এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আপত্তির মুখে ১৫৭ কোটি টাকার প্রকল্প by নূর মোহাম্মদ
একের
পর এক বিতর্কিত প্রকল্প হাতে নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের তোপের মুখে শিক্ষা
মন্ত্রণালয়। এবার ১৫৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়ে আপত্তি তুলেছে খোদ
শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চরাঞ্চলে পিছিয়ে পড়া মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের
জন্য নেয়া এ প্রকল্পে আপত্তি তোলা হয়েছে। ইমেজ সংকট উদ্ধারে এবার সতর্ক
অবস্থানে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাই আগেই সতর্ক হয়ে ডিপিপির খুঁটিনাটি
সব বিষয় দেখে তারপর পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয়া হবে। কমিশনের পর্যবেক্ষণগুলো
এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সেরে নেয়া হবে। প্রয়োজনে প্রকল্প বাতিল করা
হবে। এরই অংশ হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক নেয়া
‘চরাঞ্চলের নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুযোগ
সম্প্রসারণ’ প্রকল্পে ডজনখানেকের বেশি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে শিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বিভাগ। যা পরিকল্পনা কমিশনে পর্যবেক্ষণের সঙ্গে হুবহু
মিলে গেছে। জানা গেছে, দেশের চরাঞ্চল অধ্যুষিত চার বিভাগের ১১টি জেলায় মোট
৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে ১৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প
প্রস্তাবনা তৈরি করেছে মাউশি। প্রথম প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩৩ হাজার
শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা, নৌকা দিয়ে স্কুলে নিয়ে আসা,
বই ও খেলাখুলা সামগ্রী কিনে দেয়া, জীবন দক্ষতার জন্য শিক্ষক ও
শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রণোদনা
পুরস্কার, বিদ্যুৎবিহীন প্রতিষ্ঠানের সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা,
স্থানান্তরযোগ্য অবকাঠামোতে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন শ্রেণিকক্ষ করা এবং
আসবাবপত্র সরবরাহ করা। ‘চরাঞ্চলের নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে
শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৭ কোটি
৯৪ লাখ টাকা। পুরো প্রকল্পের ব্যয় সরকার বহন করবে। প্রকল্পের সময়কাল ধরা
হয়েছে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্প বেশকিছু জায়গায় আপত্তি তুলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখা। এতে বলা হয়, ৫২টি বিদ্যালয় নির্বাচনের ভিত্তি কী তা আরো পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। এ সংখ্যা যথাযথ কি-না আরো পুনঃপরীক্ষা করা দরকার। প্রকল্পের আওতায় সব কেনাকাটা কার্যক্রমের জন্য ২ জন পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্বল্প পরিসরে একটি প্রকল্পে এ জাতীয় পরামর্শক নিয়োগের প্রয়োজন নেই। তবে এ বিষয়ে মাউশিতে সেসিপের আওতায় স্থাপিত অর্থ ও ক্রয় উইং-এ জাতীয় কাজে সহযোগিতা করতে পারে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য ২টি করে কম্পিউটার ও একটি ল্যাপটপ কেনার জন্য মোট ৩ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কম্পিউটার ও ল্যাপটপগুলো কী কাজে ব্যবহার হবে তা আরো স্পষ্ট হওয়া দরকার। অন্য কোনো প্রকল্পে এ জাতীয় সামগ্রী ব্যবহার হয়েছে কিনা তাও জানার দরকার। গবেষণার জন্য রাখা ৫০ লাখ টাকার পরিধি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের বই কেনার জন্য ২ লাখ টাকা প্রস্তাবকে অহেতুক বলা হয়েছে। দূরবর্তী স্থান থেকে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার জন্য ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫টি নৌকা কেনার যে প্রস্তাব করা হয়েছে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, এটা কতটা বাস্তবসম্মত ও প্রায়োগিক এবং এর পরিচালনা, মেরামত কীভাবে তা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। সেসিপ প্রকল্পের আওতায় দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ে ২০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামাদি দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০ হাজার প্রতিষ্ঠানের জন্য কেনা হয়েছে। দ্বৈততা পরিহার করার স্বার্থে প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় এ বিষয়ে ৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন নেই। ভবনে দ্বৈততা পরিহার করতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের ও রাজস্ব খাতের আওতায় নির্মিত অবকাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো মহিউদ্দীন বলেন, রোববার মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে সভা হবে। সভায় ডিপিপি যাচাই বাছাই করা