বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-সময় মেনে চলছেন না চিকিৎসকেরা by শিশির মোড়ল ও মুসলিমা জাহান

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বহির্বিভাগে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে টিকিট কাউন্টারে রোগীর লম্বা সারি দেখা যায় প্রতিদিন। আটটা থেকে রোগী দেখা শুরু হয়। গত সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকটি বিভাগে ওই সময় চিকিৎসক এসে পৌঁছাননি।


২৬ জুন অর্থোপেডিকস (কক্ষ-১), শিশু নেফ্রোলজি (কক্ষ-৩), নিউরোসার্জারি (কক্ষ-১০), কার্ডিওলজি (কক্ষ-২৪/২৫) বহির্বিভাগে কোনো চিকিৎসক সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত এসে পৌঁছাননি। প্রতিটি কক্ষের সামনে ছিল রোগীর ভিড়। একই ঘটনা দেখা গিয়েছিল ২১ জুন সকালে। সেদিন মনোরোগবিদ্যা বিভাগ (কক্ষ-৩৯), নিউরোসার্জারি (কক্ষ-১) ও অর্থোপেডিকস (কক্ষ-১) বহির্বিভাগে সকাল সাড়ে আটটায় চিকিৎসক ছিলেন না।
বহির্বিভাগ শুধু নয়, অন্তর্বিভাগেও ঠিক সময়ে চিকিৎসকেরা উপস্থিত হন না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানের মূল কাজের সময় সকাল আটটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। অনেক চিকিৎসক এই সময় মানছেন না। চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব মো. শারফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ চিকিৎসক (মেডিকেল কর্মকর্তা, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক) সময় মানেন না। তবে উপাচার্যের কার্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদস্থ কর্মকর্তার দাবি, ২৫ শতাংশ চিকিৎসক সময় মানছেন না।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেশ কিছু চিকিৎসক নিয়মিতই দেরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। তাঁদেরই একটি অংশ আগেভাগে চলে যান। শৃঙ্খলা ভাঙার জন্য কাউকে শাস্তি দেওয়া হয় না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, লিখিত কর্মপরিধি (জব ডেসক্রিপশন) না থাকা, নজরদারির দুর্বলতা এবং দলীয় রাজনীতি পরিস্থিতি এমন করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং চর্ম ও যৌনব্যাধি বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম জাকারিয়া বলেন, সব পেশা বা প্রতিষ্ঠানে কিছু ব্যক্তির মধ্যে শৃঙ্খলা না মানার প্রবণতা থাকে, বিএসএমএমইউ এর ব্যতিক্রম নয়। তবে মানবসম্পদকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না বলে বিএসএমএমইউতে অনুপস্থিতির পরিমাণ অনেক বেশি।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসকদের নিয়মানুবর্তী করার চেষ্টা অতীতে হয়েছে, এখনো সে চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, অতিমাত্রায় নজরদারি বা কঠোর বিধিবিধান নিষ্ঠাবান চিকিৎসকদের কাছে অবমাননাকর মনে হতে পারে। তাই ডিজিটাল পদ্ধতিতে (ঢুকতে-বেরোতে যন্ত্রে আঙুলের ছাপ রাখা) উপস্থিতির হিসাব, নিয়মিত পারফরম্যান্স পর্যালোচনা—এসব ব্যবস্থা চালু করার ক্ষেত্রে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে চান তাঁরা।
তাঁরই কাজ শুরু করার কথা: বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন হাসপাতালের মূল দায়িত্ব পরিচালক মো. আবদুল মজিদ ভূঁইয়ার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, সকাল সাড়ে সাতটায় এসে তিনি কাজ শুরু করেন। আটটায় পুরোদমে কাজ শুরু হওয়ার জন্য তাঁকে আধা ঘণ্টা আগে আসতে হয়।
১৯, ২০ ও ২১ জুন তাঁকেও সময়মতো পাওয়া যায়নি। ১৯ জুন পরিচালক এসেছিলেন বেলা আড়াইটায়। গত বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে পুরো বিষয় জানিয়ে তাঁর মতামত চাওয়া হয়। তিনি ঘণ্টা খানেক পরে যোগাযোগ করতে বলেন। এরপর আর ফোন ধরেননি।
