সাধারণ শিক্ষার্থীদের দুর্নীতি ভাবনা by মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার
সরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় লেখাপড়া ও গবেষণার মান ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। এক সময় যে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ছিল, তার অবস্থা আজ তেমন নেই। রাজশাহী,
চট্টগ্রাম আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও সন্তোষজনক নয়।
শিক্ষাবিদদের মধ্যে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা
হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এ বিষয়ে
পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলমান রেখেছে। কিন্তু এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ইতিবাচক ফল
দেখা যাচ্ছে না। ২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উদযাপনের
প্রাক্কালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক উন্নয়ন ও গৌরবময় ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার
লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। অন্য বড় সরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও তাদের লেখাপড়া ও গবেষণার অধোগতি নিয়ে চিন্তিত। এ নিয়ে
সেমিনার ওয়ার্কশপ হচ্ছে। দেশপ্রেমিক অধ্যাপকরা এসব বিষয় নিয়ে অনেক সেমিনার
ওয়ার্কশপ করেছেন এবং করছেন। কিন্তু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়ার
মান বাড়ছে না। বরং দিন দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লেখাপড়া ও গবেষণার
অবনমন হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে গবেষকরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার পদে পদে ১৯৭৩
সালের অধ্যাদেশের লঙ্ঘন, ছাত্র-শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি,
বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি বৃদ্ধি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপসহ আরও অনেক বিষয়কে
দায়ী করেন।
তবে বর্তমানে মনে হয় দলীয় রাজনীতির দখলদারিত্ব এবং অনিয়ম ও
দুর্নীতির আধিক্যই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবনমনের জন্য বেশি দায়ী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক উন্নয়নের জন্য ইউজিসি বিশ্বব্যাংকের আর্থিক
সহায়তায় হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যানহান্সমেন্ট প্রজেক্ট চালাচ্ছে। এছাড়া
ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স সেল গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর
প্রতিটি বিভাগ ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কর্তৃক ওয়াশিংটন থেকে ডিজাইন করা নীতিমালা
অনুযায়ী সেলফ অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে
তথ্য সংগ্রহ করে আত্মসমালোচনার মাধ্যমে বিভাগীয় উন্নয়ন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
এসব প্রকল্পে অনেক অর্থ ব্যয় হলেও কাজের কাজ হচ্ছে কম। এসব কাজের মধ্য
দিয়ে একাডেমিক উন্নয়ন যতটা হচ্ছে, তার চেয়ে নবীন শিক্ষকদের ভাউচার তৈরিতে
পারদর্শিতা অর্জন হচ্ছে বেশি। ব্যাপারটি হয়েছে অনেকটা এ রকম- আগে খড়ের ঘরের
মসজিদ ছিল, যেখানে অনেক মুসল্লি দিনরাত ইবাদত-বন্দেগি করতেন, কিন্তু এখন
পাকা দালানের টাইলস লাগানো মসজিদ হলেও সেখানে মুসল্লির সংখ্যা কমে গেছে।
বিদেশি টাকায় স্বদেশি শিক্ষা উন্নয়নের প্রজেক্টগুলোতে খাজনার চেয়ে বাজনা
বেশি। কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও শিক্ষক নিয়োগে পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠা
করতে না পারায় শিক্ষার উন্নয়ন হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক
সম্পর্ক বিভাগ ও ইতিহাস বিভাগ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে
জার্মান সহায়তায় একাধিক ওয়ার্কশপ করেছে। সেসব ওয়ার্কশপে উপস্থাপিত
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমূলক লেখা নিয়ে গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে (যেমন, ইমতিয়াজ
