এলডিসি সম্মেলন-দেয়াল সরিয়ে ফেলার সময় এসেছে by ব্যারি কোটস
আমরা বৈষম্যমূলক একটি বিশ্ব ব্যবস্থায় বাস করি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার মতো উন্নত দেশের বাসিন্দাদের নতুন করে ভাবার সময় এসেছে, আমরা কি বৈষম্যের কারণে প্রান্তিক হয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াব? নাকি আগের মতোই তাদের দমিয়ে রাখতে থাকব? আমার মনে হয়, দেয়াল সরিয়ে ফেলার সময় এসেছে
দুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের নিস্তেজ হয়ে পড়া অর্থনীতি আবার বেগবান হচ্ছে_ এমন তথ্যে আমরা নিউজিল্যান্ডবাসী উচ্ছ্বসিত। উচ্ছ্বাসের সময় খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দুর্ভোগে পড়া মানুষের কথাও মাথায় রাখা দরকার। মনে রাখা দরকার, ২০১০ সালের জুন থেকে মূল্যবৃদ্ধি শুরুর পর নতুন করে ক্ষুধার শিকার হওয়া চার কোটি ৪০ লাখ মানুষের জন্য গত বছরটা খুব খারাপ গেছে। এ সময়ে প্রতি মাসে ৪০ লাখ লোক নতুন করে ক্ষুধার শিকার হয়েছে, যে সংখ্যা নিউজিল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার প্রায় সমান।
দুঃখের বিষয় হলো, প্রতিজন মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাবার বিশ্বে থাকলেও প্রায় ১০০ কোটি মানুষকে ক্ষুধার শিকার হতে হচ্ছে। অথচ উল্টো দিকে প্রায় সমানসংখ্যক মানুষ অধিক খাদ্য গ্রহণের কারণে মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছে। আসলে খাদ্য সংকটের কারণে ক্ষুধার সৃষ্টি হচ্ছে না। এর মূল কারণ বৈষম্য (অসম বণ্টন)। মানুষ অনাহারে ভুগছে, কারণ তাদের জমি কিংবা পানি অন্যরা চুরি করে নিয়ে গেছে। ধনী দেশের ভর্তুকির সুবিধা পাওয়া আমদানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না দরিদ্র দেশের কৃষকরা। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সরকার কিংবা দাতাগোষ্ঠী কেউই ক্ষুদ্র কৃষকদের উন্নয়নে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিচ্ছে না, বিনিয়োগ করছে না। এর ওপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রতিকূল আবহাওয়ার সমস্যা, যার কারণে প্রায়ই ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।
যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই বিশ্বব্যাপী খাদ্যদ্রব্যের দাম আবারও ভয়াবহ মাত্রায় বাড়ছে। এবারের মূল্যবৃদ্ধি এরই মধ্যে ২০০৭-০৮-এর মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ওই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে ২০০৯ সালে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ১০০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত এক বছরে ভুট্টা, গম, চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। এ সময়ে এসব পণ্যের দাম ৭০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। যারা তাদের আয়ের অর্ধেকেরও বেশি অংশ খাদ্য কেনার জন্য ব্যয় করেন, তাদের ওপর এ মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ভয়াবহ। এমনকি কেউ কেউ এমন অবস্থায়ও পড়েছেন, পর্যাপ্ত পুষ্টিগ্রহণ, সন্তানকে স্কুলে পাঠানো কিংবা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার মধ্যে যে কোনো একটি বা দুটিকে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ, তিনটি বিষয়ই এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে এগুলোর মধ্যে কোনো একটিকে বেছে নেওয়া অসম্ভব।
এ সপ্তাহ থেকেই খাদ্য ব্যবস্থা ও দারিদ্র্য দূরীকরণ সংশ্লিষ্ট মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধানে কার্যক্রম শুরুর একটি সুযোগ এসেছে বিশ্ববাসীর সামনে। সবচেয়ে দরিদ্র ৪৮টি দেশকে নিয়ে ইস্তাম্বুলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিষয়ে জাতিসংঘের চতুর্থ সম্মেলন (এলডিসি সম্মেলন) চলে ৯ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, ইউএনডিপির প্রধান হেলেন ক্লার্ক, ৩৯টি স্বল্পোন্নত দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানসহ বিশ্বের অনেক নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই মিলে স্বল্পোন্নত দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে আগামী এক দশকের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কেবল পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিত করা এর উদ্দেশ্য নয়। তাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি, চাকরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় মানবাধিকার নিশ্চিত করাও এ সম্মেলনের লক্ষ্য। অক্সফাম চায়, আগামী দশকের মধ্যে যাতে এলডিসি শ্রেণীভুক্ত অন্তত অর্ধেক দেশের 'স্বল্পোন্নত' অবস্থান থেকে উত্তরণ ঘটে। এভাবে ধীরে ধীরে স্বল্পোন্নত শ্রেণীটিরই বিলুপ্তি চাই আমরা।
নিদ্বর্িধায় স্বীকার করছি, এটি খুব সহজ কাজ হবে না। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ ২৪টি দেশকে স্বল্পোন্নত হিসেবে শনাক্ত করে। চার দশক পর এসে দেখা যাচ্ছে, ধনী দেশগুলো আরও ধনী হলেও স্বল্পোন্নত শ্রেণীভুক্ত দেশের সংখ্যা পুরো দ্বিগুণ হয়েছে। অনুমিতভাবেই এর বেশিরভাগ দেশ আফ্রিকার। মহাদেশটির ৩৩টি, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৪টি এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের একটি দেশ রয়েছে এলডিসি তালিকায়।
কীভাবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অবস্থার উন্নয়ন করা যায়, নিশ্চিতভাবেই তা এলডিসি সম্মেলনের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এসব দেশের জনগণের বড় অংশ তরুণ। তাই তাদের জন্য চাকরির ক্ষেত্র ও অর্থনৈতিক নানা সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে বাস করে। অথচ বিশ্বের মোট রফতানির মাত্র এক শতাংশ করে থাকে এসব দেশ। কাগজে-কলমে কয়েকটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলা হলেও দেখা যায়, এ প্রবৃদ্ধি এসেছে তেল বা অন্যান্য খনিজদ্রব্য উত্তোলন, বন উজাড় কিংবা মৎস্যভাণ্ডারকে কাজে লাগিয়ে। এমনকি এসব প্রাকৃতিক পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি করারও সামর্থ্য নেই তাদের। বলাবাহুল্য, এমন প্রবৃদ্ধি টেকসই নয়। এতে দরিদ্র ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর সামান্যই উপকার হয়েছে। উল্টো প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনের প্রতিযোগিতা এসব দেশে দুর্নীতি, দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, দরিদ্র দেশগুলোর 'স্বল্পোন্নত' অবস্থান থেকে উত্তরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। ধনী দেশগুলো এখনও অন্যায়ভাবে কৃষি খাতে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে দরিদ্র দেশের উৎপাদকরা টিকে থাকতে পারছে না। তুলা উৎপাদনের চিত্র দেখলে এ বৈষম্যের কথা সহজেই বোঝা যায়। চলমান সম্মেলনে বাণিজ্যনীতি এমনভাবে সংশোধন করা উচিত, যাতে ধনী দেশগুলোর জন্য বৈষম্য করে হলেও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিষয়ে জোরালো ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও শক্ত বার্তা দেওয়া প্রয়োজন এলডিসি সম্মেলন থেকে। দ্রুত এ বিষয়ে একটি ন্যায্য ও কঠোর চুক্তি না হলে বিশ্বের অতিদরিদ্র মানুষের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে। কিয়োটো প্রটোকলের প্রথম প্রতিশ্রুতির মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে। অথচ, আগের চেয়েও দ্রুতগতিতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হচ্ছে বায়ুমণ্ডলে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার এ ব্যর্থতা উন্নয়নশীল দেশগুলোর কৃষি উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, যার স্বাভাবিক প্রভাব হিসেবে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে।
বিশ্বে এখন পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। গত দশকজুড়ে আফ্রিকা ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের পর এখন মধ্যপ্রাচ্যেও একটির পর একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন ধনী দেশগুলোর আন্তরিক সহায়তা। স্বল্পোন্নত দেশের অগ্রগতির পথের বাধাগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে তাদের। দূরদৃষ্টি ও সাহসের পরিচয় দিলে ইস্তাম্বুল থেকেই যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করতে পারেন নেতারা।