হবে। পরিপূর্ণ ডিপিপি না হওয়া পর্যন্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে না বলে জানান তিনি। প্রকল্পের পটভূমি তুলে ধরে ডিপিপিতে বলা হয়, দেশের ১৬টি জেলার ১০ লাখ ৩২ হাজার হেক্টর এলাকা জলমগ্ন এবং নদী ভাঙন এলাকা। এসব এলাকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা একেবারে ভিন্ন। চরের দুর্গম এলাকায় দারিদ্রতা, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির এ অঞ্চলে শিক্ষা রয়েছে অনেক পিছিয়ে। ব্যানবেইসের তথ্যানুযায়ী, চরাঞ্চলে ১৬টি জেলার ৪১টি উপজেলা নিম্ন ও মাধ্যমিক পর্যায়ভুক্ত প্রায় ৮৮৮টি বিদ্যালয় রয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে নদী ভাঙনের কারণে অবকাঠামো ধ্বংস, নৌকার অভাবে স্কুলে অনুপস্থিত, দারিদ্র্যতা ও শিশুশ্রমের কারণে ব্যাপক ঝরে পড়ে। শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুল ছুটি হওয়াসহ নানামুখী সমস্যা। ফসল
কাটার সময় চরাঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক প্রকার অঘোষিত বন্ধ থাকে। কারণ সারা বছরের একটি ফসল ভালোভাবে না নিতে পারলে এক বছরের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। তাই শিশুরা ফসল তোলার সময় শ্রমিকের কাজ করে। এছাড়াও যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক সংকট তো রয়েছেই। আর দেশের সার্বিক অগ্রগতির মাঝে চরাঞ্চলের মানুষের জীবনে সব মৌলিক চাহিদা যেমন ঘাটতি রয়েছে তেমনি রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব। জীবিকার চরম অনিশ্চয়তায় চরের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মাধ্যমিক চালিয়ে যাওয়ার মতো অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের শুরুতেই তাই চরাঞ্চলে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রকল্প এলাকায় শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রথম ধাপে প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রামে ১২টি, গাইবান্ধায় ৬টি, টাঙ্গাইলে ৩টি, শরীয়তপুরে ৬টি, মুন্সীগঞ্জে ২টি, ফরিদপুরে ৯টি এবং মাদারীপুরে ৩টি, নোয়াখালীতে ৫টি, চাঁদপুরে ৩টি, ভোলায় ৪টি, পিরোজপুরে ১টি- মোট ৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। এ ৫২ স্কুলে প্রায় ৩৩ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মি-ডে মিলের ব্যবস্থা করা হবে। জীবন দক্ষতা বিষয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষার্থীদের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রণোদনা পুরস্কার প্রদান করা হবে। বিদ্যুৎবিহীন প্রতিষ্ঠানে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা, স্থানান্তরযোগ্য অবকাঠামোতে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন শ্রেণিকক্ষ করা, আসবাবপত্র সরবরাহ করা হবে।
প্রকল্পের খাতওয়ারি ব্যয় হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১৯ কোটি ৭ লাখ টাকা, ভাতা ১১ কোটি ৭ লাখ, পিআইইউ পরিচালনা ব্যয় ১৮ কোটি ৩ লাখ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ব্যয় ২৫ লাখ, প্রকল্পের অফিস ভাড়া ৬০ লাখ টাকা, শিক্ষার্থীদের জন্য যাতায়াতের জন্য নৌকা কেনা বাবদ ৫০ লাখ টাকা, প্রতিটি স্কুলে বই ও খেলাখুলা সামগ্রী কেনার জন্য আলাদা আলাদাভাবে ২ লাখ টাকা করে মোট ২ কোটি ৮ লাখ টাকা, মিড-ডে মিল বাবদ ব্যয় ৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা, পোশাক কেনায় ৯ কোটি ৮৭ লাখ, পুরস্কার বাবদ ৩ কোটি টাকা, গবেষণা বাবদ ৫০ লাখ, অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি টাকা। আর বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির জন্য প্রতি স্কুলে ৫ হাজার টাকা করে মোট ৫২ লাখ টাকা রাখা হয়েছে।
প্রকল্প বেশকিছু জায়গায় আপত্তি তুলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখা। এতে বলা হয়, ৫২টি বিদ্যালয় নির্বাচনের ভিত্তি কী তা আরো পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। এ সংখ্যা যথাযথ কি-না আরো পুনঃপরীক্ষা করা দরকার। প্রকল্পের আওতায় সব কেনাকাটা কার্যক্রমের জন্য ২ জন পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্বল্প পরিসরে একটি প্রকল্পে এ জাতীয় পরামর্শক নিয়োগের প্রয়োজন নেই। তবে এ বিষয়ে মাউশিতে সেসিপের আওতায় স্থাপিত অর্থ ও ক্রয় উইং-এ জাতীয় কাজে সহযোগিতা করতে পারে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য ২টি করে কম্পিউটার ও একটি ল্যাপটপ কেনার জন্য মোট ৩ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ কম্পিউটার ও ল্যাপটপগুলো কী কাজে ব্যবহার হবে তা আরো স্পষ্ট হওয়া দরকার। অন্য কোনো প্রকল্পে এ জাতীয় সামগ্রী ব্যবহার হয়েছে কিনা তাও জানার দরকার। গবেষণার জন্য রাখা ৫০ লাখ টাকার পরিধি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের বই কেনার জন্য ২ লাখ টাকা প্রস্তাবকে অহেতুক বলা হয়েছে। দূরবর্তী স্থান