তিনি থাকেন অন্যখানে: এস এম ইসহাক বিএসএমএমইউর গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি নিয়মিত দেরি করে আসেন—এই অভিযোগ যাচাই করতে গিয়ে জানা যায় অন্য তথ্য।
২১ জুন এস এম ইসহাক সকাল সোয়া আটটায় রাজধানীর গ্রিন রোডের কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। তিনি সেখানে সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত একাধিক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেন। ১০টায় তিনি বিএসএমএমইউতে পৌঁছান। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। এরপর তিনি আবার কমফোর্টে চলে যান। কমফোর্টের একটি সূত্র জানিয়েছে, শুধু বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নয়, দিনের অন্য সময়ও নিয়মিত তিনি কমফোর্টে কাজ করেন।
দেরিতে উপস্থিত হওয়া এবং অফিসের সময়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার কথা স্বীকার করে অধ্যাপক ইসহাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আর এ রকম হবে না।’ তিনি বলেন, কাজের স্বীকৃতি না পাওয়া এবং পদোন্নতি না হওয়ায় তিনি কাজে উৎসাহ পান না। এ ছাড়া প্রতিদিন তাঁর কোনো কাজও থাকে না।
তবে প্রক্টর এ এস এম জাকারিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের সময় বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে কাজ করেন—এমন অভিযোগ আরও আছে।
অভ্যাস: বিএসএমএমইউর চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ বিকেল ও রাতে কমফোর্ট, গ্রীন লাইফ, ল্যাবএইড, পপুলারসহ রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রে রোগী দেখেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রোগী দেখার সময় তাঁরা ঠিক ঠিক মেনে চলেন। এসব প্রতিষ্ঠানে কেউ কেউ গভীর রাত পর্যন্ত রোগী দেখেন।
আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব ও মৌলিক চিকিৎসা অনুষদের ডিন ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে এঁদের পক্ষে সকাল আটটায় বিএসএমএমইউতে আসা সম্ভব না। এঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করেন।’
২৪ জুন সকাল আটটায় গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের বিভিন্ন কক্ষের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বিভাগীয় জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা এসে পৌঁছাননি। ধোয়ামোছা বা টেবিল পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত থাকা কর্মচারীরা বলেন, শিক্ষার্থী ও মেডিকেল কর্মকর্তা ছাড়া নয়টার আগে কাউকে পাওয়া যাবে না। এন্ডোসকপি করতে আসা রোগীদের অপেক্ষা করতে হয় প্রায় নয়টা পর্যন্ত। এর পাঁচ মিনিট আগে বিভাগে আসেন বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ এস এম এ রায়হান।
একাধিক দিন গিয়েও এ বিভাগের অধ্যাপক প্রজেশ কুমার রায়কে কক্ষে পাওয়া যায়নি। একাধিক চিকিৎসক ও কর্মচারী বলেছেন, তিনি নিয়মিত দেরি করেন। বিভাগীয় চেয়ারম্যান রায়হান সহকর্মীদের দেরিতে আসা নিয়ে প্রথম আলোকে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে প্রজেশ কুমার রায় বলেন, ক্লাস নিতে হয়, পরীক্ষা নিতে হয়, পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করতে হয়, বিভিন্ন কাজে নানা জায়গায় যেতে হয় বলে তাঁর দেরি হয়।
দেরিতে আসার অভিযোগ আছে নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়ার বিরুদ্ধে। নিজের অস্ত্রোপচারের ও ক্লাস নেওয়ার দিন ছাড়া অন্য কোনো দিন তিনি ঠিক সময়ে আসেন না। ২৬ জুন তিনি নিজ কক্ষে আসেন সাড়ে নয়টার পর।
