চারদিক-আজ পথশিশুদের আম উৎসব by রাকিব কিশোর
ফেসবুকের হোম পেজে একের পর এক স্ট্যাটাস ভেসে আসছে বৃষ্টিভেজা আকাশ নিয়ে, রাজনীতির গলিঘুপচি নিয়ে, কে কোন খেলায় কাকে হারাল তা নিয়ে। কারও ফেসবুকে বিয়ের অ্যালবামের ছবি তো কারও জন্মদিনের পার্টির ভিডিও। সবাই ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। এদের মধ্যে ব্যতিক্রম একদল তরুণ।
এদের ভাবনা নিজেদের নিয়ে নয়, এদের প্রোফাইল পিকচার সব একই, এদের স্ট্যাটাসে একটাই আলোচনা। এরা অন্যের জন্য কাজ করছে। অসহায় শিশুর মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য আয়োজন করছে একটা উৎসবের, যার নাম ‘পথশিশুদের আম উৎসব’। আজ ৩০ জুন ঢাকা, চট্টগাম ও খুলনায় একযোগে পালিত হতে যাচ্ছে এই আম উৎসব।
২০১০ সালে ‘আমরা খাঁটি গরিব...’ নামের ফেসবুকের এ গ্রুপটি আম উৎসব করে ঢাকার পথশিশুদের নিয়ে। ফলের রাজা আম খাওয়ার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত এসব ছিন্নমূল জামাকাপড়হীন শিশুর হাতে আম দিয়ে তাদের চোখে যে উচ্ছ্বাস তারা দেখেছিল, তা থেকে প্রেরণা পেয়েছে ২০১১ সালে আবারও আম উৎসব করার। সেবার আম উৎসবের পরিধি বেড়েছিল, পাকা আমের সুবাস ছড়িয়ে পড়েছিল ঢাকার বাতাস রাঙিয়ে চট্টগ্রামের বাতাসেও। ঢাকায় অপরাজেয় বাংলাদেশ নামের একটি পথশিশু সংগঠনের প্রায় ৬০০ শিশুকে আম খাওয়ানোর পাশাপাশি চট্টগ্রামের একটি পথশিশুদের স্কুলের ছয়টি শাখায়ও তারা আনন্দ বিতরণ করে আসে। একেকটি আম যেন বাচ্চাগুলোর কাছে হঠাৎ পাওয়া ঈদের চাঁদের মতো, ১০ মাস বয়স থেকে ১০ বছর বয়সী বাচ্চাদের কেউই বাদ পড়েনি আম খাওয়ার আনন্দ থেকে।
২০১০ সালে আম উৎসবের নায়ক ছিল সাব্বির নামের তিন বছরের একটি ছেলে। পরনে ছেঁড়া প্যান্ট ও খালি গায়ে, হাতে-মুখে-বুকে রস মাখিয়ে পুরো দুটি আম খেয়ে সে যখন আমের ঝুড়ির দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল, তখন তাকে আরও দুটি আম দেওয়া হলো। তার সেই চাহনি সেদিন কাঁদিয়েছিল এই গ্রুপের অনেক সদস্যকে।
অনেকে চোখের পানি আটকাতে পারেনি যখন দেখেছে ২০১১ সালে কমলাপুরে এক প্রতিবন্ধী শিশু দুই হাতে আম নিয়ে খেতে পারছে না, ঠিক কোথায় কামড় দিলে আমটার গায়ে কামড় পড়বে, সেটা বোঝার ক্ষমতা তার ছিল না। এদিক-ওদিক, হাতে-আঙুলে কামড় দিচ্ছে, আমের গায়ে আর কামড় পড়ছে না। তার পরও আমাদের বিদায়বেলায় সে সব সাদা দাঁত বের করে আমের রসে মাখানো হাত নেড়ে বিদায় জানিয়েছিল সবাইকে। সেখান থেকে নিউমার্কেটের পাশে থামল গরিবদের আমের গাড়ি। ছেঁড়া স্কুল ড্রেস পরে আসা আনিস তাকে দেওয়া দুটি আম যত্ন করে পকেটে রেখে দিয়েছিল মাকে দেবে বলে। শেফালী নামের মেয়েটি চোখের তারায় দুষ্টুমি ফুটিয়ে দুটি আম মাথায় নিয়ে ফোকলা দাঁতে হেসে আবদার করে বলে, ‘আমার একটা ছবি তুলে দেন।’ সেই ছবি দেখার পর বলে, ‘ছবি ভালো আসে নাই, আবার তোলেন।’
