মাধ্যমিকের ভালো ফল-সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতির সাফল্য

মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে রেকর্ডসংখ্যক পরীক্ষার্থী, পাসের হারেও রেকর্ড। কৃতী শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন। তারা পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজের মুখ উজ্জ্বল করেছে। তাদের সবার কাছেই আমাদের অনেক প্রত্যাশা এবং এটা পূরণে শিক্ষাজীবনের পরবর্তী ধাপগুলোতেও ভালো ফল করা চাই।


গতবারের দুটির স্থলে এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাতটি বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু করা হয়। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ছিল। ফল বিপর্যয়ের শঙ্কাও প্রকাশ করা হতে থাকে কোনো কোনো মহল থেকে। কিন্তু কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার খাতায় মেধা ও সৃজন ক্ষমতার স্বাক্ষর রাখতে পেরেছে। ভবিষ্যতে সব বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু হলেও শিক্ষার্থীদের এর সঙ্গে মানিয়ে চলতে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। তবে পাসের উচ্চহার এবং মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় ৭৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর প্রতিটি বিষয়ে ৮০ শতাংশের বেশি নম্বর পাওয়ার তথ্য থেকে এটা কোনোভাবেই বলা যাবে না যে, আমাদের স্কুলগুলোতে শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পেঁৗছে গেছে। বিশ্বমানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে যুগোপযোগী পাঠ্যসূচি প্রণয়নের তাগিদ যথেষ্টই জোরালো। এ জন্য পাঠ্যবই আরও উন্নত ও আধুনিক করতে হবে। একই সঙ্গে শ্রেণীকক্ষে উন্নত পদ্ধতিতে পাঠদানের জন্য আরও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগদানও অপরিহার্য। এ জন্য শিক্ষকদের বেতন-ভাতা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি নিয়োগ প্রক্রিয়া হওয়া চাই স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত। শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ও অভিভাবকদের সমন্ব্বয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এসব পদক্ষেপ নেওয়া হলে শিক্ষার মান বৃদ্ধির কিছু শর্ত পূরণ হবে বলে আমরা মনে করি। বরাবরের মতো এবারও প্রতিটি বোর্ডে সেরাদের সেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে নির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক স্কুল। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণী থেকেই বাছাই করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে চলে শিক্ষা কার্যক্রম। তদুপরি রয়েছে কোচিং সুবিধা। অভিভাবকদের আর্থিক সচ্ছলতাও যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। এর বিপরীতে রয়েছে সাধারণ মানের বিপুলসংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান; সেরাদের সেরার তালিকায় যেতে না পারার জন্য যাদের দায়ী করা যথার্থ হবে না, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল এবং শিক্ষার্থীদের পারিবারিক পরিবেশও যথেষ্ট প্রতিকূল। এ অবস্থা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে সরকারের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদান, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই সরবরাহ, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছাত্রীকে বৃত্তি প্রদান প্রভৃতি সরকারি পদক্ষেপ শিক্ষার প্রসারে সহায়ক হয়েছে। শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ এবং তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের আরও যত্নবান হতে হবে এবং এ জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই। পাশাপাশি মানসম্পন্ন কলেজ গড়ে তোলাও জরুরি। দেশে 'ভালো স্কুলের' মতোই 'ভালো কলেজের' সংখ্যাও হাতেগোনা। এমনকি জিপিএ-৫ পাওয়া সব শিক্ষার্থীর জন্যও 'ভালো কলেজগুলোতে' ভর্তি হওয়া নিশ্চিত নয়। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্যও সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার বিস্তার এবং মান বৃদ্ধিতে সমাজের ভূমিকা বাড়ানোর কথাও ভাবতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.