থেকে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার জন্য ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫টি নৌকা কেনার যে প্রস্তাব করা হয়েছে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, এটা কতটা বাস্তবসম্মত ও প্রায়োগিক এবং এর পরিচালনা, মেরামত কীভাবে তা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। সেসিপ প্রকল্পের আওতায় দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ে ২০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামাদি দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০ হাজার প্রতিষ্ঠানের জন্য কেনা হয়েছে। দ্বৈততা পরিহার করার স্বার্থে প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় এ বিষয়ে ৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন নেই। ভবনে দ্বৈততা পরিহার করতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের ও রাজস্ব খাতের আওতায় নির্মিত অবকাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো মহিউদ্দীন বলেন, রোববার মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে সভা হবে। সভায় ডিপিপি যাচাই বাছাই করা হবে। পরিপূর্ণ ডিপিপি না হওয়া পর্যন্ত অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে না বলে জানান তিনি। প্রকল্পের পটভূমি তুলে ধরে ডিপিপিতে বলা হয়, দেশের ১৬টি জেলার ১০ লাখ ৩২ হাজার হেক্টর এলাকা জলমগ্ন এবং নদী ভাঙন এলাকা। এসব এলাকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা একেবারে ভিন্ন। চরের দুর্গম এলাকায় দারিদ্রতা, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির এ অঞ্চলে শিক্ষা রয়েছে অনেক পিছিয়ে। ব্যানবেইসের তথ্যানুযায়ী, চরাঞ্চলে ১৬টি জেলার ৪১টি উপজেলা নিম্ন ও মাধ্যমিক পর্যায়ভুক্ত প্রায় ৮৮৮টি বিদ্যালয় রয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে নদী ভাঙনের কারণে অবকাঠামো ধ্বংস, নৌকার অভাবে স্কুলে অনুপস্থিত, দারিদ্র্যতা ও শিশুশ্রমের কারণে ব্যাপক ঝরে পড়ে। শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুল ছুটি হওয়াসহ নানামুখী সমস্যা। ফসল
কাটার সময় চরাঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক প্রকার অঘোষিত বন্ধ থাকে। কারণ সারা বছরের একটি ফসল ভালোভাবে না নিতে পারলে এক বছরের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। তাই শিশুরা ফসল তোলার সময় শ্রমিকের কাজ করে। এছাড়াও যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক সংকট তো রয়েছেই। আর দেশের সার্বিক অগ্রগতির মাঝে চরাঞ্চলের মানুষের জীবনে সব মৌলিক চাহিদা যেমন ঘাটতি রয়েছে তেমনি রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব। জীবিকার চরম অনিশ্চয়তায় চরের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মাধ্যমিক চালিয়ে যাওয়ার মতো অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের শুরুতেই তাই চরাঞ্চলে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রকল্প এলাকায় শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রথম ধাপে প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রামে ১২টি, গাইবান্ধায় ৬টি, টাঙ্গাইলে ৩টি, শরীয়তপুরে ৬টি, মুন্সীগঞ্জে ২টি, ফরিদপুরে ৯টি এবং মাদারীপুরে ৩টি, নোয়াখালীতে ৫টি, চাঁদপুরে ৩টি, ভোলায় ৪টি, পিরোজপুরে ১টি- মোট ৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। এ ৫২ স্কুলে প্রায় ৩৩ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মি-ডে মিলের ব্যবস্থা করা হবে। জীবন দক্ষতা বিষয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। শিক্ষার্থীদের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রণোদনা পুরস্কার প্রদান করা হবে। বিদ্যুৎবিহীন প্রতিষ্ঠানে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা, স্থানান্তরযোগ্য অবকাঠামোতে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন শ্রেণিকক্ষ করা, আসবাবপত্র সরবরাহ করা হবে।
প্রকল্পের খাতওয়ারি ব্যয় হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ১৯ কোটি ৭ লাখ টাকা, ভাতা ১১ কোটি ৭ লাখ, পিআইইউ পরিচালনা ব্যয় ১৮ কোটি ৩ লাখ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ব্যয় ২৫ লাখ, প্রকল্পের অফিস ভাড়া ৬০ লাখ টাকা, শিক্ষার্থীদের জন্য যাতায়াতের জন্য নৌকা কেনা বাবদ ৫০ লাখ টাকা, প্রতিটি স্কুলে বই ও খেলাখুলা সামগ্রী কেনার জন্য আলাদা আলাদাভাবে ২ লাখ টাকা করে মোট ২ কোটি ৮ লাখ টাকা, মিড-ডে মিল বাবদ ব্যয় ৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা, পোশাক কেনায় ৯ কোটি ৮৭ লাখ, পুরস্কার বাবদ ৩ কোটি টাকা, গবেষণা বাবদ ৫০ লাখ, অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি টাকা। আর বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির জন্য প্রতি স্কুলে ৫ হাজার টাকা করে মোট ৫২ লাখ টাকা রাখা হয়েছে।
No comments