আজ আম উৎসব হবে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাশাপাশি এবার খুলনা শহরেও আয়োজন করা হয়েছে পথশিশুদের আম উৎসবের। সবার মনে একটাই প্রশ্ন, ফেসবুকের মাধ্যমে তারা আম দেবে কীভাবে! উত্তর খুবই সোজা, ‘আমরা খাঁটি গরিব...’ গ্রুপের বর্তমান সদস্যসংখ্যা সাত হাজারের বেশি। যখন ঘোষণা দেওয়া হলো পথশিশুদের আম খাওয়ানো হবে, তখনই এগিয়ে এল অনেকে; কেউ নিজেদের রিকশাভাড়া, কেউ এক দিনের মোবাইল ফোনের বিলের টাকা আবার কেউবা তার বিকেলের ডালপুরি খাওয়ার টাকা বাঁচিয়ে জমা করে দেয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। তাদের সাহায্যের আবেদন পৌঁছে যায় সবার কাছে। তিল তিল করে দেশের সব জায়গা থেকে অর্থ সাহায্য আসতে থাকে। ‘আমরা খাঁটি গরিব...’ গ্রুপের এবারের লক্ষ্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মিলিয়ে প্রায় চার হাজার ৫০০ পথশিশুকে আম খাওয়ানো। উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকায় আম উৎসবের শুরু হবে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে। এরপর পথশিশুদের জন্য আমভর্তি ট্রাকটি ছুটে যাবে মিরপুর মাজার রোড হয়ে মোহাম্মদপুর টাউনহল মার্কেট পার করে কমলাপুর, পল্টন, হাইকোর্ট, নিউমার্কেট, বিজয় সরণি, রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধ, মালিবাগ, খিলগাঁও, উত্তরা, বনানী ঘুরে শেষ হবে মিরপুর বেড়িবাঁধে। এসব এলাকায় রয়েছে পথশিশুদের একটি করে স্কুল। চট্টগ্রামে চারুলতা বিদ্যাপীঠ থেকে শুরু করে রেললাইন পার হয়ে ছয়টি স্কুলের বাচ্চাদের দেওয়া হবে আম। খুলনায় দুটি পথশিশুদের স্কুলের এক হাজার ১০০ বাচ্চা পালন করবে এই আম উৎসব। প্রতিবছরের জুন মাসের শেষ শনিবারে আয়োজন করা হচ্ছে এই আম উৎসবের। আমাদের আশা, একদিন গোটা বাংলাদেশে একযোগে হবে এই উৎসব, সেদিনটা হবে ‘আম দিবস’।
রাকিব কিশোর
২০১০ সালে ‘আমরা খাঁটি গরিব...’ নামের ফেসবুকের এ গ্রুপটি আম উৎসব করে ঢাকার পথশিশুদের নিয়ে। ফলের রাজা আম খাওয়ার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত এসব ছিন্নমূল জামাকাপড়হীন শিশুর হাতে আম দিয়ে তাদের চোখে যে উচ্ছ্বাস তারা দেখেছিল, তা থেকে প্রেরণা পেয়েছে ২০১১ সালে আবারও আম উৎসব করার। সেবার আম উৎসবের পরিধি বেড়েছিল, পাকা আমের সুবাস ছড়িয়ে পড়েছিল ঢাকার বাতাস রাঙিয়ে চট্টগ্রামের বাতাসেও। ঢাকায় অপরাজেয় বাংলাদেশ নামের একটি পথশিশু সংগঠনের প্রায় ৬০০ শিশুকে আম খাওয়ানোর পাশাপাশি চট্টগ্রামের একটি পথশিশুদের স্কুলের ছয়টি শাখায়ও তারা আনন্দ বিতরণ করে আসে। একেকটি আম যেন বাচ্চাগুলোর কাছে হঠাৎ পাওয়া ঈদের চাঁদের মতো, ১০ মাস বয়স থেকে ১০ বছর বয়সী বাচ্চাদের কেউই বাদ পড়েনি আম খাওয়ার আনন্দ থেকে।
২০১০ সালে আম উৎসবের নায়ক ছিল সাব্বির নামের তিন বছরের একটি ছেলে। পরনে ছেঁড়া প্যান্ট ও খালি গায়ে, হাতে-মুখে-বুকে রস মাখিয়ে পুরো দুটি আম খেয়ে সে যখন আমের ঝুড়ির দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল, তখন তাকে আরও দুটি আম দেওয়া হলো। তার সেই চাহনি সেদিন কাঁদিয়েছিল এই গ্রুপের অনেক সদস্যকে।
