আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সফরে উঠে আসছে বিরোধের চিত্র by কাজী সোহাগ
আওয়ামী
লীগের সাংগঠনিক সফরে উঠে আসছে নানা ধরনের বিরোধের চিত্র। এমপির সঙ্গে
এমপির, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে এমপি কিংবা জেলা সেক্রেটারির,
কোথাও আবার জেলা-উপজেলা নেতৃত্বেও রয়েছে প্রচণ্ড বিরোধিতা। এসবের পাশাপাশি
রয়েছে, গ্রুপিং ও পরস্পরবিরোধী অবস্থান। একাদশ নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে এ
চিত্র আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা
দেশে সাংগঠনিক সফর করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। এই সফরে দেশের বিভিন্ন
জেলার বিরোধপূর্ণ আসনগুলো চিহ্নিত করছে দলটি। দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও
প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নেতৃত্বে ১৫টি টিম ২৬শে জানুয়ারি থেকে সাংগঠনিক সফর
শুরু করেছেন। এরইমধ্যে বেশিরভাগ জেলা সফর শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে আওয়ামী
লীগ। এসব সফরে গিয়ে যেসব বিরোধ উঠে এসেছে তা রিপোর্ট আকারে আওয়ামী লীগ
সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সফরের
দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েক নেতা মানবজমিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ একটা বড় দল। এখানে
সাংগঠনিক বিরোধিতা থাকতেই পারে। আমরা সেসব বিরোধিতা চিহ্নিত করতেই কাজ
করছি। তারা জানান, জেলা সফরে খুব সহজেই জানতে পেরেছি কার সঙ্গে কার বিরোধ।
কে, কি চায়। একটি জেলার নানা স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের
কাছ থেকে বিস্তারিত শুনেছি। যেসব বিরোধ আমাদের পক্ষে মেটানো সম্ভব হয়েছে তা
মিটিয়েছি। যেগুলো সম্ভব হয়নি সেগুলো নিয়ে কেন্দ্রে রিপোর্ট করেছি। দলের
সভাপতির কাছে আমাদের রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে। দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য
আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বাধীন টিম সফর করেছে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা,
পিরোজপুর ও ঝালকাঠি। এ টিমে ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আবুল
হাসানাত আবদুল্লাহ, মো. আবদুর রহমান, আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম, অ্যাডভোকেট
আফজাল হোসেন, ড. শাম্মী আহমেদ ও অ্যাডভোকেট শ.ম রেজাউল করিম। সফরের
তালিকায় ভোলা থাকলেও টিম সেখানে সফর করেনি। তারা দায়িত্ব দিয়েছে বাণিজ্য
মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে। তার নির্বাচনী এলাকা হওয়ায় টিম এ উদ্যোগ নিয়েছে। এ
টিমের সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান মানবজমিনকে
বলেন, সফরে স্থানীয় নেতাকর্মী ও জনসাধারণের ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য
করছি। স্থানীয়ভাবে তারা চাঙ্গা হয়ে উঠছেন। সামনে নির্বাচন হওয়ায়
নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। বিরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বড় দলে ছোটখাটো কিছু
বিরোধ থাকতেই পারে। নির্বাচন এলে এসবের কিছু থাকবে না। আওয়ামী লীগ
নির্বাচনপ্রিয় দল। দল মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পর সব বিরোধ মিটে যাবে বলে আমার
বিশ্বাস। এদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ
হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত টিম সফর করেছে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম,
চট্টগ্রাম মহানগর ও কক্সবাজার। এ টিমে রয়েছেন আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, হাছান
মাহমুদ, একেএম এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল,
দীপংকর তালুকদার, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও আমিনুল ইসলাম। এ প্রসঙ্গে
দলটির উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমাদের যেসব জেলা
দেয়া হয়েছে সেগুলো সফর করেছি। সেখানে কর্মিসভা থেকে শুরু করে সাংগঠনিক নানা
বিষয় নিয়ে কাজ করেছি। এদিকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর
নেতৃত্বে গঠিত টিম সফর করেছে মাগুরা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর জেলায়।
টিমে ছিলেন মাহবুব-উল আলম হানিফ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, দেলোয়ার হোসেন,
এসএম কামাল হোসেন ও পারভীন জামান কল্পনা। এসব জেলা সফর প্রসঙ্গে আওয়ামী
লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পারভীন জামান কল্পনা মানবজমিনকে বলেন, সফর
করা জেলাগুলোতে কর্মিসভা, জনসভা পর্যন্ত করা হয়েছে। এসব জেলায় নানা ধরনের
বিরোধ রয়েছে। আমাদের সফরে সেসব বিরোধ স্পষ্ট করে জানতে পেরেছি। কাদের সঙ্গে
পরস্পর বিরোধ তা নিয়ে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দল আমাদের দায়িত্ব
দিয়েছে মাঠের প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে। আমার বিশ্বাস সে কাজটি খুব ভালোভাবেই
করতে পারছি। বিরোধিতার ধরন ও মাত্রা সম্পর্কে দলকে অবহিত করতে পারছি।
এদিকে ওই টিমের দায়িত্বে ঝিনাইদহ জেলা থাকলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত
সেখানে সফর করা সম্ভব হয়নি। টিমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আসনটি আসলে
বিরোধপূর্ণ। এজন্য কিছুটা সময় নেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েক নেতা
জানান, সাংগঠনিক সফরে প্রথমে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করছেন সফর টিমের
সদস্যরা। তারা ব্যর্থ হলে তা তালিকাভুক্ত করে রাখা হচ্ছে। ১৫টি টিম একই
পদ্ধতিতে কাজ করছে। প্রতিটি টিমের পক্ষ থেকে বিরোধপূর্ণ আসনগুলোর তালিকা
তৈরি করে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেয়া হচ্ছে। এদিকে
বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে এরই মধ্যে কয়েক দফা মাঠের চিত্র তুলে আনা হয়েছে।
ওইসব রিপোর্টের সঙ্গে সাংগঠনিক রিপোর্ট মিলিয়ে দেখা হবে। এরপর দলীয় কোন্দল
মেটাতে হস্তক্ষেপ করবে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি। প্রয়োজন হলে দলের সভাপতি
আলাদাভাবে তাদের ডেকে পরামর্শ দেবেন। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে
প্রস্তুতি নিতে চায় আওয়ামী লীগ। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আগামী
নির্বাচনেও নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে জনগণের দোরগোড়ায় যাওয়ার বিকল্প নেই
বলে মনে করছেন তারা। আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে
ক্ষমতাসীন দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা নতুন করে কোন্দল তৈরি করছে। বিভিন্ন
জেলাতে ঘটছে সংঘর্ষ, বহিষ্কার, পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনা। স্থানীয় নেতাদের
পরিস্থিতি বুঝিয়ে দলকে সুসংগঠিত ও শৃঙ্খালাবদ্ধ করার পাশাপাশি সরকারের
উন্নয়ন প্রকল্পগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরা এই সফরের লক্ষ্য। নেতাদের এই
সাংগঠনিক সফর ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভাগীয় জেলাগুলোতে আলাদা
সফরে যাচ্ছেন।
No comments