, চীন যদি
কোনোভাবে ভিতরে ঢুকে আসে, তা হলে ওই সব সড়ক ও রেলপথ ব্যবহার করে চীন আরো
সহজে ভারতের অনেক ভিতরে ঢুকে পড়বে। কিন্তু এখন নীতি অন্য রকম।
প্রতি-আক্রমণ নীতি নিয়ে ভারত এগচ্ছে। তাই দ্রুত পরিকাঠামো বাড়ানো হচ্ছে
অরুণাচল সীমান্তে। অর্থাৎ অরুণাচল প্রদেশে চীনের সামনে দুর্লঙ্ঘ প্রাচীর
তৈরি করে ফেলছে ভারত।
No comments