আহমেদ ও ইফতেখার ইকবাল সম্পাদিত ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা মেকিং আনমেকিং
রিমেকিং এবং এর বাংলা ভার্সন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নতুন যুগের সন্ধানে)। এ
গ্রন্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর
একাডেমিক উন্নতির জন্য গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন।
কিন্তু ওই পর্যন্তই। কে
শোনে কার কথা। তবে সম্প্রতি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনিয়ম-দুর্নীতি
বাড়লেও তাতে সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী জড়িত থাকেন না। যখন যে রাজনৈতিক দল
রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে, এসব অনিয়ম ও দুর্নীতিতে সাধারণত সে দলের নেতাকর্মীরাই
জড়িত থাকেন বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা তারাই ভোগ করেন।
ছাত্রাবাসগুলো তাদেরই ছাত্র সংগঠনের দখলে থাকে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা
হলেন ভুক্তভোগী। এরা চায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সবকিছু নিয়মানুযায়ী স্বাভাবিকভাবে
চলুক। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শান্তিপ্রিয় শিক্ষার্থীরা তাদের
প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কমই ভাবেন। সম্প্রতি আমি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম ও
দুর্নীতির শিকার হন কিনা সে বিষয়ে জানতে চেষ্টা করি। এ লক্ষ্যে আমি
টিউটোরিয়াল পরীক্ষার সুযোগ গ্রহণ করে চতুর্থ বর্ষ বিএসএস সম্মান শ্রেণীর
‘দুর্নীতি ও রাজনীতি’ শীর্ষক কোর্সের শিক্ষক হিসেবে আমার টিউটোরিয়াল
গ্রুপের শিক্ষার্থীদের একটি অ্যাসাইনমেন্ট দিই। অ্যাসাইনমেন্টটি ছিল এ রকম-
তোমার চার বছরের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাজীবনে তুমি যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির
শিকার হয়েছ বা প্রত্যক্ষ করেছ তার একটি বর্ণনা লিখ। কোন বিষয়গুলোকে তারা
দুর্নীতি বা অনিয়ম হিসেবে চিহ্নিত করবে সে সম্পর্কে তাদের সঙ্গে টিউটোরিয়াল
ক্লাসে খোলামেলা মতবিনিময় করা হয়। কোনো ব্যক্তিগত নাম উল্লেখ না করে,
ব্যক্তিগত আক্রমণ এড়িয়ে কীভাবে তারা বিষয়গুলোকে একাডেমিকভাবে তুলে ধরবে সে
সম্পর্কে তাদের ধারণা প্রদান করি। শিক্ষার্থীদের অনেকেই গতানুগতিক
অ্যাসাইনমেন্টের পরিবর্তে এ রকম একটি নতুন ধরনের কাজ পেয়ে আনন্দিত ও
রোমাঞ্চিত হয় বলে আমার কাছে মনে হয়। আমি তাদের এ বলে সতর্ক করি, তোমরা কোনো
কিছু বানিয়ে লিখবে না।
যা দেখেছ, যে অভিজ্ঞতা নিজের শিক্ষাজীবনে ঘটেছে,
সেসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়েই লিখবে। আমার গ্রুপের ২৫ জন শিক্ষার্থী সময়মতো
তাদের টিউটোরিয়াল অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়। আমি সেগুলো অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে
পড়ে অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারি। আবার অনেক কিছু যা আমি তাদের লেখায় আশা
করেছিলাম, তা তাদের অ্যাসাইনমেন্টে পাইনি। তাদের তুলে ধরা দুর্নীতি-অনিয়মের
প্রধান দিকগুলো আমি সম্মানিত পাঠকদের কাছে তুলে ধরব। সাধারণ শিক্ষার্থীরা
মোটা দাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক দুর্নীতি-অনিয়মের
অনেক বিষয় তাদের লেখায় তুলে ধরে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের
দুর্নীতি-অনিয়ম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সূত্র উল্লেখ করে কেউ কেউ তাদের লেখায়
সন্নিবেশিত করে। তবে তাদের লেখাগুলো পড়ার পর আমার ধারণা হয়,
বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বত্র দুর্নীতি-অনিয়ম ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেবা নিতে গিয়ে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছে। তারা
বিভাগীয় প্রশাসন, হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, কারও ওপর সন্তষ্ট নয়।
তবে তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে একাডেমিক অনিয়ম ও দুর্নীতির ওপর।
তারা সবাই তাদের লেখায় এ বিষয়টির উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে তারা যে বিষয়গুলো