অনেকে চোখের পানি আটকাতে পারেনি যখন দেখেছে ২০১১ সালে কমলাপুরে এক প্রতিবন্ধী শিশু দুই হাতে আম নিয়ে খেতে পারছে না, ঠিক কোথায় কামড় দিলে আমটার গায়ে কামড় পড়বে, সেটা বোঝার ক্ষমতা তার ছিল না। এদিক-ওদিক, হাতে-আঙুলে কামড় দিচ্ছে, আমের গায়ে আর কামড় পড়ছে না। তার পরও আমাদের বিদায়বেলায় সে সব সাদা দাঁত বের করে আমের রসে মাখানো হাত নেড়ে বিদায় জানিয়েছিল সবাইকে। সেখান থেকে নিউমার্কেটের পাশে থামল গরিবদের আমের গাড়ি। ছেঁড়া স্কুল ড্রেস পরে আসা আনিস তাকে দেওয়া দুটি আম যত্ন করে পকেটে রেখে দিয়েছিল মাকে দেবে বলে। শেফালী নামের মেয়েটি চোখের তারায় দুষ্টুমি ফুটিয়ে দুটি আম মাথায় নিয়ে ফোকলা দাঁতে হেসে আবদার করে বলে, ‘আমার একটা ছবি তুলে দেন।’ সেই ছবি দেখার পর বলে, ‘ছবি ভালো আসে নাই, আবার তোলেন।’
আজ আম উৎসব হবে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাশাপাশি এবার খুলনা শহরেও আয়োজন করা হয়েছে পথশিশুদের আম উৎসবের। সবার মনে একটাই প্রশ্ন, ফেসবুকের মাধ্যমে তারা আম দেবে কীভাবে! উত্তর খুবই সোজা, ‘আমরা খাঁটি গরিব...’ গ্রুপের বর্তমান সদস্যসংখ্যা সাত হাজারের বেশি। যখন ঘোষণা দেওয়া হলো পথশিশুদের আম খাওয়ানো হবে, তখনই এগিয়ে এল অনেকে; কেউ নিজেদের রিকশাভাড়া, কেউ এক দিনের মোবাইল ফোনের বিলের টাকা আবার কেউবা তার বিকেলের ডালপুরি খাওয়ার টাকা বাঁচিয়ে জমা করে দেয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। তাদের সাহায্যের আবেদন পৌঁছে যায় সবার কাছে। তিল তিল করে দেশের সব জায়গা থেকে অর্থ সাহায্য আসতে থাকে। ‘আমরা খাঁটি গরিব...’ গ্রুপের এবারের লক্ষ্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মিলিয়ে প্রায় চার হাজার ৫০০ পথশিশুকে আম খাওয়ানো। উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকায় আম উৎসবের শুরু হবে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে। এরপর পথশিশুদের জন্য আমভর্তি ট্রাকটি ছুটে যাবে মিরপুর মাজার রোড হয়ে মোহাম্মদপুর টাউনহল মার্কেট পার করে কমলাপুর, পল্টন, হাইকোর্ট, নিউমার্কেট, বিজয় সরণি, রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধ, মালিবাগ, খিলগাঁও, উত্তরা, বনানী ঘুরে শেষ হবে মিরপুর বেড়িবাঁধে। এসব এলাকায় রয়েছে পথশিশুদের একটি করে স্কুল। চট্টগ্রামে চারুলতা বিদ্যাপীঠ থেকে শুরু করে রেললাইন পার হয়ে ছয়টি স্কুলের বাচ্চাদের দেওয়া হবে আম। খুলনায় দুটি পথশিশুদের স্কুলের এক হাজার ১০০ বাচ্চা পালন করবে এই আম উৎসব। প্রতিবছরের জুন মাসের শেষ শনিবারে আয়োজন করা হচ্ছে এই আম উৎসবের। আমাদের আশা, একদিন গোটা বাংলাদেশে একযোগে হবে এই উৎসব, সেদিনটা হবে ‘আম দিবস’।
রাকিব কিশোর
No comments