জাতীয় সংসদে বাজেট পাস-উন্নয়নই হোক মূল লক্ষ্য

বিরোধী দল সংসদে না থাকলেও বাইরে থেকে সরকারের সমালোচনায় মুখর। ওদিকে আর দেড় বছর পর জাতীয় সংসদের পরবর্তী নির্বাচন। এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে এ মাসের শুরুতে জাতীয় সংসদে ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী।


পরে বিরোধী দল যথারীতি এই বাজেটের সমালোচনা করে। দেশের অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে পাওয়া যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। প্রতিবছরের মতো এবারের বাজেটেও বৈদেশিক সাহায্যনির্ভরতা আছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও আছে সন্তোষজনক বরাদ্দ।
আগামীকাল থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হতে যাচ্ছে, সেই অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে গত বৃহস্পতিবার পাস হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট ব্যয় এক লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার মধ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে এক লাখ ৩৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক অনুদানপ্রাপ্তির আশা করা হচ্ছে ছয় হাজার ৪৪ কোটি টাকা। বাকি ঘাটতি ৪৬ হাজার ২৪ কোটি টাকা ঋণ করবে সরকার। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাত থেকেই সরকার ঋণ করতে চায় ৩৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১০ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা নেওয়া হবে মূলত সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। আর বৈদেশিক নিট ঋণ ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। এই বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে অনুন্নয়ন ব্যয়ের পরিমাণ এক লাখ ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। তবে এর বাইরে খাদ্য হিসাব, নিট ঋণ ও অগ্রিম পরিশোধ, এডিপিতে রাজস্ব বাজেট থেকে অর্থায়ন এবং কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি খাতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। এর আগে গত বুধবার মোবাইল ফোনের মোট বিলের ওপর ২ শতাংশ হারে কর প্রত্যাহার, করমুক্ত আয়ের সীমা দুই লাখ টাকায় উন্নীত করা, রপ্তানি আয়ের উৎসে দশমিক ৮০ শতাংশ হারে কর কর্তন, এক লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক আমানতকে সম্পূর্ণ করমুক্ত রাখার মধ্য দিয়ে সংশোধিত অর্থবিল পাস হয়।
অনেক প্রত্যাশার মহাজোট সরকারের সামনে আছে আর মাত্র দেড় বছর। সে হিসাবে এই অর্থবছরটিকেই পূর্ণাঙ্গ অর্থবছর হিসেবে পাচ্ছে তারা। সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার যা এখনো পূরণ হয়নি, তা পূরণ করার এটাই উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন অনেকে। বিশেষ করে বিরোধী দল মনে করে এবারের বাজেট করা হয়েছে আগামী নির্বাচন সামনে রেখেই। কারণ পরবর্তী অর্থবছরে বাজেট প্রণয়ন করলেও সে বাজেট সরকারের নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কাজেই এবারের বাজেটের ওপরই নির্ভর করছে সরকারের আগামী নির্বাচনে উত্তরণের অনেক কিছু। সে হিসেবে এবারের বাজেটকে অনেকে নির্বাচনী বাজেট বলতে চেয়েছেন। তবে এবারের বাজেটে যে উন্নয়ন ব্যয় ও এডিপি ধরা হয়েছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির যে চাপ জনজীবনে পড়েছে, তা রোধ করার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে ভারসাম্যের বিষয়টি। ভারসাম্য নষ্ট হলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে। অপ্রয়োজনীয় ও অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় সরকারের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এদিকে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। বিনিয়োগের ব্যাপারে সরকারকে আরো বেশি আন্তরিক হতে হবে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা না গেলে বাধাগ্রস্ত হবে প্রবৃদ্ধি। সব মিলিয়ে যে বাজেট এবার পাস হয়ে গেল, তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। বাজেট বাস্তবায়নের ওপর সরকারের দক্ষতাও প্রমাণিত হবে। সাধারণ হিসেবে বাজেট একটি দেশের সারা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব। এই হিসাবের ওপর নির্ভর করে একটি দেশের এক বছরের উন্নয়নের স্বপ্ন বোনা হয়। একটি দেশ পরবর্তী বছরে কতদূর অগ্রগামী হবে, তা নির্ভর করে বাজেটের ওপর। উন্নয়নকে মূল লক্ষ রেখে সরকার বাজেট বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

No comments

Powered by Blogger.