প্রকল্পের শুরুতেই অনিয়ম
দেশে
দুর্নীতির কারণে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন না হওয়ার বিষয়টি
বহুল আলোচিত। ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার’ পুনঃস্থাপন প্রকল্প
বাস্তবায়নে বিধি লংঘন করে কিভাবে ঠিকাদার নিয়োগের আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে,
রোববারের যুগান্তরের এক প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে,
পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতেই গণখাতে ক্রয় আইন (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট
অ্যাক্ট) বা পিপিএ এবং গণখাতে ক্রয় বিধি (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস) বা
পিপিআর লংঘন করা হয়েছে। নিয়ম অনুসারে দরপত্র আহ্বানের আগে প্রকল্পের
প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা
ব্যয়ে ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার’ প্রকল্পের ক্ষেত্রে তা অনুসরণ
করা হয়নি। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট-এর বিধান অনুযায়ী কোনো দরপত্রে দুই
পদ্ধতি অনুসরণের সুযোগ না থাকলেও আলোচিত প্রকল্পের দরপত্রের দুই পদ্ধতি
অনুসরণ করা হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে আলোচিত প্রকল্পের ‘দরপত্র আহ্বান ও
মূল্যায়ন’ প্রক্রিয়া যে সঠিক হয়নি, তা উল্লেখ করে দুই দফা মতামত দিয়েছে
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট
(সিপিটিইউ)। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এমন পদক্ষেপের পরও আলোচিত দরপত্রটি
অনুমোদনের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা
কমিটির কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। আলোচিত দরপত্রের অভিযোগের বিষয়টি
ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল
মুহিতের কাছে উপস্থাপন করা হলে তিনি অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন। ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার’
প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়িত হোক, এ বিষয়ে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়।
কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে কিনা- এ
বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ঠিকাদার নিয়োগে কেন পাবলিক প্রকিউরমেন্ট
অ্যাক্ট এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস লংঘন করা হল, তা জরুরি ভিত্তিতে
খতিয়ে দেখা দরকার।
প্রাথমিকভাবে যোগ্যতাসম্পন্ন চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে
কেবল একটি প্রতিষ্ঠানই আলোচিত দরপত্রের সব শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এমন
পরিস্থিতিতে স্বচ্ছতার স্বার্থে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করাই যুক্তিসঙ্গত
ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা করা হয়নি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল
প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) মতামতকে উপেক্ষা করার
প্রেক্ষাপটে ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি
হবে এটাই স্বাভাবিক। আলোচিত প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ৩৩ মাস নির্ধারিত
থাকলেও নির্বাচিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি ৪৪ মাসে বাস্তবায়নের
প্রস্তাব দিয়েছে। এতে বিসিআইসির বিপুল অর্থ ক্ষতি হবে, তা বলাই বাহুল্য।
‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার’ প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে
(দুদক) দাখিল করা অভিযোগপত্রে দরপত্র প্রক্রিয়ায় নানা অসঙ্গতির বিষয়টি তুলে
ধরা হয়েছে। অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে সেসব দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয়
পদক্ষেপ নিতে হবে। আলোচিত প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগে শিল্প মন্ত্রণালয়
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ কেন আমলে নেয়নি, এ রহস্য দ্রুত উদ্ঘাটিত
হওয়া দরকার। আলোচিত প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে যেহেতু ইতিমধ্যে নানা রকম
প্রশ্ন ও অভিযোগ উঠেছে, যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার
পাশাপাশি দেশের ছোটবড় সব প্রকল্পে দুর্নীতি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
No comments