এনেছে, তার মধ্যে রয়েছে- সময়মতো ক্লাস না হওয়া, সময়মতো পরীক্ষা না হওয়া,
পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে অতিরিক্ত বেশি সময় লাগা এবং সে কারণে সেশন জট
সৃষ্টি হওয়া। আরও উপস্থাপন করেছে অনেক সম্মানিত শিক্ষকের মূল দায়িত্বে
অবহেলা করে অন্যত্র পাঠদান করা। একদিনে হয়তো ৫টি ক্লাস হওয়ার কথা ছিল,
কিন্তু দেখা গেল সেদিন মাত্র ২টি বা ৩টি ক্লাস হয়েছে। বাকি শিক্ষকরা ক্লাস
নেননি।
তারা ছুটিতেও ছিলেন না। তারা যে ক্লাস নেবেন না সে সম্পর্কে
শিক্ষার্থীদের অনেক সময় অবহিতও করা হয় না। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে
শ্রেণীকক্ষবিমুখ হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয় বলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করে।
তবে সব সম্মানিত শিক্ষকই যে ক্লাসে ফাঁকি দেন, তারা তা মনে করে না। তাদের
কেউ কেউ এমনও লিখেছে, অনেক সম্মানিত শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বিভাগে
উপস্থিত থেকেও ক্লাসে যান না, যা দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে বলে তারা মনে করে।
শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ শিক্ষক নিয়োগে পেশাদারিত্বের অভাব ও রাজনৈতিক
প্রভাবের প্রসঙ্গও তাদের অ্যাসাইনমেন্টে উল্লেখ করেছে। কতিপয় শিক্ষার্থী
লিখেছে, দু’একজন শিক্ষক ক্লাসে এসে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় আলোচনা করে এবং অনেকে
সময়মতো ক্লাসে না এসে দেরি করে আসেন। তারা সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের
কিছুসংখ্যক শিক্ষকের বিভাগীয় দায়িত্ব পালনের চেয়ে অন্যত্র পাঠদান এবং
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অধিকতর ব্যস্ত থাকার প্রসঙ্গও তাদের লেখায় উল্লেখ করে।
প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থী বিভাগীয় সেমিনার থেকে প্রাপ্ত সেবা সম্পর্কে
অসন্তুষ্ট। সেমিনার তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধেও শিক্ষার্থীদের অনেক অভিযোগ।
প্রায় সময় সেমিনার বন্ধ থাকা, বই থাকলেও অনেক সময় তাদের বই দিতে টালবাহানা
করার অভিযোগ রয়েছে তাদের প্রায় সবার লেখায়। একই রকম অভিযোগ রয়েছে কেন্দ্রীয়
লাইব্রেরির বিরুদ্ধেও। সেখানে যারা বই খুঁজে দেয়ার দায়িত্বে আছেন, তারা
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন না। কয়েকটি বই খুঁজতে বললে বিরক্তি
প্রকাশ করেন। অনেকেই শিক্ষার্থীদের সেবা দানের পরিবর্তে মোবাইলে খোশগল্প
করেন বা ফেসবুকে সময় কাটান বলেও কেউ কেউ উল্লেখ করেছে। তা ছাড়া বাইরে থেকে
বই লাইব্রেরির ভেতরে নিয়ে পড়তে না দেয়ায়ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কিছু সংখ্যক
শিক্ষার্থী। সাধারণ শিক্ষার্থীরা শাটল ট্রেনের যাতায়াত নিয়ে
দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ করেছে। সেখানে সবার সমান সুযোগ না থাকাকে তারা
দুর্নীতি হিসেবে বিবেচনা করেছে।
জানিয়েছে, বগিভিত্তিক গ্রুপের নেতাদের জন্য
বিশেষ বিশেষ বগিতে বিশেষ বিশেষ আসন বরাদ্দ করা থাকে। সেসব আসনে অন্য কারও
বসার অধিকার নেই। যদি কেউ ওইসব আসনে বসে, তবে তাদের উঠিয়ে দেয়া হয়। অনেক
শিক্ষার্থীই এ রকম হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়েছে বলে দাবি করেছে। তা ছাড়া
ট্রেনের নিরাপত্তা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দুর্নীতি
ভাবনায়। হল প্রশাসনের বিরুদ্ধেও তাদের একই অভিযোগ। সেখানে একটি রাজনৈতিক
দলের দখলে থাকে হলের কর্তৃত্ব। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন সে দলের ছাত্র
সংগঠনের নেতাদের হলে মাতব্বরি করা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। অনেকে সিট বরাদ্দ
পেয়েও হলে থাকতে পারে না। হলের খাবারের মান নিয়েও শিক্ষার্থীরা অসন্তুষ্ট।
তারা খাবারের সঙ্গে পরিবেশিত মাছ বা মাংসের টুকরার আকৃতি এবং ডালের ঘনত্ব
নিয়ে জোরালো আপত্তি তুলেছে। হলে পড়াশোনার পরিবেশ নেই বলেও অনেকে দাবি
করেছে। হলে রাতে কেউ কেউ মাদক সেবন করে আপত্তিকর আচরণ করে বলেও কোনো কোনো
