অপরাধ-জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েও বাণিজ্য
অর্থের বিনিময়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়ার অপরাধ গুরুতর। তবে আশার কথা এই যে, সমকালে ইতিপূর্বে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশ পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সমকালে 'জাতীয় পরিচয়পত্র বাণিজ্য : ৭ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বদলি' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, দায়ী
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর ইসি কারণ দর্শাও নোটিশ জারি করেছে এবং এ জন্য সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলিও করা হয়েছে। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর দ্রুত তদন্ত করে এ ব্যাপারে জড়িতদের শনাক্ত করা ও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা প্রশংসার দাবি রাখে। তবে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের কেবল কারণ দর্শাও নোটিশ ধরিয়ে দিয়ে বা বদলি করে ইসি থেকে এ ধরনের অপরাধ নির্মূল করা আদৌ সম্ভব কি-না সে ব্যাপারে কিন্তু নিঃসন্দেহ হওয়া যায় না। জাতীয় পরিচয়পত্র প্রত্যেক নাগরিকের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। এখন টেলিফোনের জন্য আবেদন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, জমি ক্রয়-বিক্রয়, পাসপোর্ট সংগ্রহ থেকে শুরু করে অনেক কাজ সম্পাদনের সময়ই জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রে নাগরিক সম্পর্কে মৌলিক তথ্যগুলো থাকে বিধায় এর গুরুত্ব অনেক। অথচ সেবামূলক হওয়া সত্ত্বেও ইসির একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী অনেক দিন থেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি বা তথ্য সংশোধন করার জন্য নাগরিকদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ বা ঘুষ নিয়ে আসছে। অর্থের লোভে পড়ে অনেক ভুয়া ব্যক্তির নামেও পরিচয়পত্র ইস্যু হয়ে থাকতে পারে। এভাবেই তো রোহিঙ্গারা আমাদের দেশের পাসপোর্ট বাগিয়ে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে। বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র দুর্নীতির হাত ধরে বিদেশি উগ্রবাদীদের হস্তগত হওয়াও বিচিত্র নয়। সুতরাং জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করার ক্ষেত্রে দুর্নীতির কুফল মারাত্মক হতে পারে। ইসি কর্তৃপক্ষের উচিত জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ ও বিতরণ পর্যন্ত গোটা ব্যবস্থাকে কী করে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের আওতায় আনা যায় সে বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে খতিয়ে দেখা। নাগরিকরা যাতে জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে গিয়ে হয়রানির শিকার না হন সেটা ইসি কর্তৃপক্ষকেই নিশ্চিত করতে হবে। আর জাতীয় পরিচয়পত্র বাণিজ্যের হোতাদের শাস্তিটা অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী হওয়া উচিত। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কেবল কারণ দর্শাও নোটিশ বা বদলিতে দমবার পাত্র নয়। কারণ এর সঙ্গে নগদ প্রাপ্তিযোগ রয়েছে।
No comments