আমরা বৈষম্যমূলক একটি বিশ্ব ব্যবস্থায় বাস করি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার মতো উন্নত দেশের বাসিন্দাদের নতুন করে ভাবার সময় এসেছে, আমরা কি বৈষম্যের কারণে প্রান্তিক হয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াব? নাকি আগের মতোই তাদের দমিয়ে রাখতে থাকব? আমার মনে হয়, দেয়াল সরিয়ে ফেলার সময় এসেছে।
ব্যারি কোটস : নির্বাহী পরিচালক অক্সফাম, নিউজিল্যান্ড
দুঃখের বিষয় হলো, প্রতিজন মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাবার বিশ্বে থাকলেও প্রায় ১০০ কোটি মানুষকে ক্ষুধার শিকার হতে হচ্ছে। অথচ উল্টো দিকে প্রায় সমানসংখ্যক মানুষ অধিক খাদ্য গ্রহণের কারণে মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছে। আসলে খাদ্য সংকটের কারণে ক্ষুধার সৃষ্টি হচ্ছে না। এর মূল কারণ বৈষম্য (অসম বণ্টন)। মানুষ অনাহারে ভুগছে, কারণ তাদের জমি কিংবা পানি অন্যরা চুরি করে নিয়ে গেছে। ধনী দেশের ভর্তুকির সুবিধা পাওয়া আমদানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না দরিদ্র দেশের কৃষকরা। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সরকার কিংবা দাতাগোষ্ঠী কেউই ক্ষুদ্র কৃষকদের উন্নয়নে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিচ্ছে না, বিনিয়োগ করছে না। এর ওপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রতিকূল আবহাওয়ার সমস্যা, যার কারণে প্রায়ই ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।
যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই বিশ্বব্যাপী খাদ্যদ্রব্যের দাম আবারও ভয়াবহ মাত্রায় বাড়ছে। এবারের মূল্যবৃদ্ধি এরই মধ্যে ২০০৭-০৮-এর মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ওই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে ২০০৯ সালে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ১০০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত এক বছরে ভুট্টা, গম, চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। এ সময়ে এসব পণ্যের দাম ৭০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। যারা তাদের আয়ের অর্ধেকেরও বেশি অংশ খাদ্য কেনার জন্য ব্যয় করেন, তাদের ওপর এ মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ভয়াবহ। এমনকি কেউ কেউ এমন অবস্থায়ও পড়েছেন, পর্যাপ্ত পুষ্টিগ্রহণ, সন্তানকে স্কুলে পাঠানো কিংবা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার মধ্যে যে কোনো একটি বা দুটিকে বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ, তিনটি বিষয়ই এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে এগুলোর মধ্যে কোনো একটিকে বেছে নেওয়া অসম্ভব।
এ সপ্তাহ থেকেই খাদ্য ব্যবস্থা ও দারিদ্র্য দূরীকরণ সংশ্লিষ্ট মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধানে কার্যক্রম শুরুর একটি সুযোগ এসেছে বিশ্ববাসীর সামনে। সবচেয়ে দরিদ্র ৪৮টি দেশকে নিয়ে ইস্তাম্বুলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিষয়ে জাতিসংঘের চতুর্থ সম্মেলন (এলডিসি সম্মেলন) চলে ৯ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, ইউএনডিপির প্রধান হেলেন ক্লার্ক, ৩৯টি স্বল্পোন্নত দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানসহ বিশ্বের অনেক নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই মিলে স্বল্পোন্নত দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে আগামী এক দশকের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কেবল পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিত করা এর উদ্দেশ্য নয়। তাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি, চাকরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় মানবাধিকার নিশ্চিত করাও এ সম্মেলনের লক্ষ্য। অক্সফাম চায়, আগামী দশকের মধ্যে যাতে এলডিসি শ্রেণীভুক্ত অন্তত অর্ধেক দেশের 'স্বল্পোন্নত' অবস্থান থেকে উত্তরণ ঘটে। এভাবে ধীরে ধীরে স্বল্পোন্নত শ্রেণীটিরই বিলুপ্তি চাই আমরা।