ঝিগাতলা থেকে পারভেজ আলম আঘাত পাওয়া ছেলে নিয়ে সকাল আটটা থেকে কনক কান্তি বড়ুয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পপুলারে দেখার পর কনক কান্তি বড়ুয়া তাঁকে এই দিনে এই সময়ে আসতে বলেছিলেন। অপেক্ষা করে ছিলেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে আসা হাওয়া বেগম। গত শনিবারও তিনি এসেছিলেন। কিন্তু কনক কান্তি বড়ুয়ার দেখা পাননি।
তবে এ বিষয়ে বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম আফজাল হোসেন বলেন, কেউ দেরি করে আসেন—এমন তথ্য তাঁর কাছে নেই।
এ বিষয়ে কনক কান্তি বড়ুয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় ২৭ জুন বেলা সাড়ে ১১টায়। এক ঘণ্টা পর আবার যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরে বিকেলে তিনি বলেন, সকালে তিনি উপাচার্যের কার্যালয়ে ও ডিন কার্যালয়ে যান বলে বিভাগে আসতে দেরি হয়।
হাজিরা খাতা: প্রতিটি বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষের সঙ্গে লাগোয়া কক্ষে হাজিরা খাতা থাকে। যিনি যখন আসেন তখন স্বাক্ষর করেন। কিন্তু তাতে কোনো সময় উল্লেখ থাকে না। কে কখন আসছেন বা যাচ্ছেন, তা ওই খাতা দেখে বোঝা যায় না।
বেশ কয়েকটি বিভাগের চেয়ারম্যান বলেছেন, চিকিৎসকদের দলীয় রাজনীতির কারণে তাঁরা অসহায়। জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা কেন নিয়মিত দেরিতে আসছেন—এ প্রশ্ন করার সাহস তাঁরা পান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ‘ডি’ ব্লকের একজন চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপির সময় ড্যাব (ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) নেতা ও সমর্থক চিকিৎসকেরা যা করতেন, স্বাচিপের নেতা ও সমর্থকেরা এখন তা-ই করছেন। প্রশ্ন করলে দেখা গেল আমার চেয়ারম্যানশিপ বাতিল হয়েছে।’
ইকবাল আর্সলান এ যুক্তি মানতে রাজি নন। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বলেন, যাঁরা স্বাচিপ বা ড্যাবের সঙ্গে যুক্ত নন কিন্তু নিয়মিত দেরি করে আসেন।
‘ডি’ ব্লকের দুজন এবং ‘সি’ ব্লকের একজন চেয়ারম্যান বলেছেন, শৃঙ্খলা ভাঙার জন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তি নেওয়ার আইনগত অধিকার চেয়ারম্যানের নেই।
এ বিষয়ে প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, চেয়ারম্যানরা শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনলে কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়। মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যানের অভিযোগের ভিত্তিতে একাধিক চিকিৎসককে পরীক্ষা দিতে না দেওয়ারও নজির আছে।
বাড়িতে, রাস্তায় বা অন্য কোথাও: পরপর একাধিক দিন বেশ বিলম্ব করে বিএসএমএমইউতে হাজির হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ২১ জুন সকাল নয়টায় মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক তৈমুর এ কে মাহমুদের বাসায় ফোন করেন প্রথম আলোর প্রতিবেদক। বাসা থেকে তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।
নিয়মিত দেরি করে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে তৈমুর মাহমুদ বলেন, সকালে চোখে একটি ওষুধ ব্যবহার করেন। সেই কারণে সময়মতো আসতে পারেন না।
সেন্টার ফর পেলিয়েটিভ কেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ই’ ব্লকে। সেন্টারের প্রকল্প সমন্বয়ক অধ্যাপক নিজামুদ্দিন আহমেদকে ২৭ জুন সকাল পৌনে নয়টায় পাওয়া যায়নি। অফিসের পিয়ন বলেন, ‘স্যারের তো এসে পড়ার কথা। আছে কোথাও। অপেক্ষা করেন।’
মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে নিজামুদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, তিনি সকাল আটটা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন। এরপর তিনি বলেন, বিলম্বের কৈফিয়ৎ দিতে তিনি বাধ্য নন।
