কেন এ সহিংসতা?

বিএনপির ডাকে আরেকটি ঢিলেঢালা হরতাল হয়ে গেল। জনজীবনে কিছু দুর্ভোগ ছাড়া কয়েকটি ইস্যুতে ডাকা এই হরতালে বিএনপি খুব একটা লাভবান হয়েছে_এমনটা বলা যাবে না। যে ইস্যুগুলো নিয়ে বিএনপি হরতালের ডাক দিয়েছিল, তার অধিকাংশই পুরনো। নতুন একটি ইস্যু ছিল আড়িয়াল বিলে প্রস্তাবিত বিমানবন্দর নির্মাণ।


এই সিদ্ধান্ত থেকেও সরকার সরে এসেছে। কিন্তু হরতাল থেকে সরেনি বিরোধী দল। ধারণা করা যেতে পারে, বিরোধী দল আগে থেকেই হরতাল করতে চেয়েছে নিজেদের একগুঁয়েমি বজায় রাখতে।
গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে হরতাল মোটেও নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরেই পালিত হয়ে আসছে এই কর্মসূচি। মানুষের প্রতিবাদ জানানোর শেষ অস্ত্র হচ্ছে হরতাল। কিন্তু বেশ কিছুকাল আগেই হরতালের মতো একটি কর্মসূচি সাধারণ মানুষের কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক নেতারাও বারবার বলেছেন, হরতাল উন্নয়নের অন্তরায়। বিশেষ করে যে দল যখন ক্ষমতায় যায়, সেই দলই হরতালের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। বিরোধী দলে গেলে এই রাজনৈতিক অস্ত্রটি প্রয়োগ করে। হরতালের পক্ষে একাধিক যুক্তি তুলে ধরা হয়। গত মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে আজকের বিএনপি নেতৃত্বের অবস্থান ছিল হরতালের বিপক্ষে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৩ সালের ২২ মার্চ জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় বলেছিলেন, 'রাজনৈতিক অভিধান থেকে হরতাল শব্দটি মুছে ফেলতে হবে। উন্নতি চাইলে এ ছাড়া উপায় নেই।' ২০০৩ সালের ১৯ জুলাই পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের নবম জাতীয় কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, 'সংসদ বর্জন, হরতাল ও সহিংসতা পরিহার করতে হবে।' বিএনপি নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও বরকতউল্লা বুলুকে উদ্ধৃত করে ২০০৫ সালের ১ এপ্রিল প্রকাশিত পত্রপত্রিকায় শিরোনাম করা হয়েছিল, 'বিএনপি বিরোধী দলে গেলে হরতাল করবে না।' বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ২০০৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বলেছিলেন, 'প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে হরতাল বন্ধ করা হবে।' আজ সেই বিএনপিই হরতাল ডেকেছে।
আগের দিনের হরতালের সঙ্গে আজকের দিনের হরতালের পার্থক্য এই যে আগের দিনে হরতাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হতো। কিন্তু এখন হরতাল চাপিয়ে দেওয়া হয়। হরতালের নামে জনজীবনে ভীতি সঞ্চার করা হয়। মানুষকে ভয় দেখিয়ে ঘরে থাকতে বাধ্য করা হয়। বরাবরের মতো এবারও বিএনপির ডাকা হরতালের আগের দিন দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করল সহিংসতা। হরতালের আগের দিন বিকেল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটে। একই দিন সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ককটেল বিস্ফোরণে এক ছাত্রী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে টিএসসিতেও। মালিবাগে এক গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগার ঘটনাকেও হরতাল সম্পৃক্ত নাশকতা বলে মালিকপক্ষ দাবি করেছে। সব হরতালের আগেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এর উদ্দেশ্যও সবার কাছে পরিষ্কার।
আগেই বলা হয়েছে, হরতাল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের শেষ অস্ত্র। সেই অস্ত্র প্রয়োগের আগে ভেবে দেখতে হবে, তাতে জনগণের সমর্থন আছে কি না। তদুপরি এ ধরনের কর্মসূচির আগে যে সহিংসতা হচ্ছে, তা বন্ধ করা দরকার। প্রতিবাদ জানানোর আরো অনেক পদ্ধতি আছে। বিরোধী দল সংসদে যাবে না, জনসমর্থনবিহীন কর্মসূচি দেবে_এটা কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে কাম্য হতে পারে না। এই হরতালের আগে ঢাকায় যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো কারো কাম্য ছিল না। ককটেল বিস্ফোরণে আহত ছাত্রীটির দায়িত্ব তো বিরোধী দল নেবে না। হরতালের আগেই যে সম্পদের ক্ষতি করা হলো, তার দায় কে নেবে? কল্যাণমুখী রাজনীতির স্বার্থে আমাদের সহৃদয় রাজনীতিকরা বিষয়গুলো অনুগ্রহ করে একটু ভেবে দেখলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।

No comments

Powered by Blogger.