নিদ্বর্িধায় স্বীকার করছি, এটি খুব সহজ কাজ হবে না। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ ২৪টি দেশকে স্বল্পোন্নত হিসেবে শনাক্ত করে। চার দশক পর এসে দেখা যাচ্ছে, ধনী দেশগুলো আরও ধনী হলেও স্বল্পোন্নত শ্রেণীভুক্ত দেশের সংখ্যা পুরো দ্বিগুণ হয়েছে। অনুমিতভাবেই এর বেশিরভাগ দেশ আফ্রিকার। মহাদেশটির ৩৩টি, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৪টি এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের একটি দেশ রয়েছে এলডিসি তালিকায়।
কীভাবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অবস্থার উন্নয়ন করা যায়, নিশ্চিতভাবেই তা এলডিসি সম্মেলনের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এসব দেশের জনগণের বড় অংশ তরুণ। তাই তাদের জন্য চাকরির ক্ষেত্র ও অর্থনৈতিক নানা সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে বাস করে। অথচ বিশ্বের মোট রফতানির মাত্র এক শতাংশ করে থাকে এসব দেশ। কাগজে-কলমে কয়েকটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলা হলেও দেখা যায়, এ প্রবৃদ্ধি এসেছে তেল বা অন্যান্য খনিজদ্রব্য উত্তোলন, বন উজাড় কিংবা মৎস্যভাণ্ডারকে কাজে লাগিয়ে। এমনকি এসব প্রাকৃতিক পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে রফতানি করারও সামর্থ্য নেই তাদের। বলাবাহুল্য, এমন প্রবৃদ্ধি টেকসই নয়। এতে দরিদ্র ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর সামান্যই উপকার হয়েছে। উল্টো প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনের প্রতিযোগিতা এসব দেশে দুর্নীতি, দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, দরিদ্র দেশগুলোর 'স্বল্পোন্নত' অবস্থান থেকে উত্তরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। ধনী দেশগুলো এখনও অন্যায়ভাবে কৃষি খাতে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে দরিদ্র দেশের উৎপাদকরা টিকে থাকতে পারছে না। তুলা উৎপাদনের চিত্র দেখলে এ বৈষম্যের কথা সহজেই বোঝা যায়। চলমান সম্মেলনে বাণিজ্যনীতি এমনভাবে সংশোধন করা উচিত, যাতে ধনী দেশগুলোর জন্য বৈষম্য করে হলেও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিষয়ে জোরালো ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও শক্ত বার্তা দেওয়া প্রয়োজন এলডিসি সম্মেলন থেকে। দ্রুত এ বিষয়ে একটি ন্যায্য ও কঠোর চুক্তি না হলে বিশ্বের অতিদরিদ্র মানুষের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে। কিয়োটো প্রটোকলের প্রথম প্রতিশ্রুতির মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে। অথচ, আগের চেয়েও দ্রুতগতিতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হচ্ছে বায়ুমণ্ডলে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার এ ব্যর্থতা উন্নয়নশীল দেশগুলোর কৃষি উৎপাদনকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, যার স্বাভাবিক প্রভাব হিসেবে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে।
বিশ্বে এখন পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। গত দশকজুড়ে আফ্রিকা ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের পর এখন মধ্যপ্রাচ্যেও একটির পর একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন ধনী দেশগুলোর আন্তরিক সহায়তা। স্বল্পোন্নত দেশের অগ্রগতির পথের বাধাগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে তাদের। দূরদৃষ্টি ও সাহসের পরিচয় দিলে ইস্তাম্বুল থেকেই যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করতে পারেন নেতারা।
আমরা বৈষম্যমূলক একটি বিশ্ব ব্যবস্থায় বাস করি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার মতো উন্নত দেশের বাসিন্দাদের নতুন করে ভাবার সময় এসেছে, আমরা কি বৈষম্যের কারণে প্রান্তিক হয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াব? নাকি আগের মতোই তাদের দমিয়ে রাখতে থাকব? আমার মনে হয়, দেয়াল সরিয়ে ফেলার সময় এসেছে।
ব্যারি কোটস : নির্বাহী পরিচালক অক্সফাম, নিউজিল্যান্ড
No comments