লিখিত কর্মপরিধি নেই: স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহযোগী অধ্যাপক প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৩ বছর আগে মেডিকেল অফিসারের চাকরি পাই। নিয়োগপত্রে বা অন্য কোনো কাগজে আমার দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। পদোন্নতি পেয়ে সহকারী বা সহযোগী অধ্যাপক হওয়ার পরও করণীয় বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’
ওই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, বিসিএস পাস করা চিকিৎসকদের ভিত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু বিএসএমএমইউর চিকিৎসকদের এ রকম কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। কে কার কাছে দায়বদ্ধ, কীভাবে দায়বদ্ধ—এর কোনো বিধিবিধান নেই।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল কর্মকর্তা, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক বা অধ্যাপকদের চাকরি-সম্পর্কিত ‘কর্মপরিধি (জব ডেসক্রিপশন) নেই।
তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯৮-এ বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বক্তৃতা, টিউটোরিয়াল, আলোচনা, সেমিনার, হাতে-কলমে প্রদর্শন ও কর্মশালার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেবেন; নিজে গবেষণা করবেন ও গবেষণা তত্ত্বাবধান করবেন; বিভিন্ন কাজে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করবেন; বিশ্ববিদ্যালয় সংযুক্ত হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা দেবেন ইত্যাদি।
প্রক্টর এ এস এম জাকারিয়া, বিএমএর মহাসচিব শারফুদ্দিন আহমেদ মনে করেন, প্রতিটি পদের জন্য লিখিত সুনির্দিষ্ট জব ডেসক্রিপশন থাকা দরকার। ইকবাল আর্সলান বলেন, আশির দশকের গোড়ার দিকে সরকারি চিকিৎসকদের জন্য লিখিত ‘কর্মপরিধি’ তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। চিকিৎসকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ‘কর্মপরিধি’ খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।
কাজ কম লোক বেশি: কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য বলছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক হাজার ৬৭ জন চিকিৎসক কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে ৬৭০ জন মেডিকেল কর্মকর্তা। সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক ৩৯৭ জন। অনেকে মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনের তুলনায় জনবল বেশি।
এ এস এম জাকারিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের সময় সকাল আটটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। অর্থাৎ সপ্তাহে একজন চিকিৎসকের ৩৯ ঘণ্টা কাজ করার কথা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ১৬ ঘণ্টার বেশি কাউকে কাজ দিতে পারছে না।
বিভিন্ন বিভাগের ১০ জন চিকিৎসক বলেছেন, সপ্তাহজুড়ে তাঁদের কোনো কাজ থাকে না। সপ্তাহে তিন দিন একেবারে কোনো কাজ থাকে না। এস এম ইসহাক বলেন, মাসে তাঁকে মাত্র দুটি ক্লাস নিতে হয় এবং দুই দিন প্রসিডিওর করতে (এন্ডোসকপি) হয়। এর বাইরে মাঝেমধ্যে ওয়ার্ড ঘুরে দেখতে হয়।
এ ব্যাপারে প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, যাঁরা নিয়মিত কাজ থাকে না বলে দাবি করেন, তাঁরা গবেষণা করতে পারেন, সে সুযোগও আছে। তাঁরা শিক্ষার্থীদের বা রোগীদের আরও সময় দিতে পারেন। এসব কিছুই তাঁরা করেন না। তিনি বলেন, ‘এটা মানসিকতার ব্যাপার। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সময়নিষ্ঠ চিকিৎসক আছেন। তাঁরা শিক্ষা দিচ্ছেন, রোগী দেখছেন, গবেষণা করছেন।’

No comments

Powered by Blogger.