শিক্ষার্থী লিখেছে। শিক্ষার্থীদের জন্য যে তিনদিন মার্কেটিং বাস শহরে
যাতায়াত করার কথা, তা অনেক দিনই নাকি যায় না। এ ব্যাপারে পরিবহনে ফোন করে
তারা একই উত্তর শুনতে অভ্যস্ত, গাড়ি খারাপ হয়ে গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা
আরও অভিযোগ করেছে মেডিকেল সেন্টারের বিরুদ্ধে। সেখানে জরুরি সময়ে
অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস না পাওয়ার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। যার যে অসুখই হোক
না কেন, শিক্ষার্থীদের মেডিকেল থেকে কেবল প্যারাসিটামল, গ্যাসের বড়ি এবং
খাবার স্যালাইন জাতীয় ওষুধ দেয়া হয় বলে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছে। তাদের
অনেকেরই অভিযোগ, তারা মেডিকেলে গেলে তাদের অসুখের বর্ণনা ভালো করে না শুনেই
ডাক্তার সাহেব প্রেসক্রিপশন লিখে ফেলেন। ফলে তাদের সুচিকিৎসা হয় না। প্রায়
আড়াই হাজার শিক্ষার্থী এবং ৯ শতাধিক শিক্ষকের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে
কোনো বইয়ের দোকান না থাকাকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অশোভন মনে করে প্রশ্ন
তুলেছে, একটি বই কিনতে হলে আমাদের কেন শহরের বইয়ের দোকানে যেতে হবে? এছাড়া
ক্যাম্পাসে চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি বৃদ্ধির কথাও কয়েকজন শিক্ষার্থীর
অ্যাসাইনমেন্টে উঠে এসেছে। একজন শিক্ষার্থীর দু’বার মোটরসাইকেল চুরি হয়ে
গেছে। সে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সংশ্লিষ্টদের সহায়তা নিয়েও তা উদ্ধার
করতে পারেনি। ফলে যেসব শিক্ষার্থী শহরে টিউশনি করে, তারা রাতে ফেরার সময়
নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। সন্ত্রাস এখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটি
নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটল ট্রেন থেকে
নেমে গেট দিয়ে ঢুকলেই বাঁ পাশে একটি জলকামান চোখে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় হল
লেখাপড়ার জায়গা।
কামানের স্থান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হবে কেন? কামান তো থাকার
কথা যুদ্ধক্ষেত্রে। তবে কি আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র ক্যাম্পাসকে
যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছি? আমি সুনিশ্চিত যে, আমার টিউটোরিয়াল গ্রুপের সব
শিক্ষার্থীই এ জলকামানটি দেখেছে। কিন্তু আমি অবাক হয়েছি যে তাদের কারও
অ্যাসাইনমেন্টে এ বিষয়টি তারা লেখেনি। এ বিষয়টি আমাকে অবাক করেছে। এ বিষয়টি
এড়িয়ে যাওয়ার কারণ কী? হয়তো শিক্ষার্থীদের কাছে সন্ত্রাস এতই নৈমিত্তিক ও
গা সওয়া হয়ে গেছে যে, এরা একে স্বাভাবিক মনে করছে। এভাবে চলতে থাকলে আর
কিছুদিন পর হয়তো ক্যাম্পাসে তারা যুদ্ধবিমান বা ক্ষেপণাস্ত্র দেখলেও হয়তো
অবাক হবে না। আমি মনে করি শিক্ষার্থীরা তাদের আলোচ্য টিউটোরিয়াল
অ্যাসাইনমেন্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রসঙ্গ উত্থাপন
করেছেন তা মিথ্যা নয়। এসব বিষয় আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত এ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে স্বচ্ছ, সুন্দর, নিরাপদ, শিক্ষার্থীবান্ধব ও
দুর্নীতিমুক্ত করে গড়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহণ করা। তবে ১৯৭৩ সালের সরকারি
বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশকে অপরিবর্তিত ও অকার্যকর রেখে, তীব্র দলীয় রাজনীতি
চর্চার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করার কাজটি যে
সহজ নয়, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। আমি চাই আমার প্রিয় টিউটোরিয়াল শিক্ষার্থীরা
যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রসঙ্গ তাদের টিউটোরিয়াল অ্যাসাইনমেন্টে তুলে
ধরেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
এসব বিষয় নিয়ে ভাবুক এবং এর সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করুক।
ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার : অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
akhtermy@gmail.com
akhtermy@gmail.com
No comments