বর্ষায় ভোগান্তির শঙ্কা by মুছা বিন মোহাম্মদ
বর্ষার
মওসুম শুরু। যে কোন সময় হতে পারে প্রবল বৃষ্টি। সামান্য বৃষ্টিতেই প্লাবিত
হয়ে পড়ে রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকা। তার উপর বর্ষার আগ মুহূর্তে নগরের
বিভিন্ন জায়গায় এলোমেলো গতিতে চলছে সড়ক খননের কাজ। তাই দুর্ভোগের পাশাপাশি
নগরবাসীর মধ্যে ভর করছে ভোগান্তির শঙ্কা। সেই শঙ্কা লাঘবে নগর কর্তৃপক্ষের
পক্ষ থেকে নেই দৃশ্যমান কোনো প্রস্তুতি। এই অবস্থায় বৃষ্টি শুরু হলে চলমান
ভোগান্তি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। চলমান
খনন কাজ এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে
সড়ক ও ফুটপাথ সংস্কারের টুকটাক কাজ হতে দেখা গেছে। তবে বর্ষার দুর্ভোগ
মোকাবিলায় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে কোথাও কোথাও সামান্য আকারে কাজ
করলেও তা ছিল না গঠনমূলক। এবার বর্ষার আগ দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সড়ক কেটে
শুরু হয়েছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি মহাযজ্ঞ। বৃষ্টি
শুরু হলেই সেই উন্নয়ন হবে হিতে বিপরীত। সরজমিন দেখা যায়, দক্ষিণ সিটি
করপোরেশনের অধীনে ধানমন্ডি-২৭ এর দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক ড্রেজার
দিয়ে ভারী বড় মাপের ক্যানেল বসানোর কাজ। সড়কের মাটি, বালি ও সিমেন্টের
স্তূপে সড়ক সঙ্কীর্ণ হওয়ায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ। এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলে
অবস্থা বেগতিক হয়ে এলাকাবাসীর মাঝে নেমে আসবে ভয়াল দুর্ভোগ। সড়ক কাটাকাটির
কাজ চলছে ওয়াসার আওতাধীন। এই প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিক আশরাফুল বলেন, এক মাস
ধরে খোঁড়াখুঁড়ি ও সংস্কারের কাজ চলছে। এ সময়ের মধ্যে কাজের অর্ধেক সমাপ্ত
হয়েছে। বাকি কাজ সম্পূর্ণ করতে আরো প্রায় এক মাস সময় লাগবে। দুর্ভোগের কথা
উল্লেখ করে এ শ্রমিক বলেন, যদি এ সময়ে বৃষ্টি শুরু হয় তাহলে ক্যানেল বসানো
বন্ধ হয়ে যাবে। তখন এ এলাকা বন্যায় পরিণত হবে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দ্রুত
কাজ শেষ করতে চাচ্ছি। স্থানীয় বাসিন্দা ইহসানুল করিম বলেন, সড়কে কাজ চলতে
থাকায় অনেকদিন ধরে কষ্টে আছি। দক্ষিণ সিটির অংশের লালমাটিয়ায় ঢিলেঢালাভাবে
চলছে সড়ক কেটে পয়ঃনিষ্কাশনের পাইপ বসানোর কাজ। রাস্তার অবস্থা বেহাল হওয়ায়
পথচারীরা চলতে পারছে না স্বাচ্ছন্দ্যে। এলাকাটিতে যে কোনো সময় বর্ষা শুরু
হলে ভোগান্তির মাত্রা হু হু করে বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন শ্রমিক ও
এলাকাবাসী। পাইপ বসানোর শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, খুব অল্প সময়ে
এই সব কাজ শেষ করা সম্ভব না। ড্রেজারের মাধ্যমে সড়ক কেটে ভারি পাইপ মাটির
নিচে বসাতে হয়। এমতাবস্থায় বৃষ্টি হলে সীমাহীন ভোগান্তি শুরু হবে বলে জানান
তারা। উত্তর সিটি করপোরেশনের অনেক এলাকাতেও চলছে রাস্তা খননের কাজ।
মগবাজারের দিলু রোড ও ডক্টর রোডে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় এক মাস ধরে সরু
রোডগুলো খনন করে ভারী বড় পাইপ বসানোর কাজ করছেন অসংখ্য শ্রমিক। দুর্গন্ধময়
নোংরা কাদামাটি ফেলে রাখছে সড়কজুড়ে। এতে খুব কষ্টে চলাচল করতে হচ্ছে
এলাকাবাসীর। স্থানীয় বাসিন্দা আকবর মিয়া বলেন, সারা বছর খবর নেই। এখন ভালো
সড়ক কেটে গর্ত করে নিয়েছে। সড়ক দিয়ে হাঁটার জো নেই। ধীর গতিতে সড়ক মেরামতের
কাজ হচ্ছে। কবে এই দুর্ভোগ শেষ হবে বলা মুশকিল। যদি এ সময়ে বৃষ্টি হয়
পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। এই প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ
শ্রমিক হায়দার আলী বলেন, সড়কটি খুবই সরু। এর মধ্যে গর্তের নিচ দিয়ে পানি
প্রবাহিত হচ্ছে। মাটি কেটে পাইপ বসিয়ে নির্মাণ কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে এ
সময়ে বৃষ্টি হলে কাজ বন্ধ রাখতে হবে বলে জানান তিনি। শ্রমিকরা জানান,
প্রায় ১ কিলোমিটারের এ সড়কের কাজ এক মাস ধরে কাটাকাটি করছি। বাকিটুকু শেষ
করে সম্পন্ন করতে আরো এক মাস লেগে যাবে। শ্রমিক বেশি হলে কাজ দু্রত শেষ
হতো। কর্তৃপক্ষের ওপর সব নির্ভর করে। অল্প সময়ে কাজ শেষ করতে তাদের তেমন
কোনো ভূমিকা নেই বলে জানান তারা। এদিকে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সড়ক কাটাকাটির
কাজ চলছে বনশ্রী সড়কে। শীতকাল পেরিয়ে গরমকাল চলে এলেও সড়কের কাজে যেন
পরিবর্তন নেই। স্থির ও ধীর গতিতে চলছে সড়ক খনন ও পাইপ বসানোর কাজ। এতে
ধুলাবালুর মধ্য দিয়ে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
তেমনি তারা বর্ষায় বৃষ্টির পানির ভোগান্তির শঙ্কা প্রকাশ করছেন। বনশ্রীর
বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবদুল খালেক বলেন, অনেকদিন ধরে এ সড়কের খনন কাজ চলছে।
কচ্ছপ গতিতে কাজের গতি থাকায় শেষ হচ্ছে না এ যন্ত্রণা। আবার বর্ষা শুরু
হলে পোহাতে হবে আরেক যন্ত্রণা। দেখার যেন কেউ নাই। কর্মরত শ্রমিকরা দিনের
পর দিন কাজ করে গেলেও কাজ দু্রত শেষ করার ক্ষেত্রে তাদের তেমন হাত নেই বলে
জানান তারা। এ বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কুদরত
উল্যাহ বলেন, সড়কের কাজ করলে তো একটু ভোগান্তি হবেই। এসব কাজ শেষ করতে
কোথাও কোথাও ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এছাড়া বর্ষায়ও সড়কের
কাজ সম্পূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনের ওয়াসার আওতাধীন ধানমন্ডি-২৭ সড়কের বিষয়ে
ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, নগরবাসীর ভোগান্তির কথা মাথায়
রেখেই কাজ দু্রত শেষ করছি। বাকি কাজ কয়েকদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
No comments