কাতারে কোরআন প্রতিযোগিতা: বাংলাদেশিদের ঈর্ষণীয় সাফল্য
কাতারের
দোহায় অনুষ্ঠিত তিজানুন নুর আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় ঈর্ষণীয়
সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশের খুদে কারি ও হাফেজরা। তিলাওয়াত ও হিফজ (মুখস্থ
পড়া) শীর্ষক দুটি বিভাগে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় হিফজ বিভাগে প্রথম,
দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশের খুদে হাফেজরা। অন্য বিভাগ
‘তিলাওয়াত’-এ সুমধুর কণ্ঠের ছোঁয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে
বাংলাদেশের খুদে কারিরা। তিজানুন নুর আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় এবার
৫৪টি দেশের কয়েক শ প্রতিযোগী অংশ নেয়। এতে সবাইকে তাক লাগিয়ে বাংলাদেশি
শিশু আবু রায়হান একাধারে হিফজ বিভাগে প্রথম ও তিলাওয়াত বিভাগে চতুর্থ স্থান
অর্জন করে। ১০ মার্চ সমাপনী অধিবেশনে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া
হয়। তবে প্রতিযোগিতার সব কটি পর্ব ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্প্রচার
হবে আসন্ন রমজানে জিম টেলিভিশনের পর্দায়। কাতারভিত্তিক আল জাজিরা টিভি
চ্যানেলের শিশুতোষ চ্যানেল ‘জিম’ টেলিভিশনের জনপ্রিয় বার্ষিক অনুষ্ঠান
‘তিজানুন নুর’। প্রতিবছর রমজান উপলক্ষে জিম টেলিভিশনে প্রচারের জন্য সারা
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ভিডিও রেকর্ডের মাধ্যমে বাছাই করে নির্বাচিত সেরা
খুদে হাফেজ ও কারিদের নিয়ে আসা হয় দোহায়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় তুমুল
প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ প্রতিযোগিতা। এবারের প্রতিযোগিতায় বিচারকের
দায়িত্বে ছিলেন মিসর, লেবানন, আলজেরিয়া ও কাতারের পাঁচ অভিজ্ঞ বিচারক।
এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল
দোহায় যায়। এদের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় হিফজ বিভাগে প্রথম হয় আবু
রায়হান। নারায়ণগঞ্জের ১২ বছর বয়সী এই শিশুর বাবার নাম শহীদুল্লাহ। দ্বিতীয়
স্থান অধিকারীর নামও আবু রায়হান। তার বাবার নাম নুরুল ইসলাম। আর তৃতীয়
স্থান অর্জন করে লোকমান সাইফি। অন্যান্য পুরস্কার ও উপহারের পাশাপাশি
যথাক্রমে ১০ হাজার, ৭ হাজার ও ৫ হাজার রিয়াল নগদ অর্থ পুরস্কার তুলে দেওয়া
হয় এই তিনজনের হাতে। তিলাওয়াত বিভাগে শেষ পর্বে টিকে থাকা ৫১ প্রতিযোগীর
মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে যথাক্রমে মালয়েশিয়া ও মরক্কোর দুই
খুদে কারি।
এই বিভাগে তৃতীয় স্থান অর্জন করে বাংলাদেশের শিশু মাহমুদুল
হাসান এবং চতুর্থ স্থান অর্জন করে হিফজ বিভাগে প্রথম হওয়া আবু রায়হান। এ
বিভাগে বিজয়ীরা যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৪০ হাজার, ৩০ হাজার ও ২০ হাজার এবং ১০
হাজার রিয়াল নগদ অর্থ পুরস্কার পায়। ‘তিজানুন নুরে’র প্রযোজক ইউনুস আল-আরাজ
প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার ছিল এই প্রতিযোগিতার সপ্তম আসর। এবারই প্রথম একটি
বিভাগের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান কোনো একক দেশ জয় করে নিয়েছে। দেশটির
নাম বাংলাদেশ। তবে আমরা এতে খুব বেশি অবাক হইনি। গত আয়োজনগুলোতেও দেখেছি,
কোরআন তিলাওয়াত ও মুখস্থ করার ব্যাপারে বাংলাদেশ অসামান্য ভূমিকা রাখছে।
৫৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের এই অর্জন তাই খুবই স্বাভাবিক।’ ইউনুস আরও
বলেন, ‘প্রতিযোগিতার ফলাফল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে
প্রতিযোগী ও বিজয়ীদের নিয়ে সব অনুষ্ঠান আমরা ধারণ করে রেখেছি। ১ রমজান থেকে
জিম টেলিভিশনে এর প্রচার শুরু হবে।’ অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে উপস্থিত
ছিলেন কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদ। প্রথম আলোকে তিনি
বলেন, অন্য অতিথিদের সঙ্গে আমিও বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছি।
অনুষ্ঠানে যখন বারবার বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হচ্ছিল, তখন দারুণ অনুভূতি
হচ্ছিল আমার। আমি এই শিশুদের প্রতিভা দেখে উজ্জীবিত বোধ করছি। দূতাবাসের
পক্ষ থেকে এই শিশু হাফেজ ও কারিদের সম্মাননা জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু
পরদিনই তারা দেশে চলে যায়। ফলে সময়স্বল্পতার কারণে সেটি আর সম্ভব হয়ে
ওঠেনি।’
No comments